ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আক্তারুজ্জামান সিনবাদ

প্রশান্তির প্রচ্ছদ

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ২৭ জুলাই ২০১৮

 প্রশান্তির প্রচ্ছদ

একজন শিল্পী তাই করে থাকেন যা একজন মানুষকে চিন্তার রাজ্যে, ভাবের রাজ্যে আলোড়িত করবে। একটি ছবি আর কিছুই নয়, ছবি হচ্ছে একটি ভাষা যে ভাষার মাধ্যমে অন্তর্দৃষ্টি তৈরি হয়। সদাব্যাপ্ত কাল হতে কালান্তরে জীবন থেকে জীবনান্তরে যে ভাষা শুধু সৃজনশীলতায় ভিত্তিমূল জীবনের রসবোধকে উৎসাহিত আলোতে অগ্রসর করবে। শিল্পের কাঠামোতে একটি নির্দিষ্ট গড়ন এবং চেতনা প্রকাশের নির্দিষ্ট পাঠশৈলী তৈরি করাটাই শিল্পীর কাজ। নিমাল্য নাগ তার শিল্পচেতনা ‘গ্রন্থে’ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ প্রবন্ধে- ‘প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠভাবে ইতিহাসের গভীরে যাওয়া। কারণ সেখানেই লুকিয়ে আছে প্রকৃত সত্য ও তথ্য।’ আর এমনটিই লক্ষ্য করা যায় দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খানের তত্ত্বাবধানেও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আনিসের সমন্বয়ে গত ২০ জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘প্রত্যাশায় বিবর্তন’ শীর্ষক চিত্রকর্মশালায় জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৈশিক ও আন্তর্জাতিক অর্জনে বাংলাদেশের শিল্পী সমাজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে এই কর্মশালায়। নানা প্রজন্মের আলোচিত ১৬ জন শিল্পী এই কর্মশালায় ছবি আঁকেন। বিশাল বিশাল ক্যানভাসে রং তুলির আঁচড়ে জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার ১৬টি প্রতিকৃতি। গণসংবর্ধনায় ফ্রেমে ফ্রেমে শৈশব থেকে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন স্মৃতিপটে ফ্রেমবন্দী হয়ে চিত্র প্রদশর্নীতে ছিলেন দেশরতœ শেখ হাসিনা। দ্রুতগামী চিত্রবিন্যাসে দেশরতেœর চিত্রনির্মাণ করেছেন শিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ। যেন নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন শিল্পী জামাল। সুন্দর-অসুন্দরের তফাত নয়, বিমূর্ত বা আধা-বিমূর্ত নয়, চিন্তার সঙ্গে চেতনায় যোগসাজশে পুরোদস্তুর বাস্তব জ্ঞানভিত্তিক চিত্রকর্ম নির্মাণে ব্রতীপালন শিল্পী জামাল আহমেদ। শিল্পীর নির্মিতির করণকৌশল স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাধীন। প্রতিকৃতি অঙ্কনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেই শিল্পী অতলস্পর্শী ব্যক্তিত্বকে স্পর্শ করে অভিব্যক্তির মাধুর্যতায় স্পর্শ করেছেন জননেত্রীকে। প্রতিকৃতিটিতে শিল্পী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গণমুখিতা এবং প্রত্যাশা ও স্বপ্নপূরণের এক দুর্বার বাণী ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। চিত্রপটে শেখ হাসিনার চেহারার মাধুর্যটিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে শিল্পী শেখ আফজাল। তার মনোহরণকারী ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন সৃজনের আলোয়। প্রতিকৃতিটির আড়ালেই শেখ হাসিনার প্রতি শিল্পীর শ্রদ্ধা-ভালবাসা লক্ষণীয়। রঙের ব্যবহার বেশ মার্জিত এবং সাবলীল। হয়ত দ্রুত কাজ করার কারণেই এই সাবলীলতা শিল্পীর কাজে খুব স্পষ্ট। প্রতিকৃতিটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালে অবাক বিস্ময়ে কেবল দাঁড়িয়েই থাকতে হয়। আলোকের ঝর্ণাধারার মতো যেন বেরিয়ে আসছে একটি জাতীয় আগামীর নির্দেশনা, একটি জাতির আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। -জাতির পিতার কন্যা, শেখ হাসিনা তুমি অনন্যা। যত দিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। শিল্পী দুলাল চন্দ্র গাইনের আঁকা শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিটা যেন তা জানান দিচ্ছে। শেখ হাসিনার প্রতি শিল্পী দুলাল চন্দ্রের ভালবাসায় এক অনন্য উদাহরণ। এঁকেছেন হৃদয়ের গভীর থেকেই। গভীর শ্রদ্ধা না থাকলে এমন আঁকা যায় না। শিল্পী এসএ বিকাশের আঁকা প্রতিকৃতি দেখলে প্রশান্তির আবেশ পাওয়া যায়। সামান্য আলোয়ছটা, কিছুটা জল রঙের ওয়াশ, তাতে এক হাস্যোজ্জ্বল মুখ। ব্যক্তিত্বের সবটুকু দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তাঁর নেতৃত্বে দিন বদলের সেøাগান নিয়ে একটি উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সারাদেশে যেসব উন্নয়ন কর্মকা- চলছে যেন তাই এই প্রতিকৃতিতে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিল্পী আব্দুস সাত্তার তৌফিকের আঁকা প্রতিকৃতিটি নান্দনিকভাবে উজ্জ্বল রঙে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৃজনশীল ও শৈল্পিকতার নিবিড় বন্ধনে। লেখনীও গ্রাফ করে চতুর্ভুজের সুবিন্যাসে সাদা কালো রঙের নিবিড় ছোঁয়ায় শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী এঁকেছেন শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি। বাক্যময় রেখা আর মোহবিন্যাসহীন রঙের ব্যবহারে শিল্পী সহিদ কাজীর আঁকা প্রতিকৃতিটি বেশ প্রাণবন্ত। শিল্পী মানিক বণিকের আঁকা শেখ হাসিনার ছোটবেলার প্রতিকৃতিটি নান্দনিক গুণে গুণান্বিত। হাসি মাখা মুখ, বেণী করা চুলে ফুল উজ্জ্বল রং ও স্ট্রোকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ যেন সরলতার প্রতীক। সৈয়দ ফিদা হোসেনের আঁকা শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিটি হাল্কা বাদামী রঙে ওয়াশের মাধ্যমে বলিষ্ঠ রেখায় টানে আঁকা। সপটি তুলির টান আর স্বল্প রং প্রয়োগ জানান দেয় শিল্পী ফিদার দক্ষতা। প্রতিকৃতিটি স্বল্পায়তন ছাপিয়ে চোখে আসে রেখাচিত্রছন্দ-সৃষ্টির এক দৃঢ়চিত্ত প্রয়োগ। শিল্পী সৈকত হোসাইনের আঁকা প্রতিকৃতিটি প্রতীকছন্দে ভরপুর। ক্যানভাসজুড়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ লাল-সবুজের লেখনীর ছাপ। মাঝখানে জননেত্রী শেখ হাসিনার মায়াভরা প্রতিকৃতি ব্যাকগ্রাউন্ডে কাগজের নৌকা আলো-ছায়ার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিল্পী জিএম শামীম, পুলক, রতেœশ্বর সূত্রধর, আজমল হোসাইন, জয়ন্ত সরকার জন ও দিদারুল লিমনের আঁকা প্রতিকৃতিগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায় দেশরতœ যেন জাতির প্রতি অপরিসীম আস্থা ও ভালবাসার গুণে তিনি বাঙালীদের এক মন এক প্রাণে পরিণত করতে পেরেছেন। প্রতিটি চিত্রকর্মই যেন হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনার নানামুখী প্রকাশ ভঙ্গির অনবদ্য বয়ান। প্রতিটি ফ্রেমে শেখ হাসিনার মুখচ্ছবি যেন তারই গল্প। একটি থেকে আরেকটি ছবিতে চোখ রাখলেই আরেকটি গল্পের সূচনা হয়। শুধু চোখের দেখায় চোখ জুরায় না। চিন্তার খোরাকও যোগায় প্রতিকৃতি চিত্রগুলো।
×