ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৮ জুলাই ২০১৮

 ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া

যাওয়ার পথে কালো বিড়াল অতিক্রম করলে যাত্রা নাকি অশুভ হয়। পরীক্ষার আগে ডিম খেলে ফলাফল খারাপ হবে। গ্রামাঞ্চলে এখনও মায়েরা ছোট্ট শিশুর কপালে কালো টিপ এঁকে দেন, যাতে কারো নজর না লাগে। বিজ্ঞানের যুগেও এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের অভাব নেই গ্রামীণ জনপদে। তেমনই এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে কাকতাড়ুয়া (মানুষের প্রতীক) ব্যবহার করছে। কৃষকদের বিশ্বাস, কাকতাড়ুয়া স্থাপন করলে ক্ষেতের ফসল দেখে কেউ ঈর্ষা করবে না বা ফসলে কারও নজর লাগবে না। এমনকি পোকামাকড়ও লাগবে না, ফসলে পাখির উপদ্রবও হবে না। ফসল ভাল হবে। আর মিলবে আশানুরূপ ফলন এবং সারা বছর ভাল থাকবে তারা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেলেও নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ক্ষেতের ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার এখনও করে আসছে। খড়ের কাঠামোর মাথায় মাটির হাঁড়ি আর তাতে চুন দিয়ে কাঁচা হাতে এঁকে দেয়া হয় নাক, চোখ-মুখ। পরিত্যক্ত জামা গায়ে জড়িয়ে জমিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, নাম তার কাকতাড়ুয়া। কাকতাড়ুয়া হচ্ছে কাক কিংবা অন্যান্য পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্য জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। এর মাধ্যমে পশু-পাখিকে ক্ষেতের ফসল কিংবা বীজের রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে নিরুৎসাহিত করা হয়। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমিতে পশু-পাখি তাড়ানোর জন্য কাকতাড়ুয়া জমির মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়া দেখে ক্ষেতে পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয় না। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে জমিতে বেগুন, খিরা, মরিচ, আলু, পেঁয়াজ, শসা, টমেটো জাতীয় ফসল রোপণ করা হয়। তখনই এই কাকতাড়ুয়াদের ব্যবহার করা হয়। কৃষকরা জানান, কাকতাড়ুয়া পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্য জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশ্যে জমিতে কাকতাড়ুয়া দাঁড় করে রাখা হয়। এটি এক প্রকার ফাঁদ হিসেবে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। সনাতনী ধারায় এটি মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল রেখে পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে সঙের ন্যায় সাজানো হয়। তারপর জমির মাঝামাঝি স্থানে খুঁটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখে। এটি বাতাসে দুলতে থাকায় পাখির উৎপাত ও তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস চালানো হয়। কাকতাড়ুয়ার সহজ যে চেহারা দেখা যায়, তা হলো একটা খাড়া লম্বাকৃত দ-ের উপরের এক-তৃতীয়াংশে ভূমি সমান্তরালে আড়াআড়ি করে আরেকটি দ- বেঁধে দু’পাশে হাত ছড়িয়ে দাঁড়ানো মানুষের আকৃতি তৈরি করা হয়। তারপর এই আকৃতির গায়ে জড়িয়ে দেয়া হয় পুরনো শার্ট, কিংবা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি। লম্বাকৃত দ-ের উপরের মাথায় রেখে দেয়া হয় একটি মাটির পাতিল। এতে পাতিলের তলা বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে আর একটা মানুষের গোলাকার মুখের আকৃতির মতো দেখায়। কেউ কেউ সেই পাতিলের তলাকে আরও বেশি বাস্তবসম্মত করতে সেখানে চোখ-মুখ এঁকে মানুষের আদল স্পষ্ট করেন। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×