ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৮ জুলাই ২০১৮

পাকিস্তানের নির্বাচন

ইতোপূর্বে আশঙ্কা যা করা হয়েছিল, তাই সত্য হয়েছে পাকিস্তানে। দেশটির জাতীয় সাধারণ নির্বাচনে হয়েছে সংঘাত, খুন, রাহাজানি ও রক্তাক্ত। নির্বাচনের আগেপরে জঙ্গীগোষ্ঠী ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের হামলা- পাল্টা হামলায় একাধিক প্রার্থীসহ নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক। আহতের সংখ্যাও কম নয়। তারপরও নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। বিশেষ করে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুন খাওয়ায়। এই দুটি প্রদেশে সহিংসতা ও সংঘাতের ঘটনাও বেশি ঘটেছে। নির্বাচনে সে দেশের সেনাবাহিনী তথা অদৃশ্য শক্তি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ব্যাপক হত্যাকা-ের অভিযোগ উঠেছে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই বাদে অন্য সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ এবং জঙ্গী হামলায় নিহত বেনজীর ভুট্টোর দল পিপির পক্ষ থেকে। মোট ২৭২টি আসনের মধ্যে শেষ প্রাপ্ত ফলে এগিয়ে আছে পিটিআই ১১টি, পিএমএল ৬৪টি, পিপিপি ৩৯টি এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দল ৩৪টি। পিটিআইয়ের এগিয়ে থাকার পেছনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে আগে থেকেই। আগামীতে সরকার গঠনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোন দলের ১৩৭টি আসন পেতে হবে। পিটিআই এগিয়ে থাকায় ইমরান খানের সরকারই সরকার গঠনের সমূহ সম্ভাবনা। তার ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে উঠেছে। স্থিতিশীল সরকার গঠনের অন্তরায় হতে পারে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে দেশে ফেরার পরই গ্রেফতার করা হয়েছে। ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) কর্মকর্তারা পাসপোর্ট জব্দসহ গ্রেফতার করেন তাদের। উল্লেখ্য, পানামা পেপারস রিপোর্টে তাদের নামসহ লন্ডনে বিলাসবহুল একাধিক ফ্ল্যাট কেনা সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ৬ জুলাই নওয়াজকে ১০ বছর এবং মরিয়মকে ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে পাকিস্তানের এ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্ট। একই মামলায় নওয়াজের জামাতা এখন কারাগারে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত নওয়াজ শরীফকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানের রাজনীতির আকাশে আবারও সমূহ সঙ্কট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। বলা যায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েছে পাকিস্তানে। মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭৩ সালের পর পাকিস্তানী জেনারেলরা প্রত্যক্ষভাবে ২০ বছর দেশ শাসন করেছে এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাঁচ বছরের কিছু বেশি সময় (জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে জুলাই ১৯৭৭) ছাড়া অন্য সময় ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করেছে পেছন থেকে। এও সত্য যে, পাকিস্তানের ১৯৭৩ সালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬ এবং অষ্টাদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধান বাতিলের ক্ষেত্রে কঠোর রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি এমনকি মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়। তাই সংবিধান স্থগিত করে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বা ক্ষমতা দখল আপাতত সম্ভব নয় বিধায় বারবার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরকার পরিবর্তনের অভিনব বিচারিক পন্থা চালু হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে প্রায় সব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও আনা হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে দুর্নীতির অভিযোগ। প্রকৃতপক্ষ পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে কখনই সমন্বিত করা হয়নি। ফলে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি বরাবরই পরিলক্ষিত হয়েছে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিসহ দুর্নীতির অভিযোগ, সাবেক স্বৈরসেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশারফকে বিচারের মুখোমুখি করা, সর্বোপরি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি নির্বাচিত সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য কম দায়ী নয়। নির্বাচন থেকে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হলো, সে দেশের সেনাবাহিনী তথা আইএসআই এবং তালেবান, আইএস, জইশ-ই মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ নানা জঙ্গীগোষ্ঠীর ব্যাপক সহিংস তৎপরতা জাতীয় নির্বাচনসহ পকিস্তানের ভবিষ্যতকেই অনিশ্চিত করে তুলেছে। অতঃপর যে বা যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, তিনি পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেন- সেটিই এখন দেখার বিষয়।
×