ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সময়ের কাহন

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ২৭ জুলাই ২০১৮

সময়ের কাহন

প্রতিদিন পৃথিবীর নানা দেশে নানা খবরের কাগজে কত বিচিত্র সব খবর ছাপা হয় তার সীমা পরিসীমা নেই। খবরের পেছনে কত কাহিনী, কত দীর্ঘশ্বাস লুকানো আছে বা থাকে কেইবা তা জানতে পারে বা শুনতে পায়? বেশ ক’বছর আগে তেমনি এক খবর একদিন চোখে পড়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম আলো নামের দৈনিক পত্রিকাতে খবরটি প্রকাশ হয়। খবর হলো রামপুরা বা তৎসংলগ্ন বাড্ডা এলাকায় বাড়ি নির্মাণের সময়ে চাঁদাবাজদের দাবি অনুযায়ী চাঁদা না দেয়াতে ঘটেছে ভয়ঙ্কর বিপত্তি। চাঁদাবাজরা বাড়ির প্রবাসী মালিকের স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছে তাদের চাহিদা পূরণ না হলে তারা মালিকের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। ভয়ে মহিলা কন্যাসহ আত্মগোপন করে আছেন। স্বস্তির বিষয় হলো যে পুলিশ চাঁদাবাজদের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়ে অভিযান শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এর কিছুদিন পর অস্ট্রেলিয়ার দি হেরাল্ড সান ও দি এইজ কাগজে অদ্ভুত এক খবর এক খবর ছাপা হলো। ইমিগ্রেশন লইয়ারের সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে এই প্রথম দু’জন বাংলাদেশী যুবক নিজেদের গ্লে ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসন পেয়েছে। নিতান্ত সাদামাটা খবর। তবে গভীর মনোনিবেশ সহকারে কান পাতলে খবরের পেছনের গল্পটি শোনা যাবে। এক সময়ে বঞ্চিত মানুষকে ক্ষীণ আশার আলো দেখাত নিবেদিত আত্মত্যাগী মানুষেরা। এখন ত্যাগীদেরও বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটানোর চিন্তা উধাও, আবার সরল মানুষ ধর্মনিষ্ঠায়ও শান্তি পাচ্ছে না। নিবেদিত প্রাণ ধার্মিকের প্রতিও অযথা সন্দিহান কেউ কেউ। কারণ ধর্ম এখন অসাধু মানুষেরা লুণ্ঠন করে ধর্মকে সন্দেহের আবর্তে ফেলে দিয়েছে। আত্মার শান্তির জন্য ধর্ম আর কষ্টকর অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিপ্লব সব যেন নাগালের বাইরে। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। সব কিছু নিয়ে বাণিজ্য চলে। ভালবাসা এক অমল অনুভূতি তাও পণ্য হয়ে যায় কখনও বা। আর মানুষ তা কিনেও নেয় বাধ্য হয়ে। নিঃসহায় মানুষ মরিয়া হয়ে বাঁচার পথ খুঁজতে গিয়ে আপোস করে। পেশাজীবীর কূটপরামর্শে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেক কিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়। বাঁচার প্রয়োজনে আত্মপরিচয়ও পাল্টাতে হয় কখনও বা। তেমনি এই ঘটনার মূল চরিত্র দুই যুবক জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অনন্যোপায় হয়ে