ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিংহনদী দখল করে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৮ জুলাই ২০১৮

সিংহনদী দখল করে শতাধিক  অবৈধ স্থাপনা

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ বুড়িগঙ্গা দখলের পর এবার ভূমিদস্যুরা দখল করতে শুরু করেছে কেরানীগঞ্জের সিংহদড়ী নদী, যার ডাকনাম সিংহনদী। অবৈধ দখলের ফলে দিনে দিনে সিংহভাগ মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। গত তিন দশকে নদীর বিশ কিলোমিটার জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক ভবন ও মার্কেট। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে সেচ ও নৌ চলাচল বিঘিœত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,নদী ক্রমাগত ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। ভূমিদস্যুরা দুই হাত ভরে কামিয়ে নিচ্ছে কালোটাকা। এই অপকর্মে জড়িত উপজেলা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ভূমিদস্যুরা ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে, কেউবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেখিয়ে, আবার কেউ বা কোন কাগজপত্র না দেখিয়েই দখল করে নিচ্ছে সিংহদড়ী নদী। অথচ আগেকার দিনে লোকজন এই নদী দিয়ে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বর নদীতে যাতায়াত করত। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা রাজেন্দ্রপুর,বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনা এমনকি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই নদী ব্যবহার করা হতো। সিংহদড়ী নদীটি ধলেশ্বরীর আকশাইলের রামেরকান্দা,অগ্রখোলা, শিকারটোলা ও খাড়াকান্দি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাস্তা ইউনিয়নের রাজাবাড়ী হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। অপরদিকে নদীটি রারমকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেলনা,আকশাইল ও কলাতিয়া হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। এক সময় শত শত মণ ধান, পাট ও মালবাহী নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত। এ ব্যাপারে বাস্তা ইনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী মোঃ আসকর আলী বলেন, ছোটবেলায় সিংহদড়ী নদীতে অনেক ¯্রােত ছিল। ছোটবেলায় এই নদীতে আমরা সাঁতার কেটেছি, নৌকাবাইচ খেলেছি। কিন্তু বর্তমানে এই নদীর অবস্থা খুবই খারাপ। অবৈধ দখল ও ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন.বিগত পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তখন ওই ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুরা উপজেলার কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহায়তায় আর.এস,সি.এস ও এস.এ নিজেদের মর্জি মতো পরবির্তন করে জমিগুলো দখল করে নিয়েছে। অনতিবিলম্বে সিংহদড়ী নদীর বজ্য-আবর্জনা অপসারণ, খনন ও সংস্কার না করলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। আব্দুল্লাহপুর এলাকার কৃষক সালাউদ্দিন জানায়,আগে এই নদীতে অনেক কাটাল (¯্রােত) ছিল, আর এখন পানি প্রবাহই বন্দ হয়ে গেছে। ফলে ফসলি জমিতে সেচের পানি দেয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, মালিভিটা এলাকায় মাঝ নদীতে বালি ভরাট করে নদীপথে যাতায়াত বন্দ করে দিয়েছে। নৌকার মাঝি জামালউদ্দিন জানায় নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে নৌকা চালাতে পারছি না,তাছাড়া মাছ ধরার জাল দিয়েও নৌকা চলাচলের পথ বন্দ করে দিয়েছে। ফলে মাঝিগিরি বাদ দিয়ে দিনমজুরের কাজ করছি। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহে এলিদ মাইনুল আমিন বলেন, কেরানীগঞ্জে জায়গাজমির বর্তমান বাজারমূল্য অনেক বেশি হওয়াতে কতিপয় ব্যক্তি সিংহদড়ী নদীসহ, বুড়িগঙ্গার তীর ও শুভাঢ্যার খাল দখল করে রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ও শুভাঢ্যার খালে উচ্ছেদ অভিযান ও ময়লা-আবর্জনা সম্প্রসারনের কাজ শুরু করেছি। এরপর সিংহদড়ী নদীর উচ্ছেদ ও ময়লা সম্প্রসারণ ও খনন কাজ শুরু করব। তিনি জানান, কেরানীগঞ্জের সব খাল ও নদীর তালিকা তৈরি কর্ াহয়েছে,পর্যায়ক্রমে সবকটিতেই একই ভাবে কাজ করে যাব।
×