ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ

ভরা পূর্ণিমায় দীর্ঘ আঁধারে ঢাকা ছিল পৃথিবী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৮ জুলাই ২০১৮

  ভরা পূর্ণিমায় দীর্ঘ আঁধারে ঢাকা ছিল পৃথিবী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভরা পূর্ণিমায় দীর্ঘ সময় ধরে অন্ধকারে ছিল পৃথিবী। শুক্রবার রাত এগোরোটা ১৩ মিনিটের পর থেকেই আঁধারে ঢেকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত দেড়টায় তা সম্পূর্ণ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। অন্ধকার থেকে মুক্ত হতে শনিবার সকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বিশ্ববাসীকে। অবশ্য ততক্ষণের সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। শুক্রবার রাতে সংগঠিত শতাব্দীর দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। বিজ্ঞানীরা একে ব্লাড মুন হিসেবে নাম দিয়েছেন। রাত এগারোটা ১৪ মিনিটে পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যেতে থাকে চাঁদের আলো। এক পর্যায়ে তা সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢেকে যায়। সকাল সাড়ে পাঁচটার প্রায় ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট পর পৃথিবীর ছায়া থেকে মুক্ত হয় চাঁদ। বিজ্ঞানীরা বলছেন এত অধিক সময় ধরে চন্দ্রগ্রহণ আগে দেখা যায়নি। এত সময় ধরে চন্দ্রগ্রহণ আবার দেখা যাবে আজ থেকে ১০৫ বছর পর ২১২৩ সালের ১৯ জুন। অবশ্য তখন এই প্রজন্মের কেউ তখন বেঁচে থাকবে না। তখনকার নতুন প্রজন্মই পরবর্তী দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ অবলোকন করতে পারবে। এ দিকে বর্তমান প্রজন্মের জন্য এই বিরল দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য বয়ে আনলেও আকাশ মেঘে ঢাকা থাকায় ভালভাবে দেশের কেউ এটি উপলব্ধি করতে পারেনি। যদিও বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দৃশ্য দেখার আয়োজন করে। রাত দশটার পর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিজ্ঞান জাদুঘরে অনেকেই হাজির হতে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয় শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা থেকে উন্মুক্ত ছিল জাদুঘর। চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে দেখানো হয়েছে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনার। এ ছাড়াও ছিল গ্রহণ দেখারও আয়োজন। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের জন্য শুক্রবার রাত এগারোটা ১৩ মিনিটের পর থেকে পৃথিবীটা অন্ধকারে ঢেকে ছিল সাড়ে ৫ ঘণ্টা। সন্ধ্যায় আকাশে থালার মতো চাঁদ ওঠার পরেই রাতে তাতে ছেদ পড়তে শুরু করে। আস্তে আস্তে আঁধারে ঢেকে যেতে থাকে। এক পর্যায় তা সম্পূর্ণ আঁধারে ঢেকে যায়। অন্ধকার নেমে আসে আকাশ জুড়ে। রাতে আকাশ প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সম্পূর্ণ আঁধারে ঢেকে থাকার পর চাঁদ পৃথিবীর ছায়া থেকে আবার বের হতে শুরু করে। শনিবার সকাল সাড়ে পাঁচটায় চাঁদ সম্পূর্ণ রূপে পৃথিবীর ছায়ামুক্ত হয়। তবে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও মহাজাগতিক এ দৃশ্যটি উৎসাহ, উদ্দীপনার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করে অনেকেই। তবে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও এ দৃশ্য উপভোগ করার জন্য আগ্রহের কমতি ছিল না কারও মধ্যে। বাসাবাড়ি ছাদ, খেলার মাঠ ও খোলা জায়গায় জড়ো হয়ে অনেককে দেখা যায় চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে। মানুষকে একটু ভালভাবে সুযোগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞান সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের। গ্রহণ চলাকালে চাঁদকে অনেকটা তামাটে বা লালচে চাকতির মতো মনে হয়। চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখা ক্ষতিকর না হওয়ায় অনেকে খালি চোখেই উপভোগের চেষ্টা করে। অনেকে বাইনোকুলার, টেলিস্কোপ ব্যবহার করেও পর্যবেক্ষণ করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে চাঁদ সূর্য পৃথিবী যখন একই সরল রেখায় চলে আসে তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে চাঁদকে আংশিক অথবা পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। তখন সে ঘটনাকে বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ। চাঁদ রাতের বেলায় দেখা যাওয়ায় পৃথিবীর যে অংশে রাত শুধু সে অংশ থেকে এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন আজ থেকে ঠিক ১০৫ বছর পর ২১২৩ সালের ১৯ জুন আবার এ ধরনের দৃশ্য অবলোকন করা যাবে। নাসার তথ্য অনুযায়ী, সেই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ৬ সেকেন্ড ধরে। তার মানে, এবারের চেয়ে সেই পূর্ণগ্রাসের সময় আরও ৩ মিনিট ৬ সেকেন্ড বেশি হবে। এর আগে, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ধরে চলেছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তার ১১ বছর পর, ২০১১ সালের ১৫ জুন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে। এবার সব ‘রেকর্ড’ ভেঙ্গে চন্দ্রগ্রহণ হয় সাড়ে ৫ ঘণ্টার।
×