ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়িয়ে আসুন সাগরকন্যার দেশ

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২৭ জুলাই ২০১৮

 বেড়িয়ে আসুন সাগরকন্যার দেশ

চলছে বর্ষা মৌসুম। একদিকে যেমন বৃষ্টি অন্যদিকে প্রকৃতির মোহনীয় রূপ। এ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। চারদিকে পানির থৈ থৈ। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু পানি আর পানি। নদীমাতৃক দেশ আমাদের বাংলাদেশ। সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী হাওড়, বিল, চর সবই যেন পানিতে পরিপূর্ণ থাকে বর্ষা মৌসুমে। উত্তাল নদী যেমন ভয়ানক তেমনি এর সৌন্দর্য ও মনকাড়ে ভ্রমণপ্রিয়সী মানুষদের। প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব পটুয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর সঙ্গে। মেঘনা নদীর অববাহিকায় পললভূমি, কয়েকটি চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী জেলা। নদী বিধৌত এ জেলায় খাল-বিল, পুকুর, নালা, নিম্ন ভূমিগুলো মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলার নদী মোহনাগুলো ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির, সোনাচর, দশমিনায় এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার, পায়রা বন্দর, কানাই বলাই দীঘিসহ বেশ ক’টি দর্শনীয় স্থান। প্রিয় পাঠক আজ আমরা পটুয়াখালী জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা ‘সাগরকন্যা’ হিসাবেই পরিচিত। ১৮ কি. মি. দৈর্ঘ্যরে সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটা ভ্রমণপ্রিয়সীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় কারণ বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত এটি যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই এখানে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপ্রিয়সীরা ছুটে আসেন। কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরাকানদের এদেশে আগমনের ইতিহাস। ‘কুয়া’ শব্দটি এসছে ‘কুপ’ থেকে। অনেকেই ধারণা করেন যে ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরাকানরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। তখন এখানে সুপেয় জলের প্রচুর অভাব ছিল। সুপেয় পানির অভাব মেটাতে তারা প্রচুর কুয়ো বা কূপ খনন করেছিলেন, সেই থেকেই এ অঞ্চলটির নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা। কুয়াকাটার অপার সৌন্দর্য উপভোগে সবচেয়ে ভাল হলো একটি ট্রলার সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নেয়া। ভাড়া পড়বে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। তাই আর দেড়ি না করে এখনোই ঘুরে আসতে পারেন সাগর কন্যার শহর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। গঙ্গামতির চর কুয়াকাটার সবচেয়ে মায়ামায় চর হলো এই গঙ্গামতির চর। চরটি দেখার জন্য অনেকরই আগ্রহের যেন কমতি নেই। চরটিতে দুরন্ত সবুজ একটি বন আছে, এই বনে বানর, অজগরসহ শিয়ালেরও দেখা মিলতে পারে। বনে রয়েছে কমলা, বরই আর কামরাঙ্গা গাছ। এখান থেকেও একই সঙ্গে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দুটোই উপভোগ করা যায়। গঙ্গামতি চরের অপার সৌন্দর্য যদি কেউ উপভোগ করতে চান তবে খাল পার হয়ে চরের পূর্বপাড়ে চলে যান সেখানে গেলেই বুঝতে পারবেন, জীবনে অবগাহণ করার মতো মোহনীয় জায়গা আসলেই আছে। গঙ্গামতির চরে যেতে হলে আপনাকে মূল কুয়াকাটা থেকে মোটরসাইকেল, ভ্যান এবং ট্রলারে করে যাওয়া যায়। পায়রা সমুদ্রবন্দর সমুদ্রের সৌন্দর্য কে না চায় উপভোগ করতে। সেই সামুদ্রিক সৌন্দর্যকে অবলোকন করতে যেতে পারেন দেখতে পায়রা সমুদ্রবন্দরে। পায়রা সমুদ্রবন্দরটি বাংলাদেশের তৃতীয় এবং এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি