ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৮ জুলাই ২০১৮

  মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক পদ ও আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে মন্ত্রী, এমপি, সরকারী আমলা ও ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করত ওরা। আর এজন্য তারা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের নাম ব্যবহার করত। এমনই একটি চক্রের দুই হোতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোহাম্মদ আলী (৪০) ও তার বোন নাদিয়া সুলতানা (২৭)। শুক্রবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ) আব্দুল বাতেন জানান, এমপি, মন্ত্রী, বিভিন্ন পদের নেতা ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ড. আবদুস সোবহান গোলাপের নাম করে চাঁদা দাবি করত তারা। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজির সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (পূর্ব-ডিবি)। গ্রেফতারকৃতরা সম্পর্কে ভাই-বোন। তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড ও দুটি বিকাশ নম্বর উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছে। মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেবে এমন কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের কণ্ঠস্বর নকল করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতার কাছে চাঁদা দাবি করত। এছাড়া চিকিৎসার জন্য অথবা ছেলের স্কুলের খরচের নাম করেও অনেকের কাছে টাকা চাইত এই প্রতারকরা। আব্দুল বাতেন জানান, মূলত তারা রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তি, যেমন- এমপি, মন্ত্রী, দলের বড় পদধারী বিভিন্ন নেতা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করত। এটি একটি চক্র। আমরা ধারণা করছি তাদের আরও সদস্য থাকতে পারে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিদের সম্পর্কে জানা গেলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, বেশ কিছুদিন আগেও আমরা এমন অভিযোগ পেয়েছিলাম। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর আরেক বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল আলম হানিফও এরকম একটি অভিযোগ করেছিলেন। তার নাম করেও অনেকের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্রেফতারকৃত এই প্রতারক মোহাম্মদ আলীই সেই প্রতারক কিনা সেটি তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত জানা যাবে। আব্দুল বাতেন জানান, গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ আলী জানায়, গোলাপের নাম ব্যবহার করে টাকা চাইত। সে কখনও বলত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সুযোগ করে দেয়া হবে। কখনও বলত কাছের কেউ অসুস্থ হয়েছে, তাদের হেল্প করার জন্য টাকার দরকার। আবার কখনও বলত, আমার একজন কর্মী গুরুতর অসুস্থ, কিছু টাকার দরকার। আর সেই টাকা তার বোন নাদিয়া বিকাশের মাধ্যমে তুলত। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা চেয়েছে। তবে সবাই দেননি। যাদের কাছে টাকা চেয়েছে তারা হলেন রেডক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, নিজাম হাজারী এমপি, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন নাহার লায়লা, সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান, গেন্ডারিয়ার আওয়ামী লীগ নেতাসহ আরও অনেকে। হয়ত আরও আছে যারা এখনও অভিযোগ করেননি। আজকের পর হয়ত অনেকেই অভিযোগ করবেন। এরপর আরও বিস্তারিত জানা যাবে। অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে মোহাম্মদ আলীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলাম। আমরা দেখেছি তার ফেসবুক প্রোফাইলে গোলাপের ছবি ও নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও তার হোয়াটসএ্যাপ, ইমো, ভাইবার সব আইডিতে একই ছবি দেয়া। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ আলী ও নাদিয়ার কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার জানান, তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের কোন পেশাও নেই। এ বিষয়ে আব্দুস সোবহান গোলাপ জানান, এ ধরনের একটি চক্র আমার নাম ব্যবহার করে উচ্চপর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজি করেছে। আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদকের পদ দেয়া কথা বলে বিকাশসহ বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। বিষয়টি আমার নজরে আসায় আমি এমন কিছু মোবাইল নম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিয়েছি। নম্বর ট্র্যাকিং করে এদেরকে ধরা হয়েছে।
×