ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব সরকারী হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ চালুর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৯ জুলাই ২০১৮

সব সরকারী হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ চালুর উদ্যোগ

নিখিল মানখিন ॥ দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোর জরুরী বিভাগকে আধুনিকায়ন (পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ) করতে উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ শুরু হয়ে গেছে। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যালে নতুন চারটি ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার, সার্জিক্যাল এইচডিইউ ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উন্নত যন্ত্রপাতি চালুকরণের উদ্বোধন করেন তিনি। বর্তমানে দেশের কোন সরকারী হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ জরুরী বিভাগ নেই। সব সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসক স্বল্পতা, যন্ত্রপাতির অভাব ও অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেক রোগীরা। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগগুলোর আধুনিকায়ন করতে চায় সরকার। প্রাথমিকভাবে জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর জরুরী বিভাগ আধুনিক চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও জরুরী বিভাগকে আধুনিকায়ন করা হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ‘জরুরী বিভাগ’ যে কোন হাসপাতালের একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এই বিভাগে আগত রোগীদের অধিকাংশের অবস্থা সংকটাপন্ন থাকে। তাদের জন্য প্রয়োজন পড়ে তাৎক্ষণিক কিছু চিকিৎসাসেবার। এই বিভাগের চিকিৎসাসেবায় ‘তাৎক্ষণিকতা’ ও ‘প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার’ মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হয়। দরকার পড়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর। দেশের সব সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, বিশেষায়িত ও জেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে হাজার হাজার রোগী জরুরী চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু নামে জরুরী বিভাগ হলেও তারা সেখানে জরুরী চিকিৎসাসেবা পান না বলে অভিযোগ। জীবন ঝুঁকিতে থাকা এসব রোগীকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালের বিভিন্ন ইনডোর ওয়ার্ডে। এতে রোগীর জরুরী চিকিৎসা কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যায় মৃত্যুঝুঁকিও। জরুরী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। এ জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে মানসম্পন্ন আধুনিকায়ন করা হয়। দেশে প্রতিদিন যত লোক হাসপাতালে আসার কিছু সময়ের মধ্যে মারা যান, এর বড় অংশকেই বাঁচানো সম্ভব হতো যদি উপযুক্ত জরুরী স্বাস্থ্যসেবা কার্যকর থাকত। অথচ দেশের সব হাসপাতালের জরুরী বিভাগই এক রকম নামসর্বস্ব। এগুলোয় পূর্ণাঙ্গ জরুরী চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেই। কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও দায়িত্ব পালন করেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, জরুরী চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবলের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগসহ কিছু হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা মিলছে না। তাই অন্যান্য জরুরী রোগীকে সামান্য কিছু চিকিৎসা দিয়ে, আবার কখনো কখনো না দিয়েই গাইনি, মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক, হৃদরোগ বিভাগে রেফার্ড করা হয়। এতে জরুরী রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার পরও সঠিক চিকিৎসা পেতে আরও ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। অথচ মানুষের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় এটা। এই সংকটাপন্ন সময়ে কোন জরুরী রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হলে তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় মরণাপন্ন রোগী জরুরী বিভাগ থেকে ইনডোরে নেয়ার পথেই মারা যেতে পারেন। ইমার্জেন্সি চিকিৎসাসেবা প্রদানের বিষয়ে সরকারের একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালগুলোর জরুরী বিভাগকে আধুনিক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠকে প্রাপ্ত পরামর্শসমূহ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গৃহীত হওয়ার পর বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। জরুরী বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কারা দায়িত্ব পালন করবেন; আইসিইউ, সিসিইউসহ অন্যান্য শয্যা কত সংখ্যক রাখতে হবে; কী ধরনের ফ্যাসিলিটি থাকতে হবে; কী কী যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবেÑ এ সংক্রান্ত একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। দেশের সব সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ রয়েছে। আমরা সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড করতে চেয়েছি। এতে বিভিন্ন ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। তবে ক্যাজুয়ালটি, গাইনি, জেনারেল সার্জারিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া গেলেও এ্যানেস্থেথেসিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া কঠিন। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ আধুনিক চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরী বিভাগকেও আধুনিকায়ন করা হবে। এতে রোগীরা খুব সহজেই সঠিক চিকিৎসাসেবা পাবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৬২১ সরকারী হাসপাতাল রয়েছে। প্রতিটিতেই রয়েছে জরুরী বিভাগ। এতে ক্যাজুয়ালটির বাইরে অন্যান্য জরুরী রোগীকে তেমন একটা চিকিৎসাসেবা দেয়া হয় না। আর ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগসহ কিছু হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তদের জরুরী চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা মিলছে না। ফলে জরুরী বিভাগে আগত অনেক রোগী হয়রানি হওয়ার পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
×