সমুদ্রবন্দর। বড় বড় জাহাজ আর সমুদ্রের সৌন্দর্য দুটোই মনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে। ১৩ ই আগস্ট ২০১৬ সালে বন্দরটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এটি আমদানি ও রফতানির জন্য সরকারি একটি রুট। সোনারচর : বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকতের নাম শুনলেই যে নামটি আমাদের চোখে ভেসে উঠে তা হলো কক্সবাজার। এছাড়া কক্সবাজার ছাড়া অন্যকোন সৈকতের নাম বললে বলবে কুয়াকাটা। কিন্তু অনেকেই জানেন না এ জেলাতেই রয়েছে আমাদের দেশের আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত। যার নাম সোনারচর। পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় দেড়শ’ কি.মি. এবং গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে ৮০ কি.মি. দক্ষিণে সাগরের মাঝ বরাবরে এর অবস্থান। গত কয়েক বছর ধরেই পর্যটকদের কাছে স্থানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা উপেক্ষা করেও প্রকৃতির সৌন্দর্যে একটি বার চোখ বুলিয়ে নেয়ার জন্য সোনার চরে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন। সেখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন সাগরের বিশাল ঢেউ, জেলেদের মাছ ধরা আর বিশাল বনাঞ্চল। বিশেষ করে দশ কিলোমিটার লম্বা বিশাল সমুদ্রসৈকতে দেখা মিলবে লাল কাঁকড়ার। এই লাল কাঁকড়া দেখার জন্য অনেক পর্যটক সেখানে ছুটে আসেন। কাঁকড়াগুলো দেখে মনে হবে যেন বিন্ন এক জগত। গোটা সমুদ্র সৈকতে যেন লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে কাঁকড়ারা। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এক আঁধার যেন সোনারচর সমুদ্র সৈকত।শেষ বিকেলের রোদের আলো যখন সোনারচরের বেলে ভূমিতে পড়ে তখন মনে হয় যেন পুরো দ্বীপটিই কাঁচা সোনার প্রলেপ দেয়া। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এখানে রয়েছে বিশালাকার এক ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট। সুন্দরবনের পরই আয়োতনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল এটি। ৩০ এর দশকে জেগে ওঠা চরটিই এখন সোনারচর নামে পরিচিত। স্থানটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। সেখানে দেখতে পাবেন বুনো মহিষ। ভাগ্য ভাল হলে হরিণের পালের সঙ্গেও দেখা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া শূকর বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের আবাস ভূমিও এটি। আর এসব জিনিস দেখতে হলে পটুয়াখালী থেকে খুব সকালে বেরিয়ে পড়তে হবে। শুধু তাই নয় দেখা মিলবে সমুদ্রের উপর টিকে থাকা হাজারো জেলার জীবনসংগ্রামের দৃশ্য। তাই বেড়িয়ে আসুন সোনরচর, উপভোগ করুন সমুদ্র, বন দুটোর অপার সৌন্দর্যই। মজিদবাড়িয়া মসজিদ সাড়ে ৫শ’ বছর পূর্বে সুলতানি শাসনামলে স্থাপিত এ শাহী মসজিদটি, যা কিনা আজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা। এ মসজিদের নামানুসারেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে মজিদবাড়িয়া। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যশৈলির অন্যতম নিদর্শন এটি। লোক মুখে না যায় ইলিয়াছ শাহী বংশের এক স্বাধীন সুলতান ছিলেন রুকনদ্দিন বরবক। ১৪৪৯ থেকে ১৪৭৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন তিনি। তার আমলের অমরকীর্তি ১৪৬৫ সালে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদটি প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে। কীভাবে যাবেন পটুয়াখালী? রাজধানীর সদরঘাট থেকে লঞ্চেযোগে পৌঁছাতে পারেন পটুয়াখালী। পারাবত, সুন্দরবন, প্রিন্স অব বরিশাল, পাতার হাট নামক লঞ্চগুলো করে আপনি পৌঁছাতে পারেন পটুয়াখালী। সেখান থেকে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য সড়ক পথে রেন্ট-কার কিংবা অন্য গাড়িতে করে যেতে পারেন।
×