স্টাফ রিপোর্টার ॥ নওগাঁ শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ছোট যমুনার শাখা নদীটি ভরাট হতে চলেছে। নদীতে এখন মাছ আর পাওয়াই যায় না। অনেকেই অবৈধভাবে বাড়ি বানাচ্ছে নদীর ভেতরে। ড্রেজিং না করায় নদীর নাব্যতা সঙ্কটও প্রকট। ফাল্গন-চৈত্র মাসেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় এক সময়ের স্রোতস্বিনী এই নদীটি। অথচ নদীটি রক্ষায় দেখার কেউ নাই।
পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ও জয়পুরহাট সুগার মিলের বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। স্থানীয় খাবার হোটেলগুলোর কাঁচা তরকারির উচ্ছিষ্টসহ যাবতীয় আবর্জনাই ফেলা হয় এই নদীতে। এসব কারণে বাড়ছে দূষণ। জানা গেছে, এক সময় এই নদীতে চলত বড়-বড় নৌকা। কয়েক শ’ জেলের জীবিকার ব্যবস্থা হতো এই নদীতে মাছ ধরে। কিন্তু সেই নদী আজ ভরাট হয়ে পড়ছে। সুগার মিলের বর্জ্য প্রতি বছর নদীতে ফেলায় ছোট-বড় কোনও মাছই আর নদীতে পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দইয়ের হাঁড়ি, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন ও তরকারির আবর্জনা নদীতে ফেলে রেখেছে পৌরসভা। ফলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ নদীতে এক সময় পাওয়া যেত দেশী প্রজাতির নানা মাছ। নদীর পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতেন স্থানীয়রা। কিন্তু আবর্জনা ফেলায় নদীর নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। এছাড়া ড্রেজিং না করায় নদীটি যেমন সরু হয়েছে তেমনি পানির প্রবাহ একেবারেই কমে গেছে। আর মাছ তো চোখেই পড়ে না।
নদীটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে নানা অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় উকিলপাড়ার বাসিন্দা আইজুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভার নিদিষ্ট ময়লা ফেলার জায়গা রয়েছে। তারপরও নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় একদিকে যেমন নদীর পানি দূষিত হচ্ছে অন্যদিকে নদী থেকে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ৭ থেকে ৮ বছর আগেও এই নদী থেকে প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যেত কিন্তু আজ আর তেমন কোনও মাছই পাওয়া যায় না।’
বোয়ালিয়ার বাসিন্দা সবুর হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমরা হুইল দিয়ে নদীতে মাছ ধরতাম। ৩ থেকে ৪ কেজি মাছ ধরা পড়ত। এখন তো নদীতে জাল নামালে পুঁটি মাছও ধরা পড়ে না। পানি দূষিত হওয়ার কারণে আজ নদীর সব মাছ বিলুপ্তির পথে।’
কানাই লাল নামের এক জেলে বলেন, ‘এই নদী থেকে পাঁচজনের সংসার চলাতাম। কিন্তু এখন সারাদিন জাল টানলেও মাছের দেখা পাওয়া যায় না। তাই বাপ-দাদার এই পেশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। এখন মানুষের বাড়িতে কামলা দিয়ে সংসার চালাই।’ তিন দুঃখের সঙ্গে জানান, এত বড় নদী এই এলাকায় আর নাই। অথচ নদীতে মাছ নাই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মর্তুজা রেজা বলেন, ‘এক সময় ছোট যমুনা নদীর মাছ নওগাঁ জেলার মানুষের চাহিদা পূরণ করত। এই নদী ছাড়া নওগাঁ শহরকে চিন্তাও করা যেত না। অথচ এখন যেভাবে নদীর পানিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর পানি দূষণ করা হচ্ছে তা কল্পনার বাইরে। পৌরসভার আবর্জনার পাশাপাশি শহরের খাবারের দোকানগুলোর ময়লা-আবর্জনাও নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা নদী দখল করে বাড়ি বানাচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করা হয়েছে। তাছাড়া জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক ও সুগারমিলকে চিঠি দিয়ে সুগার মিলের বর্জ্য নদীতে না ফেলতে অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তিনি আরও বলেন, এখনই যদি নদীর পানি দূষণমুক্ত করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এই নদী থেকে আর মাছ পাওয়া যাবে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে শুধু মাছই বিলুপ্ত হচ্ছে না, জীববৈচিত্রের ওপরও প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, এই নদীতে মাছ রক্ষা করতে গেলে একদিকে যেমন নাব্যতা ঠিক রাখতে হবে তেমনি নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমূল হক (সনি) বলেন, ‘পৌরসভার কর্মীরা বুঝতে না পারায় ভুল করে নদীতে ময়লা ফেলত। আমি ইতোমধ্যে তাদের নিষেধ করেছি যাতে ময়লা আর নদীতে ফেলা না হয়। আগামীতে এই বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেব।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: