ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমীরণ বিশ্বাস

সেচ সাশ্রয়ী আধুনিক অডউ প্রযুক্তিতে বোরো ধান চাষ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৮ জুলাই ২০১৮

  সেচ সাশ্রয়ী আধুনিক অডউ প্রযুক্তিতে বোরো ধান চাষ

ধান বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। এদেশে বর্তমানে ১১৪.২১ লাখ হেক্টর জমিতে ৩৪৮.৬১ লাখ মে. টন ধান উৎপন্ন হয়। মোট ধানের ৭.০৪,৩৮.৭৪ ও ৫৪.২২% যথাক্রমে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত হয়। আমন ধানে সাধারণত সেচ লাগে না তবে বোরো সম্পূর্ণভাবে এবং আউশ আংশিকভাবে সেচনির্ভর। বীজতলায় চারা উৎপাদন করে সেই চারা কাদা জমিতে রোপণ করেই মূলত ধান চাষ করা হয়। এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারার পরিচর্যা ও মূল জমি তৈরি ও চারা রোপণ পরবর্তী পরিচর্যায় প্রচুর পরিমাণে পানির দরকার হয়। হয়ত অনেকের বিশ্বাসই হবে না যে, প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে মাটির প্রকারভেদে ৩০০০ থেকে ৫০০০ লিটার পানি লাগে। যা মূল্যবান সুপেয় পানির এক নিদারুণ ও ভয়াবহ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এক সময় নদ-নদী, খাল-বিলের ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি দিয়ে বোরো ও আউশ ধানের জমি সেচ দেয়া হতো কিন্তু বর্তমানে শুকনো মৌসুমে ভূপৃষ্ঠস্থ এসব উৎসে পানির পর্যাপ্ততা না থাকায় এবং বোরো আবাদের আওতায় জমি বেড়ে যাওয়ায় এখন দেশের ৮০ ভাগ সেচ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। তাই সেচ কার্য পরিচালনার জন্য প্রতি বছর গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। প্রতিবছর সেচ পাম্প পরিচালনা করতে ২২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ও ১১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ব্যবহৃত হচ্ছে। বোরো ধানের ক্রমবৃদ্ধিহারে সেচের প্রয়োজনে ক্রমাগতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ফলে পানির স্তর ক্রমহ্রাসমানহারে নিচে নেমে যাচ্ছে। অধিক থেকে অধিকতর গভীরতায় সেচযন্ত্র স্থাপনের পরও অনেক সময় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। সে কারণে দেশের অনেক স্থানে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে বোরো ও আউশ ধানের আবাদ এখন হুমকির সম্মুখীন। বোরো ধান উৎপাদনে এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত ও ডিজেল ব্যবহারের কারণে একদিকে বিদ্যুত ও জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি পরিবেশে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক ও অন্যান্য ভারি পদার্থের সংমিশ্রণ ঘটছে। ফলে মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এমতাবস্থায়, বোরো ও আউশ ধান চাষকে লাভজনক ও টেকসই করতে হলে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি যেমন : এডব্লিউডি ও শুকনো পদ্ধতিতে ধান চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ছে। এটা একটি জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল আধুনিক প্রযুক্তি। উল্লেখ্য, ধান চাষে এডব্লিউডি ও শুকনো পদ্ধতি ব্যবহার করলে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় যথাক্রমে ১৫-৩০ ভাগ ও ৫০-৭০ ভাগ পানি সাশ্রয় হবে এবং কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এটা একটি লাগসই প্রযুক্তি।
×