ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পপি দেবী থাপা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী রেজিস্ট্রার ॥ রহিমা কানিজ

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ২৭ জুলাই ২০১৮

 পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রথম নারী রেজিস্ট্রার ॥ রহিমা কানিজ

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম নারী রেজিস্ট্রার। বাংলার নারী সমাজের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নারীরা যে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে তার মেধা, যোগ্যতা আর মনোবল দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারই অন্যতম উদাহরণ রহিমা কানিজ। ২৯ জুন ২০১৮ তারিখ অপরাহ্নে রেজিস্ট্রার হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। জন্ম ঢাকা মেডিকেল কলেজ। শৈশব, কৈশর ঢাকাতেই। বাবা কাজী কায়কোবাদ ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পরবর্তীতে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং ব্যবসা করতেন। মা কাজী হাজেরা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। রহিমা কানিজের বেড়ে ওঠা এবং জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে উত্তরোত্তর সফলতা অর্জনের পিছনে তাঁর মায়ের অবদান ছিল বেশি। মা ছিলেন তার এগিয়ে চলার প্রেরণা। তিনি ১৯৭৪ সালে কামরুন্নেসা সরকারী গার্লস হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং সেন্ট্রাল ওমেনস্ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে স্কলারশিপ পাওয়ার দরুন সেখানে পড়তে চলে যান, এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই অর্থনীতিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলেন বড় হয়ে গবেষক হবেন। তাঁর প্রথম চাকরিও ছিল গবেষণাধর্মী। গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে বালাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন প্রায় চার বছর। এরপর রিসার্স এ্যাসিসটেন্ট হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট এ চাকরি আরও চার বছর। বাংলাদেশের প্রথম নারী রেজিস্ট্রার হিসেবে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেনÑ ‘এটা হচ্ছে নারী ক্ষমতায়নের প্রভাব। প্রথম নারী রেজিস্ট্রার হিসেবে আমার সব সময় চেষ্টা থাকবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিক এব সুষ্ঠুভাবে পালন করার। যাতে নারীদের কখনও শুনতে না হয়, নারীরা দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম। আমি আমার কাজের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণ করতে চাই।’ ১৯৯৪ সালে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন তিনি। তারপর কেটে গেছে ২৪ বছর। ধাপে ধাপে উঠে এলেন রেজিস্ট্রার পদে। এবার রেজিস্ট্রার পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে তিনি ছিলেন সিনিয়র। সামনাসামনি কেউ তেমন কিছু না বললেও এ পদে দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পিছন থেকে কেউ কেউ বলেছেন- ‘একজন মহিলা হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে তো?’ দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী রহিমা কানিজ বিশ্বাস করেন নারী কিংবা পুরুষ নয় এ ক্ষেত্রে যোগ্যতাই সব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ আমায় এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি আমি পেয়েছি। এটা আমার যোগ্যতার প্রাপ্তি। আমার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যে কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আমি সব সময় প্রস্তুত আছি।’ তিনি মনে করেন নারী পুরুষ ভেদাভেদ নেই কাজের ক্ষেত্রে। প্রত্যেকে তার যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে যাবে। তাঁর চাওয়া, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব থাকুক। রহিমা কানিজ ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় বোন শিক্ষিকা (অব:), ছোট বোন গৃহিণী। ভাইদের মধ্যে একজন ব্যবসায়ী, একজন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল পদে কর্মরত, অপরজন রাজনীতিবিদ। স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ডা. এন. এম মাসুদুর রহমান প্রফেশনাল ফিজিশিয়ান (অব:) ও কন্যা বাংলাদেশ আর্মির মেজর স্নিগ্ধা মাসুদ। অবসরে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন তিনি। প্রিয় ব্যক্তিত্ব তাঁর বাবা। দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা সাহসী রহিমা কানিজ স্বপ্ন দেখেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত উন্নত এক বাংলাদেশের, যে বাংলাদেশে নারী-পুরুষ এগিয়ে চলবেন পাশাপাশি, সমান তালে।
×