ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইমরান খানের দ্বিতীয় ইনিংস

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২৭ জুলাই ২০১৮

ইমরান খানের দ্বিতীয় ইনিংস

পাকিস্তানে বুধবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ঘোষিত ফলে এগিয়ে আছে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই ইনসাফ পাকিস্তান (পিটিআই)। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে দলটিকে কোয়ালিশন গঠনের পথে যেতে হবে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য বড় ধরনের কারচুপির অভিযোগ করেছে। বিবিসি, এনডিটিভি ও এএফপি। নির্বাচনের দিন কোয়েটায় একটি ভোটকেন্দ্রের কাছে বোমা হামলায় ৩৫ জন নিহত ও ৬৭ জন আহত হন। এছাড়া বিক্ষিপ্ত সারাদেশে কিছু সহিংসতা হয়েছে। তবে পাকিস্তানের ৭১ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বেসামরিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ সুগম করেছে এই নির্বাচন। সর্বশেষ ফলাফলে ২৭২টি আসনের মধ্যে ১১৯টি পেয়েছে পিটিআই। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৬৫ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) পেয়েছে ৪৪টি আসন। পিএমএল-এন, পিটিআই এবং পিপিপির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। পিপিপি এর আগে একাধিকবার ক্ষমতায থাকলেও এবারের নির্বাচনে তাদের অবস্থান ততটা শক্তিশালী নয় বলে ভোটের আগেও যেমন ধারণা করা হয়েছিল ভোটের দিনও তাই দেখা গেল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ দুর্নীতি মামলায় এখন জেলে রয়েছেন। তার স্থলাভিষিক্ত শহীদ খাকান আব্বাসী তার আসনে হেরে গেছেন। নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরীফ ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন। তবে তার ছেলে হামজা শাহবাজ শরীফ তার আসনে জিতেছেন। ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলির ৩৪২ আসনের মধ্যে সরাসরি ভোট হয় ২৭২টি আসনে। ৭০টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত, আসনগুলো আনুপাতিক হারে বণ্টিত হয় দলগুলোর মধ্যে। মোট আসনের সংখ্যায় সরকার গড়তে ১৭২টি আসন দরকার। সরাসরি ভোটের ২৭২টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৭টি আসন। এ নির্বাচনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক, জামাত উদ দাওয়ার নেতা হাফিজ সাইদ নিজে বা তার দল একটি আসনও পায়নি। যা থেকে অনুমান করা যায় ভোটাররা চরমপন্থীদের প্রত্যাখান করেছে। ভারত হাফিজ সাইদকে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরিকল্পনাকারী দাবি করে থাকে। নির্বাচনে মাঠে ইমরানের এই উত্থানকে অনেকটা টি-২০ ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একটা সময় ধারণা করা হতো ক্রিকেট ক্যাপ্টেন হিসেবে তিনি যত সাফল্যই পান না কেন রাজনীতিতে তার পক্ষে সফল হওযা সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি দেখিয়ে দিলেন ব্যাট বল হাতে উইকেটে যেমন তেমনি রাজনীতিতেও সমান পারদর্শী। পিটিআই যতগুলো আসন পেয়েছে তাতে মনে হচ্ছে বড় দলগুলো সঙ্গে নয় বরং ছোট কিছু দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করতে হতে পারে। এর ফলে সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়নে তার দলকে খুব একট বেগ পেতে হবে না। এই ঘটনায় দেশটির পুঁজি বাজারগুলোতে শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন ঝুলন্ত সরকার হবে না, বরং সরকার স্থায়িত্ব পাবে। অনেকের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন ইমরান। ইমরানের জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজী ও শওকত খানম দম্পতির একমাত্র ছেলে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। ১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বে পাকিস্তান বিশ্বকাপ জেতে। খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করা শওকত খানম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে তিনি সমাজসেবা ও রাজনীতিতে নামেন। জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে তিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ২০১৩ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ব্যাপক প্রতিবাদের ডাক দেন ইমরান। মাত্র ১৯ শতাংশ ভোট পায় ইমরানের পিটিআই। এর কিছুদিন পরে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির খবর ইমরানের রাজনীতির হালে যেন হাওয়া লাগায়। একে পুঁজি করে তিনি রাজনীতিরি মাঠ গরম করতে থাকেন। প্রতিবেশী আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ও ড্রোন ব্যবহারের বিরুদ্ধেও তিনি থাকেন উচ্চকণ্ঠ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একাধিক বিয়ে করেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক জেমিমা গোল্ডস্মিথকে ১৯৯৫ সালে বিয়ে করে। জেমিমা ইসলাম গ্রহণ করলেও তাদের বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৪ সালে। ব্রিটেনের আরেক সাংবাদিক ও বিবিসির সাবেক উপস্থাপিকা রেহাম খানকে তিনি পরে বিয়ে করেন। তাদের এই সম্পর্ক টিকে মাত্র ১০ মাস। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তিনি বিয়ে করেন পাঁচ সন্তানের জননী ও ধার্মিক হিসেবে পরিচিত বুশরা মানিকাকে।
×