ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একদিন পরেই ভোট আজ রাতেই শেষ নির্বাচনী প্রচার

প্রস্তুত তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ জুলাই ২০১৮

প্রস্তুত তিন সিটি

শাহীন রহমান ॥ আর একদিন পরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই তিন সিটিতে নির্বাচনী প্রচর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আজ রাতেই। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অঙ্গন ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া এই নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন হলেও জনগণের দৃষ্টি এখন এই তিন সিটি নির্বাচন ঘিরে। চায়ের কাপে, আড্ডায় এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে তিন সিটি নির্বাচন। দেশবাসী এখন অপেক্ষায় রয়েছে তিন সিটি নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। যার ফয়সালা হবে আগামী ৩০ জুলাই সোমবার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর কয়েক মাস পরেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। সিটি নির্বাচন আঞ্চলিক নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনের জাতীয় গুরুত্ব রয়েছে জনগণের কাছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই তিন সিটি নির্বাচনও রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে উল্লেখ করছেন অনেকেই। এছাড়া ইসির জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে এটা শেষ অগ্নিপরীক্ষা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে আগামী জাতীয় নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে। এদিকে তিন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় প্রচার শেষ হচ্ছে আজ রাতেই। আগামীকাল রবিবার থেকেই গোটা নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে নির্বাচনী এলাকা। কমিশনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনী সরঞ্জাম ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি নির্বাচনী এলাকায় পাঠানো শুরু হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করলেও ইসির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করে র‌্যাব পুশি বিডিআরের সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাহী এবং বিচারিক হাকিম নিয়োজিত করা হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে। ইতোমধ্যে বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রার্থী এবং ভোটারদের দৃষ্টি এখন নির্বাচনকে ঘিরে। কে হচ্ছে তিন সিটির নগরপিতা এটা নিয়ে চলছে সব জল্পনা কল্পনা। আগামী ৩০ জুলাই সোমবার অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের লেবেল প্লেযিং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বারবারই। তারা বলছেন প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন যোগসাজশে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে নির্বাচনে জিততে পারবে না দেখেই বিএনপি নির্বাচন নিয়ে অবান্তর কথাবার্তা বলে চলেছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছে। গত ২৩ জুলাই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে অভিযোগ দাখিল করে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে তিন সিটি নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ ও ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারে বাধা দেয়া এবং তিন সিটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবিও দলটির পক্ষ থেকে তোলা হয়। অপরদিকে ২৫ জুলাই তিন সিটির নির্বাচন বিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে দলের প্রধান এইচটি ইমান সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় বিশেষ করে একটি দল কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় এমন বক্তব্য দেন। নির্বাচনকে ছোট করলে আমরা ছোট হই, জাতি ছোট হয়। তিনি বলেন তিন সিটি নির্বাচন খুলনা গাজীপুরের চেয়ে আরও ভাল নির্বাচন হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দলের পক্ষ থেকে কমিশনকেও সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দেন তিনি। এদিনে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গ উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারী দলের অনিয়ম ও আচরণ লঙ্ঘনের অভিযোগ জানালে কমিশন বলে আমরা চেষ্টা করছি। চেষ্টা করা তো তাদের দায়িত্ব নয়। তাদের দায়িত্ব হলো নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পদক্ষেপ নেয়া। কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার নির্বাচনের নামে জনগণকে তামাশা দেখাচ্ছে। আসলে এখন এটি আর সিটি নির্বাচন নয়, তামাশা তামাশা আর তামাশায় পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীর এজেন্টদের গ্রেফতার, হামলা নির্যাতন ও নারীদের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে বলে অভিযোগ করেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার শঙ্কা থেকে বিএনপি আগাম নানা অভিযোগ তুলছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বিএনপির এমন বক্তব্যের জবাবে বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে ফখরুল কী বোঝাতে চান? ওবায়দুল কাদের কি কোন সিটি নির্বাচনের সময় কোন সিটির আশপাশেও গেছেন? ফখরুল ইসলাম সাহেব তো যেতে পারে। তাহলে এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায় থাকে? এক পার্টির সাধারণ সম্পাদক যেতে পারবে, আরেক পার্টির সাধারণ সম্পাদক যেতে পারবে না। তাহলে কি হেরে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন? সে জন্যই আগাম কিছু অভিযোগ রেখে যাচ্ছেন? যাতে হেরে গেলে এগুলোকে গ্রাউন্ড হিসেবে তুলে ধরতে পারেন উল্লেখ করেন। এদিকে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থী হয়ে যারা প্রচারে অংশ নিয়েছেন তাদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছে। আজ থেকে তারা আর কোন প্রার্থীর পক্ষ হয়ে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, শুক্রবার রাত ১২টার মধ্যে বহিরাগতদের এ তিন সিটির নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও কাউকে পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, তিন সিটির নির্বাচনী এলাকায় শনিবার দিনগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং রবিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ্যাম্বুলেন্স, ডাক বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশেনের ময়লাবাহী গাড়িগুলো ছাড়া অন্য সব যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা জানান, এসব নির্দেশনার লঙ্ঘন হলে ৬ মাস থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদ-ের বিধান রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, নির্বাহী-বিচারিক হাকিমসহ মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনকালীন দায়িত্বে থাকবেন। সাধারণ কেন্দ্রে ২২ এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। রাজশাহী সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ ও মহিলা ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩। ভোট কেন্দ্র ১৩৮টি ও ভোট কক্ষ ১ হাজার ২৬টি। এ সিটিতে মোট মেয়র প্রার্থী ৫। বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ ও মহিলা ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০। ভোট কেন্দ্র ১২৩টি ও ভোট কক্ষ ৭৫০টি। এ সিটিতে মোট মেয়র প্রার্থী ৬। সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ ও মহিলা ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮। ভোট কেন্দ্র ১৩৪টি ও ভোট কক্ষ ৯২৬টি। এ সিটিতে মোট মেয়র প্রার্থী ৭।
×