ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিকত্ব ইস্যুর সমাধান না হলে অসমের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২৭ জুলাই ২০১৮

 নাগরিকত্ব ইস্যুর সমাধান না হলে অসমের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে

নাগরিকত্ব ইস্যুটির সুরাহা না হলে অসমের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে বলে আলজাজিরার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন গোহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও সমাজকর্মী হীরান গোহান। অসমের লোকজন উদ্বেগপূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন কেননা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে অননুমোদিত অভিবাসীদের শনাক্ত করতে একটি সরকারী তথ্য প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর আলজাজিরার। ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন (এনআরসি) ১৯৫১ সালে সর্বশেষ নাগরিকদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক ও যারা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নির্ধারণ করে নিয়মিতভাবে আপডেট করা হচ্ছে। তবে নাগরিক অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেন যে, প্রক্রিয়াটি বৈষম্যমূলক। এতে আরও সতর্কতা জারি করা হয় যে, লাখ লাখ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক তালিকাতে তাদের নাম খুঁজে পাচ্ছেন না। তথাকথিত বিদেশী সমস্যাকে ইস্যু করে তিন কোটি ২০ লাখ লোকের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে সহিংস বিক্ষোভ দেখা দেয়। এখন বিপদ হচ্ছে হিন্দু উগ্রপন্থী বাহিনীরা চাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে যাতে হিন্দুরা অসমে যেতে পারে সে বিষয়ে উৎসাহিত করছে। তাদের নাগরিকত্বের ধারণা ইসরাইলের মতো। ইসরাইলের নাগরিকত্ব হিসেবে প্রত্যেক ইহুদী তিনি যেখানেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন নাগরিক হবেন শুধু ইসরাইলের। একই ধারণা ভারত ও হিন্দু উগ্রবাদীদের। ভারতকে তারা হিন্দুদের বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। বিদেশী নাগরিক হওয়ার সন্দেহে থাকার পর বাঙালী জাতিগোষ্ঠীর শত শত লোককে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আটকে রাখা হয়েছে। বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে হাজার হাজার লোককে বিদেশী বলে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। বাঙালী জাতিগোষ্ঠীর বেশিরভাগই মুসলমান। নাগরিক অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে, কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বৈষম্য ও হয়রানি করছেন। অসমের সমাজকর্মী হিরেন গোহাইন জেনোফোবিয়া বা বিদেশী আতঙ্কবাদীদের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি অসমকে সংজ্ঞায়িত করেছেন আলাদাভাবে। কারা অসমের অভিবাসী? কখন তারা গিয়েছিল, এ প্রশ্নের উত্তরে হিরেন বলেন অধিকাংশই মুসলমান তবে কিছু হিন্দু রয়েছেন। তারা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এক দেশ ছিল। সে সময় কোন সীমানা ছিল না। তারপর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভাগ করার কৌশল হাতে নেয় ও বিভাজন সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলা ভাগ করার কথাটি। এই সিদ্ধান্তটি এক সপ্তাহ বা সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে নেয়া হয়। জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করেই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই পূর্ববাংলা (বর্তমান আধুনিক বাংলাদেশ) থেকে দরিদ্র মানুষজন অসমে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে জমিদারি (সামন্ত) ব্যবস্থার শিকার ছিল। ব্রিটিশ (ঔপনিবেশিকরা) বাংলা প্রদেশের সমস্যাগুলোর জন্য একটি নিরাপত্তার অজুহাত হিসেবে অসমে বাংলা অভিবাসীদের আগমনকে উৎসাহিত করেছিল। ১৯৩০-এর দশকে আসামি ও অন্যান্য আদিবাসীদের মধ্যে তৈরি এই প্যানিকটি মানুষকে বুঝতে হবে। একে অবদমন করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, অসমের নাগাওন জেলার মুসলমানদের অনুপাত ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। মাত্র ৩০ বছরে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অভিবাসীদের সন্তানরাই নেটিভ। ১৯৪৭ বা ১৯৭১ সালের আগে অসমে যারা ছিলেন তারা নেটিভ। যারা পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাদের ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য করা উচিত।
×