ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর বাজারে ডিম, পেঁয়াজ ও মুরগির দাম চড়া

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২৮ জুলাই ২০১৮

  রাজধানীর বাজারে ডিম, পেঁয়াজ ও মুরগির দাম চড়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিত্যপণ্যের বাজারে ডিম পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম চড়া। শ্রাবণের বর্ষণে খেত-খামার তলিয়ে যাওয়ায় বাড়তির দিকে সবজির দাম। এছাড়া চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে সব ধরনের মসলার দাম একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার এবং মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। খুচরা পর্যায়ে বাজার ও স্থানভেদে প্রতিহালী ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ টাকা, সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৪৫-১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ে। ডিমের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। আমিষের প্রধান উৎস ডিম খাওয়া হয় নগরীর প্রতিটি পরিবারে। ঢাকায় এমনও পরিবার রয়েছে যারা সকালের নাস্তা ডিম দিয়ে সারেন। এই বাস্তবতায় ডিমের দাম বাড়ায় ভোক্তাদের বাজার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান ন্যায্য দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। বছরের শুরু থেকে এতদিন লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি করা হচ্ছিল। খামারিরা বলছে, একটি ডিম উৎপাদন করতে প্রায় সাড়ে ৬ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। সেই ডিম লোকসান দিয়ে ৪ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়ে ছোট ছোট খামারিরা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই বাস্তবতায় ডিম ও মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। নীতিগত সহায়তা দিয়ে শীঘ্রই খামারগুলো চালু করা না হলে ডিম ও মুরগির দাম নিয়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ভোক্তাদের অসন্তুষ্টি আরও বাড়তে পারে। কাপ্তান বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জনকণ্ঠকে বলেন, মুরগির খামারগুলো ঢাকার আশপাশ বিশেষ করে গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, ময়মনসিংহে করা হয়েছে। পোল্ট্রি ফিড ও ওষুধের দাম বাড়াসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ছোট ছোট খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পাইকারি পর্যায়ে ডিম ও মুরগি সরবরাহ কমে গেছে। ফলে ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে। কাওরান বাজারে ডিম কিনছিলেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, একমাস আগে প্রতিডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। এখন সেই ডিম কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ ডিমের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সাধারণ ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত ডিমের দাম কমানোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, ডিমের পাশাপাশি কোরবানি সামনে রেখে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। এছাড়া জাত মানভেদে প্রতিকেজি আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে যাচ্ছে। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি না কমে বরং বেড়েছে। হিলি বন্দর দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পেঁয়াজ দেশে আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারতের বাজারেও এবার পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানি সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যারা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা গেলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। শ্রাবণের বৃষ্টিতে বাড়তির দিকে সবজির দাম। কাঁচা মরিচ, টমেটো, শসা, বেগুন, ধুন্দলসহ সব ধরনের শাক-সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতিকেজি সবজি গড়ে ৪০-৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি কোরবানি সামনে রেখে বাজারে আদা ও রসুন জাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৮০ টাকায়। প্রতিকেজি আদা মানভেদে ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। এছাড়া প্রতিকেজি জিরা ৩৮০-৪৫০, লবঙ্গ ১২০০-১৫০০, এলাচ ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো উন্নতমানের সরু চাল ৬০-৬৮, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৫ এবং মোটা জাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আটা মানভেদে ২৬-৩৫, মসুর ডাল ৫৫-১১০, সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ৮৫-৮৮, চিনি ৫৫-৫৮, লবণ ২৬-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে সব ধরনের মাছের দাম চড়া। ভরা মৌসুমে সাগর ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলে ও ইলিশ বিক্রেতারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এখন তাদের ব্যবসা করার সময়, অথচ জালে মাছ নেই। ভোক্তারা বাজারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। গতবছর এই দিনে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ মাছের সরবরাহ ছিল। দামও ছিল নাগালের মধ্যে। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বেড়ে যাচ্ছে ইলিশ মাছের দাম। ৫০০-৬০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়। এছাড়া জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি চিংড়ি ৫০০-১২০০ টাকা, রুই ৩৫০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজার ভেদে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৮০-৫০০ এবং খাসি ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×