ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাস থেকে ফেলে ছাত্র হত্যা- এবার চালকের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৭ জুলাই ২০১৮

  বাস থেকে ফেলে ছাত্র হত্যা- এবার চালকের স্বীকারোক্তি

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ সাইদুর রহমান পায়েল (২০) হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার হানিফ পরিবহনের চালক জামাল হোসেন (৩৫) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বিকেলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুশপতি বিশ্বাস। চালক স্বীকার করেছে বাসের অটো দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পায়েল পড়ে যায়। এতে তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। মারা গেছে ভেবে পাশের ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। এর আগে প্রধান আসামি হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার মোঃ জনি (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় অনুরূপ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। তবে মামলাটির অপর আসামি চালকের ছোট ভাই হেলপার ফয়সাল হোসেন (৩০) এখনও ঘটনা স্বীকার করেনি। তাই ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ বাসটির হেলপার ফয়সালকে আদালতে পাঠিয়েছে। পরবর্তী কর্মদিবসে তার রিমান্ড শুনানি হবে বলে গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ জানান। বর্তমানে তিন আসামিকেই মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে। এদিকে সার্বিক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম। এই সময় একই বাসে থাকা পায়েলের বন্ধু মহিউদ্দিন শান্ত এবং হাকিমুর রহমান আদর উপস্থিত ছিলেন। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার দিন শনিবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার ভাটেরচরের কাছে যানজট সৃষ্টি হয়। এই সময় পায়েল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায়। কিন্তু সে আসার আগেই জ্যাম ছুটে যায় এবং গাড়ি ছেড়ে দেয়। পায়েল গাড়ির পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে। সুপারভাইজার দেখে চালককে জানায়। পরে গাড়ি থামায়। ততক্ষণে পায়েল একেবারে দরজা ঘেঁষে গাড়ি উঠার জন্য উদগ্রিব। অটো গেট খুলতেই সজোরে পায়েলের নাকে মুখে আঘাত লাগে। প্রচ- ধাক্কায় পিচঢালা পথে পড়ে যায়, সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে পায়েল। সুপারভাইজার অবস্থা দেখে দ্রুত চালককে ঘটনা জানায়। পরে চালক জামাল হোসেন ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে আসে। চালক জামাল, সুপারভাইজার মোঃ জনি ও ছোটভাই হেলপার ফয়সাল হোসেনের সঙ্গে পরামর্শ করে। গাড়িতে না তুলে রক্তাক্ত পায়েলকে জীবিত অবস্থায়ই চ্যাংদোলা করে নিয়ে সামান্য দূরের ভাটেরচর ব্রিজের ওপর থেকে খালে ফেলে দেয়। তখন ভোর প্রায় ৪টা। নির্জন সময়। যাত্রীরা ঘুমে। আর কেউ জেগে থাকলেও বুঝতে পারেনি। ভেবেছে জ্যামে বাস থেমে আছে। কিন্তু পায়েল প্রস্রাবের চাপ সইতে না পেরে জেগে যায় এবং সুপারভাইজারকে বলেই মহাসড়কের পাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায়। গজারিয়া থানার ওসি হারুন-অর-রশীদ এসব তথ্য দিয়ে আরও জানান, পায়েল জীবিত ছিল। এর স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে, পায়েল মৃত্যুর আগে ১০ থেকে ১৫ কেজি পানি খেতে খেতে ডুবে যায়। তার পেটে পানি ছিল। ময়নাতদন্ত এবং সুরহতাল রিপোর্টেও তা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া রাস্তায় যে পরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তারও বোঝা যায়-পায়েলের মুখে পিচঢালা রাস্তার পিচসহ ছোট পাথর লেগেছিল মুখে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এই নির্মম বিবরণ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তুলে ধরেছে চালক মোঃ জামাল হোসেন।
×