খড়কুটোর মতো অদ্ভুত মিথ্যা এক ভালবাসার ডালে আশ্রয় খুঁজে নেয়। দু’জন দুর্দশাতাড়িত মানুষ টিকে থাকার জন্য নিজ পরিচয় বিসর্জন দিয়ে ভেক ধরে অন্য পরিচয় নিয়ে টিকে থাকে। আর তাদের অসহায়ত্ব ও কষ্ট থেকে আপাত ভাল মানুষেরা কিভাবে ফায়দা লুটে নেয় তারও কাহিনী জানা যাবে। ক ঘটনা প্রবাসী নাইমের। অনেক কষ্ট করে, বহু অপমান সহ্য করে ধার-কর্জের মাধ্যমে অর্থ যোগাড় করে নাইমকে তার মা বিদেশে পাঠায়। তবে ইচ্ছা করে নয় বাধ্য হয়ে। নাইম যখন মায়ের গর্ভে তখন তার বাবা মারা যায়। আসলে তাকে খুন করা হয়। নাইমের বাবার পরিচয় বিচিত্র। কারও চোখে সে ত্যাগী, পরিবর্তনের বা বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর একজন মানুষ, কারও কাছে সমাজবিরোধী, আইনভাঙ্গা এক দুষ্কৃতকারী। নিজের স্বার্থে যে কণামাত্র দুষ্কর্ম কোনদিন করেনি তার কপালেই জুটল কিনা দুষ্কৃতকারী শিরোপা। নাইমের মা ভুল পথে পা ফেলার জন্য, ভুল মতের মানুষের সঙ্গে জীবন জড়ানোর জন্য আপনজন থেকে বিতাড়িতা। যা হোক শিক্ষা-দীক্ষা আয়ত্তে ছিল বলেই ব্যাংকে ক্যাশিয়ারের কাজ জুটিয়ে ঊষর জীবননদীর নাব্য ধরে রেখেছিল। নিজ ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে দুঃখী মানুষকে সুখী ও সুন্দর জীবন এনে দেয়ার যে স্বপ্ন নাইমের মা নিজেও লালন করত স্বামীর অকাল মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে স্বপ্নেরও সমাপ্তি ঘটল। নাইমের কিশোর বয়সে মা সব একে একে খুলে বলেছিল তাকে। নিজেদের মত পথ, স্বপ্ন, দ্বিধাদ্বন্ধ, মার খাওয়া, পিছিয়ে যাওয়া সব উগড়ে দিয়েছিল ছেলের কাছে। তবে সব শেষে বলেছিল -শোন্ বাবা আমাদের মতো স্বপ্ন দেখিস না, স্বপ্নের পেছনে ছুটিস্ না। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট অসহ্য। তবে একটা কথা বলি কখনও অন্যের ক্ষতি কর না, পারলে উপকার কর। দেখবে আর কিছু না থাকুক শান্তি থাকবে তোমার অন্তরে। নাইম গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে পছন্দ করত। বন্ধুবান্ধব খুব একটা ছিল না তার। গায়ে পড়া মানুষের ডাকাডাকি, হৈ হল্লা এড়ানোর জন্য নাইম নিজের জন্য এক পন্থা বের করল। কানে না শোনার ভান করত সে। বিষয়টা জানত কেবল তার মা। নাইমের মায়ের ব্যাংকের গ্রাহক এক মহিলার বদান্যতায় তারা খুব সস্তায় বাড়ি ভাড়া পেয়ে গেল। মহিলার স্বামী পরবাসী। গুলশান-বাড্ডার সীমান্তে টিনশেড পাকা তিন কামরার বিল্ডিংয়ে সন্তানদের নিয়ে থাকতেন মহিলা। গাছপালা ঘেরা প্রশস্ত উঠোন। তারই এক কামরায় নাইমরা ঠাঁই পায়। তখন নাইমের বয়স এগারো কি বারো বছর। ধীরস্থির স্বভাব তবে নানাভাবে কিছু না কিছু কাজে সব সময়ে নিজেকে ব্যস্ত ও মগ্ন রাখে। বাড়িওয়ালীর সাত ও পাঁচ বছরের ছেলে দুটির কাছে নাইম যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। সারাক্ষণ নাইমের পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে বেড়ায় দুই ভাই। মেধার কারণে বাড়িওয়ালীর ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তিনটির শিক্ষকও হয়ে ওঠে নাইম। তিন বছর পর ছুটিতে দেশে এসে বাড়ির মালিকও নাইমকে দেখে সন্তুষ্ট হলেন খুব। স্ত্রীকে বলেনÑ -শোন নাইম আর আমাদের ছোট দুই ছেলেকে মাঝখানের ঘরে থাকতে দাও। ছেলেটা ভাল ওর সঙ্গ আমাদের বাচ্চাদের জন্য ভালই হবে। ছেলেদের সাথে এক কামরায় নাইমের থাকার জায়গা মিলে যায়। এটা ছিল নাইমের মায়ের আশাতিরিক্ত প্রাপ্তি। নাইমের মাও মহিলাকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতো, বাইরের অনেক কাজ সানন্দে করে দিত। বিত্তবানের এলাকা গুলশানের বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছিল। গুলশান সীমান্তে নাইমদের বাসস্থানও পেয়ে গেল চমৎকার অবস্থান। আগের কাদা কংক্রিটে মাখামাখি গলিঘুঁজি উধাও। এখন বাড়ির সামনেই পিচঢালা মটরচলা গলিপথ। তার পর দু’বাড়ি পার হলেই বিশাল সড়কে পা রাখা। গাড়িবাস যাচ্ছে আসছে। রাস্তায় ভাঙ্গাচুড়া খানাখন্দ কিছু নেই। নাইমের মা এখন কাদাহীন সড়ক ধরে হেঁটে গুলশান ব্রাঞ্চে অফিস যেতে পারে। রাস্তাঘাটের উন্নতির কারনে জায়গার দাম বাড়ল। বাড়িওয়ালী সাদাসিধা জীবনযাপন করে নীরবে বিদেশী টাকা সঞ্চয় করে রাখছিলেন। একসময়ে বাড়ি তৈরির আয়োজন শুরু করেন। নাইমের মায়ের সাহায্য মহিলার অনেক কাজ সহজ করে দিল। ঋণ পাওয়া, সরকারী দফতরে বাড়ির নকশার অনুমোদন বা বাড়ির প্ল্যান পাস করানোর মতো জটিল কাজগুলো সহজ হলো নাইমের মায়ের সহযোগিতায়। নিতান্ত সাদামাটা জীবনযাপনের কারণে জৌলুসহীন টিনশেড দালানে বাস করা মানুষের প্রতি আশপাশের কারোর কোন আগ্রহ ছিল না। বরং অবজ্ঞাই ছিল বলা যায়।সমস্যা শুরু হলো নির্মাণকারী লোকজন এসে যখন মাপজোক, ভাঙ্গাচুড়া করার কাজে হাত দিল। আশপাশের মানুষের চোখে বিস্ময় আর অন্তরে গোপন জ্বালা। এতদিন যাদের পাত্তা দেয়ার মতো যোগ্য মনে করত না তাদের অবস্থার উন্নতি অসহনীয় লাগল। এই তুচ্ছ মানুষগুলো তাদের উঠোনের একপাশে ছোট পাখির বাসা না ভেঙ্গেই অট্টালিকা তৈরিতে হাত দিয়েছে! চারদিকে ঈর্ষার তুষ ধিকিধিকি জ্বলে উঠল। মানুষের হিংসার আগুন তাদের পুড়িয়ে মারতে উদ্যত হলো। পরশ্রীকাতর প্রতিবেশীদের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডাদের চাঁদা দিয়ে নিরস্ত করবে ভেবেছিল বাড়িওয়ালী। তবুও রেহাই মিলল না। একজন প্রতিবেশী এক সন্ধ্যায় এসে বাড়ির নকশা পরিবর্তনের দাবি জানালেন। কারণ তার বাগানে ছায়া ফেলবে মহিলার ইমারত। মহিলা নম্রভাবে নকশা পরিবর্তন করা যাবে না বলে জানালেন। মহিলার যুক্তি আইনসঙ্গত। কারণ সরকার নকশা অনুমোদন করেছে সবকিছু খতিয়ে দেখে। ওই প্রতিবেশী অশালীন ভাষায় মহিলাকে শাসিয়ে