ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি যে কোন সময় আলোচনায় বসতে আগ্রহী

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৮ জুলাই ২০১৮

 বিএনপি যে কোন সময় আলোচনায় বসতে আগ্রহী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বিএনপি সব সময় আলোচনায় আগ্রহী। শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই বলে এখন আবার বলছেন আলোচনা হতে পারে। কাদের সাহেবের সুবিধা হলো উনি যখন যা খুশি বলতে পারেন। তবে আমরা আবারও আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছি। গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনা প্রয়োজন। যে কোন স্থানে, যে কোন সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি আলেচনায় বসতে প্রস্তুত আছে। কোথায় বসবেন, কী করবেন আমাদের জানান। ‘বসে নয়, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে ফোন যোগাযোগের মাধ্যমে’ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফখরুল বলেন, ভাল তো, আমরা ম্যাসেজ পেলাম, দেখা যাক। জামায়াতকে ছাড়া সিলেটে বিএনপি জিততে পারবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতের সমর্থন ছাড়াই বিএনপি প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি একাই অংশগ্রহণ করেছিল এবং একাই সরকার গঠন করেছিল। সুতরাং বিএনপির জেতার জন্য কারোর ওপর নির্ভর করতে হয় না। তিনি বলেন, আমরা জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেছি বৃহত্তর স্বার্থে। এ সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র মুক্ত করতে। সিলেটে জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা আশা করে বিএনপি তাদের সমর্থন দেবে এ বিষয়ে কি বলবেন? জবাবে ফখরুল বলেন, তারা আশা তো করতেই পারে। আমরা তো কারোর আশায় বাধা দিচ্ছি না। ধারাবাহিক ব্যর্থতার অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতেই স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচন নিয়ে সরকারী দলের অনিয়ম ও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানালে কমিশন বলে আমরা চেষ্টা করছি। চেষ্টা করা তো তাদের দায়িত্ব নয়। তাদের দায়িত্ব হলো নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পদক্ষেপ নেয়া। তিনি বলেন, যের্ াচন কমিশনের কথা পুও প্রশাসন শুনে না, তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কখনও অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছুদিন আগে এক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, না পারলে তারা পদত্যাগ করবেন। আমি আবারও তাদের বলব, আপনারা দয়া করে পদত্যাগ করুন। জাতি আপনাদের আর দেখতে চায় না। আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকার জনগণকে বায়োস্কোপ ও তামাশা দেখাচ্ছে। সিটি নির্বাচন তামাশায় পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীর এজেন্টদের গ্রেফতার ও হামলা-নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রশ্ন আসতে পারে এত কিছু জানার পরও কেন নির্বাচনে যাচ্ছি? এর জবাব হলো, আমরা জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকতে চাই বলেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। কারণ, এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। এ নির্বাচনই প্রমাণ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ফখরুল অভিযোগ করেন, বরিশালে সরকারী দল সিটি কর্পোরেশনের বাইরে থেকে লোকজন এনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মহড়া দিচ্ছে। অথচ আমাদের প্রার্থীর সমর্থকদের মামলা, হামলা দিয়ে নির্যাতন করছে। সরকারী দল ও প্রশাসনের আচরণে বরিশাল নগরী এখন ভোটের উৎসবের নগরী নয়, ত্রাসের নগরীতে পরিণত হয়েছে। যদিও হাইকোর্ট বলেছেন, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কাউকে হয়রানি না করতে। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের এ নির্দেশ মানছে না তারা। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। দুদক সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিনÑ রিজভী ॥ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ। খালেদা জিয়াকে ছাড়া আলোচনা ও নির্বাচন হবে নাÑ নজরুল ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ছাড়া আলোচনা ও নির্বাচন কিছুই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে সরকারকে উদ্দেশ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দ- মওকুফের কথা বলছি না। আপনারা আদালতের ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাকে আটক রেখেছেন। আমরা চাই তিনি জামিনে মুক্ত হোক, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা তার নেতৃত্বে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আর তিনি মুক্ত হলে তার নেতৃত্বেই আমরা নির্বাচনে যাব। নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। খালেদা জিয়াকে আটক রেখে কারও সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তার প্রাণনাশ করতে চায়। এভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এম ওবায়েদুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
×