ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণ সন্ধ্যায় ছায়ানটে সুফিয়া কামালকে নিবেদিত বর্ষাবন্দনা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৮ জুলাই ২০১৮

 শ্রাবণ সন্ধ্যায় ছায়ানটে সুফিয়া কামালকে নিবেদিত বর্ষাবন্দনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেটে গেছে তীব্র খরতাপ ছড়ানো বৈরী আবহাওয়া। বর্ষা ফিরেছে তার আপন রূপে। দিনভর মেঘের আনাগোনার সঙ্গে ঝরছে বারিধারা। নাগরিক চৈতন্যে বইছে প্রশান্তির পরশ। আর এমন স্বস্তিকর পরিবেশে বর্ষাবন্দনার আয়োজনটি শ্রোতা-দর্শকের কাছে হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী। গানের সুরে, কবিতার শব্দমালায় কিংবা নৃত্যের নান্দনিকতায় অভিবাদন জানানো হলো বর্ষাকে। শুক্রবার শ্রাবণ সন্ধ্যায় মুখরিত হলো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অতুলপ্রসাদ সেনের সৃষ্টিসম্ভারে সাজানো বর্ষার অনুষ্ঠানকে উৎসর্গ করা হয় জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালকে। সুফিয়া কামাল স্মারক ছায়ানটের বর্ষার অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় সম্মেলক সুরের আশ্রয়ে। সম্মেলক গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় বৃন্দ নৃত্য। প্রবল ঘন মেঘ আজি শীর্ষক গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তি মেলে ধরা নাচ। এরপর সুফিয়া কামাল ও বর্ষাকে নিবেশিত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত। কথা শেষে সুরকে সঙ্গী করে মঞ্চে আসেন এটিএম জাহাঙ্গীর। গেয়ে শোনান ‘তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি’। শ্রোতাকে মোহাবিষ্ট করে ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান কণ্ঠে তুলে নেন ‘অনেক কথা বলেছিলাম’ শিরোনামের সঙ্গীত। বাদল দিনের রাতে ঝুমা খন্দকারের গানটি শ্রোতার ছড়ায় শ্রাবণের আনন্দময়তা। মায়াবী কণ্ঠে গীত হয়Ñ শ্রাবণ ঝুলাতে বাদল রাতে/তোরা আয় গো, কে ঝুলিভি আয়/প্রেমগীত ছন্দে দুলিবি আনন্দে...। নাঈমা ইসলাম নাজ গেয়ে শোনান ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’। সেমন্তী মঞ্জুরী পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘বধূয়া নিদ নাহি আঁখিপাতে’। সুমন মজুমদার শুনিয়েছেন ‘মেঘে মেয়ে অন্ধ অসীম আকাশ’ শীর্ষক সঙ্গীত। সেঁজুতি বড়ুয়ার কণ্ঠে গীত হয় ‘কে গো গাহিলে পথে’। মঈদুল ইসলাম গেয়েছেন ‘এলো শ্যামল কিশোর’। লতিফুনস জুলিরও গানের শিরোনাম ছিল ‘কেন করুণ সুরে হৃদয়পুরে বাজি’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন খায়রুল আনাম শাকিল। একক গানের ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয়েছে সম্মেলক সঙ্গীত ও সমবেত নৃত্য-গীত এবং কবিতা আবৃত্তি। ‘ভবনে আসিল অতিথি সুদূর’ গানের সঙ্গে বৃন্দ নৃত্য পরিবেশন করেছে বড়দের দল। ‘হারে রে রে রে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয়েছে ছোটদের নাচ। অনেকগুলো কচিকণ্ঠ এক সুরে গেয়েছে ‘বাদল-বাউল বাজায় রে একতারা’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘নববেশ’ কবিতা আবৃত্তি করেছেন আব্দুস সবুর খান চৌধুরী। আর মেঘদূত কবিতার অংশবিশেষ পাঠ করেছেন মাহমুদা আখতার। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসিÑ এই সুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। গ্যালারি কায়ার চৌদ্দতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রদর্শনী ॥ যানজটের এই শহরে উত্তরায় প্রতিষ্ঠিত গ্যালারিটি কি শিল্পানুরাগীদের নজর কাড়বে? তাই প্রদর্শনালয়টি কতটা সফল হবে শুরুতে সেটি নিয়েই সন্দেহ ছিল। তবে শিল্পরসিকদের ভালবাসায় পথচলার চৌদ্দ বছরে পা রাখল গ্যালারি কায়া। ২০০৪ সালের ২৮ মে থেকে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে দেশ ও দেশের বাইরের বরেণ্য শিল্পীদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে যাত্রা করে গ্যালারিটি। নিরবচ্ছিন্ন রয়েছে সেই পথচলা। তাই প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর উদ্যাপনে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘ফোরটিনথ এ্যানিভার্সারি এক্সিবিশন’ শীর্ষক দলীয় প্রদর্শনী। শিল্পী-শিল্প সংগ্রাহক গ্যালারিটির শুভ্যানুধায়ীরা প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন। তেলরং, এ্যাক্রেলিক, চারকোল, ইনক, পেন, ইন্ডিজেনিয়াস পিগমেন্ট, এচিং এ্যান্ড এ্যাকুয়াটিন্ট, লিথোগ্রাফি, অফসেট লিথোগ্রাফ, সেরিগ্রাফ, চিনকোলে, রিলিফ প্রসেস, উড কাট, ওয়াটার কালার ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা দুই দেশের আধুনিক ও সমসাময়িক ৩৮ জন শিল্পীর ৬৫টি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে রয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের ‘মা’ চিত্রকর্মটি। প্রদর্শনীর আরও স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের প্রয়াত শিল্পী নিতুন কু-ু, বিজন চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী ও হামিদুর রহমানের আঁকা নানা ছবি। এতে আরও স্থান পেয়েছে ১৯৫৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আঁকা রফিকুন নবী, হাশেম খান, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, অজিত শীল, আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, গৌতম চক্রবর্তী, জামাল আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, নাজলী নায়লা মনসুর, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, চন্দ্রশেখর দে, অতীন বসাক, অতুল দোদিয়া, শম্ভু আচার্য এবং রতন মজুমদারের চিত্রকর্ম। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে গ্যালারিটি। ১২ আগস্ট শেষ হবে ১৭ দিনের এই প্রদর্শনী। আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘জানাশোনা অচেনা কথা’ ॥ রফিকুল ইসলাম আয়োজনের শুরুতেই আবৃত্তি করলেন কুসুম কুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’। ভরাট কণ্ঠে তিনি আবৃত্তি করলেন ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’। পুরো আয়োজনটি জুড়েই ছিল শুধুই কথা। তবে সে কথা ছন্দে ছন্দে। বাতিঘরের র‌্যাডক্লিফ লাইন নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ ঢাকার মঞ্চে যুুক্ত হলো আরও একটি নতুন নাটক। নাট্যদল বাতিঘর মঞ্চে এনেছে তাদের অষ্টম প্রযোজনা ‘র‌্যাডক্লিফ লাইন’। শুক্রবার সন্ধ্যায়ং শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মুক্তনীল। ছুটির সন্ধ্যায় বাউল উৎসব ॥ শুক্রবারের ছুটির বিকেলে শিল্পকলা একাডেমি থেকে ভেসে এলো বাউল গানের সুর। সেখানে চলছে তিনদিনের ‘বাংলাদেশ-ভারত বাউলসঙ্গীত উৎসব’। লালন বিশ্বসংঘ ও শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগ এবং ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন শুরুতেই ছিল শিল্পকলা একাডেমির বাউলদলের পরিবেশনা। তারা গেয়ে শোনানা ‘অখ- ম-লাকারং ব্যাপ্ত ইয়ানং চরাচর’ ও ‘যে খোঁজে মানুষে খোদা সেই তো বাউল’। এর পর ছিল ‘সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বাউলদর্শনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাউল গবেষক আবদেল মাননান। অধ্যাপক ড. সঞ্জয় অধিকারীর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন ইউনেস্কো বাংলাদেশ কমিশনের কার্যক্রম কর্মকর্তা অধ্যাপক মোঃ তাজউদ্দিন ও কৃষিবিদ ড. কাজী আফজাল হোসেন।
×