যায়। বাড়িওয়ালীর স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে গুন্ডা লেলিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। নাইম তার নিভৃত নিঃশব্দ জীবনের সঙ্গী ক্যাসেট রেকর্ডারে পুরো হুমকি-ধমকি রেকর্ড করে। তারপর সে যে কান্ড করে তাতে বাড়িওয়ালী মহিলার নিরাপত্তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে সে কান্ড নাইমকে ঠেলে দেয় তোপের মুখে। পুলিশ, মানবাধিকার সংস্থা, নারী সংগঠন, এমন কি দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি আলোড়ন তুলে। কারণ সবার কাছে হুমকির ক্যাসেট পৌঁছে গেছে। আর এদিকে আরেক কান্ড। রেকর্ড করণেওয়ালাকে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছে ভাড়াটে খুনী। এই ভয়াবহ পরিস্থিতে আদম ব্যাপারী ধরে নাইমকে বিদেশ পাঠানোর আয়োজন করে নাইমের মা। বাড়িওয়ালী মহিলা নামাজ পড়ে নাইমের জন্য দোয়া তো করছিলই টাকা পয়সা দিয়েও নাইমের মাকে যথাসাধ্য সাহায্য করছিল। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় নাইমের মা ওকে বলেছিল -বাবা দেশে আর ফিরিস না, পারলে ধারদেনা যা করেছি তা শোধ করার জন্য সময়-সুযোগ মতো টাকা পাঠাবি। বিদেশগামীর কাছে আত্মীয়-পরিজনের নিতান্ত সাদামাটা এতটুকু প্রত্যাশা থাকেই। নাইমের মা বেচারী ঋণগ্রস্ত। এদিকে বিদেশের টাকায় ঋণশোধ করার বদলে নাইম আরও ঋণ, আরও অদ্ভুত সব শর্তের দাসখত মেনে নিতে বাধ্য হয়। নাইমের ছয় সপ্তাহের ট্যুরিস্টভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একজন পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্য তাকে পরোপকারী এক দাড়িওয়ালা ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। বিনয়ী ভাইকে আল্লাহ ্তালার ফেরেস্তা মনে হলো যখন উনি বললেন -ইনশাহ আল্লাহ উপায় একটা বার হবেই। তবে তার পরের বাক্য শুনে নাইম আঁতকে উঠল -দরকার হলে রেসিডেন্সি পাওয়ার জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করিয়ে দেব। টাকা-পয়সা যা লাগে আপাতত আমিই দেব পরে রোজগারপাতি করে সুদাসলে ফেরত দিও। দেখতে মুমিন দাড়িওয়ালা ভাইয়ের কল্যাণে কাজও একটা জুটে গেল। তারই বাড়ির গ্যারেজে বসে খাবারের কৌটার লেভেল পাল্টানোর কাজ। মেয়াদ শেষ হওয়া খাবারের কৌটার পুরনো লেভেল ছিড়ে ফেলে নতুন ঝকঝকে লেভেল লাগানো। ইজরাইলের আম, ইতালির অলিভওয়েল, ইন্ডিয়ার সর্ষের তেল আরও কত কি। কাজটা শুধু তুচ্ছ নয় অনৈতিকও বটে। স্বল্পভাষী নাইমের সামনে উন্মোচিত হওয়ার আকুতি নিয়ে আর এক অন্ধকার জগত হাজির হলো। নিরুপায় নাইম লেভেল পাল্টাতে পাল্টাতে ভাল মানুষ ভাইয়ের অপেক্ষায় করে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার অল্প ক’দিন আগেই দাড়িওয়ালা ভাই আসলেন। -নাহ্ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের