ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ই-পাসপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৮ জুলাই ২০১৮

 ই-পাসপোর্ট

পরিকল্পনাটি পুরনো, বাস্তবায়নের তাগিদ এখনকার। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরেই বাংলাদেশে চালু হয়ে যাবে ই-পাসপোর্ট। বিশ্বে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি) ধারণা ১৯৮০ সালের, আর ২০০৮ সাল থেকেই উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। আমাদের দেশে এমআরপির যাত্রা শুরু ২০১০ সালে। যাহোক, দেরিতে হলেও ই-পাসপোর্ট চালু হওয়া এখন সময়ের বিষয় মাত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্টসেবা সপ্তাহ উদ্বোধনের সময়ে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর তাঁর জার্মানি সফরের সময় ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জার্মানির সরকারী প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়। অবশেষে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার এবং ভুয়া পাসপোর্ট প্রতিরোধে ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) চালু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় চলতি মাসের ১৯ তারিখে। এরপরই বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. টমাস এইনরিচ প্রিন্জ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত করতে গেলে দ্রুত ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জার্মানির প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এর মধ্যে বিশ্বের ১১৯টি দেশে চালু হয়ে গেছে এই ই-পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ হবে বয়সভেদে ৫ ও ১০ বছর। তবে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআর পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভা-ার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভা-ারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে। ই-পাসপোর্টের বাহক কোন দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডিতে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে এবং আবেদন গ্রহণ করে বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডিতে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করবে। দেখা যাচ্ছে সব মিলিয়ে এটি এক অত্যাধুনিক পদ্ধতি। পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র অনুযায়ী, শুরুতে ৩০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫ শ’ ৬৯ কোটি টাকা। এরপর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সেজন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরবর্তী সময়ে ওই কারখানায় থেকে ই-পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখা হবে। আশা করা যায় ই-পাসপোর্ট চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যবস্থার আরও এক ধাপ উন্নতি সাধিত হবে। এতে গ্রাহকরাও যে অধিক উপকৃত হবেন তা বলাই বাহুল্য।
×