জন্য মেয়েদের পাওয়া গেল না। ওই ফিলিপিনো মেয়েগুলো বদের হাড্ডি। উড়লচ-ী মেয়ে কোথায় গেছে কে জানে। চল ইমিগ্রেশন লইয়ারের কাছে যাই ওই ব্যাটা একটা না হয় আরেকটা পথ বার করবেই। বরিশালের হাকিমকেও নিয়ে যাব। পড়শুদিন তোমাদের দুই জনকে একসঙ্গে নিয়ে যাব। খ মুরব্বি দাড়িওয়ালা ভাই চলে যাওয়ার পর পরই হাকিম তার কাহিনী শুরু করল। হাকিম তার হতভাগী বোনের শ্বশুরের যৌতুকের দামী মিটাতে না পেরে ক্ষুব্ধ ও রাগে ফুঁসছিল। একদিন বৈঠা তুলে এমন গাট্টা দেয় বুড়োকে যে হসপিটালে যাওয়া ছাড়া বুড়োর আর কোন উপায় থাকে না। হাকিমও জান বাঁচানোর জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়। তারও কাঁধে বিরাট ঋণের দায়। বিদেশে থেকে যেতে সেও মরণ পণ করে উপায় খুঁজছে। হাকিমও নাইমের সঙ্গে সজ্জন (!) ভাইটির ওখানেই কাজ করছিল। হাকিম কিভাবে যেন শুনেছে মুমিন (?) ভাইটির ব্যবসা এক ইহুদীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায়। নাইম-হাকিমদের মতো অসহায় মানুষদের ঋণের দাসখতে আটকে রেখে খুব কম মজুরিতে কাজ করিয়ে নেয় এরা। অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকে ভয়ে। কারণ তাদের ইমিগ্রেশনের ভয় দেখিয়ে প্রায় দাস করে রেখেছে ধার্মিক (?) ভাইটি ও তার ইহুদী বন্ধু। আপাত ভাল মানুষ ধার্মিক ভাইটির উদার সাহায্যের পেছনে যে কুমতলব কাজ করে তা জানে নাইম ও হাকিমের মতো দুর্ভাগারা। নাইম কথাবার্তা তেমন বলেই না। হাকিম দেখল ওকে কিছু বললে পাঁচকান হবে না। মন খুলে সে নাইমকে অনেক কথা বলে। একদিন বলল -জানেন ভাই আমি একটা বিষয় আবিষ্কার করে ফেলেছি নাইম স্বভাবগতভাবে কথাটি না বলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল। তখন হাকিম উৎসাহ নিয়ে কথা চালিয়ে গেল -শুনেন ভাই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব নয় সে হচ্ছে সৃষ্টির সেরা লোভী। আর এইটাই আমার আবিষ্কার। দেখেন এই যে মুমিনের আদলের দাড়িওয়ালা ভাই পুরনো খাবারের জিনিসের লেবেল ছিঁড়ে নতুন লেভেল লাগানোর ব্যবসা করে তাতে তার নামাজরোজা, কলমাকালাম কিছুই উৎসাহ দেয় না। উৎসাহ যোগায় তার লোভ বুঝলেন ভাই। তবে দেখতে মুমিন কাজকর্মে কমিন মানুষটি কথা রেখেছেন। ওদের নিয়ে ঠিক সময়ে উকিলের কাছে পৌঁছে গেলেন। উকিলের কথাবার্তা পয়সায় বিকোয় তাই মূল্যবান আর সংক্ষিপ্ত। উকিল ভদ্রলোক বললেন -দেখ তোমাদের এদেশে টিকে থাকার একটা উপায়ই দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে যদি তোমরা নিজেদের ‘গ্লেলাভার’ ঘোষণা কর। বাংলাদেশের দু’জনকে এই গ্রাউন্ডে রেসিডেন্সি পাইয়ে দিয়েছি। অসহায় দু’জন মানুষকে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অদ্ভুত এক লেবাস ধারন করতে হলো, আইনের ফাঁদে অভিনব এক ভালবাসার শাখায় আশ্রয় নিতে হলো।
×