ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাটকীয় জয়ে ওয়ানডেতে সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের খেসারত দিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৭ জুলাই ২০১৮

 দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের খেসারত দিল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ আবারও সেই শেষ ওভারে হারের দুঃস্মৃতি যুক্ত হলো। আবারও জয়ের একেবারে কাছে গিয়ে আফসোসের হারের ক্ষত দাগ কেটে গেল। আবারও তীরে এসে তরি ডুবলো বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ রানের কষ্টের হারে সিরিজে ১-১ সমতাও এসে পড়লো। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানে যেভাবে বাংলাদেশ দল জিতেছিল তাতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও জিতবে বাংলাদেশ; সেই আত্মবিশ্বাস ছিল। জেতার একেবারে কাছাকাছিও যায় মাশরাফিবাহিনী। কিন্তু বরাবরের মতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে স্নায়ুচাপ নিতে না পেরে হারই হয় নিয়তি। শিমরন হেটমেয়ারের ১২৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৭১ রানের বেশি করতে পারেনি। তখন বাংলাদেশের জয়ের আশাই দেখা হচ্ছিল। কিন্তু ২৬৮ রানের বেশি করা যায়নি। প্রথম ওয়ানডেতে যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। জয় পাওয়ার মতো খেলতেও থাকেন তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু শেষে গিয়ে খেই হারিয়ে যায়। এনামুল হক বিজয় এদিন শুরুটা দুর্দান্ত করে ২৩ রানে আউট হয়ে যান। কিন্তু তামিম ঠিকই ৫৪ রানের ইনিংস উপহার দেন। তামিম-সাকিব মিলে আবারও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বড় জুটি গড়েন। ৯৭ রানের জুটি গড়েন। সাকিবও ৫৬ রান করেন। সিনিয়ররা নিজেদের মেলে ধরেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেন ফর্ম ফিরে পান। ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন। মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৮৭ রানের জুটি গড়ে আউট হন। তখন দলের রান ২৩২। জিততে তখন ৩০ বলে ৪০ রানের দরকার ছিল। জেতা খুবই সম্ভব ছিল। হাতে তখনও ৬ উইকেট বাকি ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক ও সাব্বির মিলে জেতার মুহূর্তেই দলকে নিয়ে যান। একটা সময় ১৩ বলে ১৪ রান লাগে। দুইজন মিলে দলকে ২৬৪ রানেও নিয়ে যান। জিততে তখন ৭ বলে ৮ রান লাগে। এমন সময় থেকেই ডুবে যায় বাংলাদেশ। মুহূর্তেই সাব্বির (১২) ও মুশফিক (৬৮) বাউন্ডারি হাঁকানোর তাড়নায় আউট হয়ে যান। এমন মুহূর্তে আসলে যেন মুশফিকই থাকেন। আর তিনি অনেক আশা জাগানোর পর আউটও হয়ে যান। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষেও এমনই হয়েছিল। মুশফিক আউট হতেই যেন দলের হারের গতিপ্রকৃতিও অন্যদিকে মোড় নিয়ে নেয়। এবারও তাই হলো। মুশফিক আউট হওয়ার পরও জয় পাওয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। ৫ বলে জিততে ৮ রানের দরকার ছিল। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো ব্যাটসম্যানরা তো তা করতেই পারতেন। কিন্তু জেসন হোল্ডারের বলগুলো যেন ব্যাটেই লাগাতে পারছিলেন না সৈকত ও মাশরাফি। ৯ ওভারে যে বোলার ৬২ রান দিয়ে বসেছিল, সেই বোলারের বলগুলো খেলতে এত কষ্ট হলো সৈকতের। চার রানের বেশি ৫ বলে নেয়াই যায়নি। তাতে করে ৩ রানে হার হয়েছে। সিরিজেও শেষ পর্যন্ত ১-১ সমতা এসে গেছে। যেখানে ম্যাচটি বাংলাদেশেরই জেতার কথা, সেখানে ম্যাচটি জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাতে করে শনিবার সেন্ট কিটসে যে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি হবে তা সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়ে গেল। যে দল জিতবে তারাই সিরিজ জিতে নেবে। জেতার সহজ সুযোগ এমনভাবে হেলায় কেন হেরে গেল বাংলাদেশ? গত কয়েক বছরে এমন হারের যন্ত্রণাতেই তো ভুগছে বাংলাদেশ। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে ২ রানের জন্য হার হয়েছে। ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালেও একই দশা হয়েছে। ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হার হয়েছে। যা এখনও স্মৃতিতে পীড়া দেয়। আবার এ বছর শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও ভারতের বিপক্ষে একই পরিস্থিতিতে হার হয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির কাছে মনে হচ্ছে ঘাবড়ে যাওয়াতে, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাওয়াতে, স্নায়ুচাপ নিতে না পারাতেই এমন হচ্ছে বারবার। তিনি বলেছেন, ‘আমরা পুরোপুরি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্যানিক হওয়ার কারণে এটা হয়েছে। বারবার ভুলটা হচ্ছে, এটা থেকে শিখতে পারছি না। এই আতঙ্ক থেকে মাথায় হয়তো কাজ করেছে বড় শট খেলে ম্যাচ শেষ করতে হবে। ওই প্যানিকে উইকেট পড়ছে, ডট বল হচ্ছে। নতুন ব্যাটসম্যান যে আসছে সেও ডট বল দিচ্ছে। যে জিনিসটা আমরা সহজে করতে পারতাম সেটি হচ্ছে, এক-দুই নিয়ে খেলা শেষ করা। আমরা সেটিও পারিনি।’ মাশরাফির কাছেও মনে হয়েছে ম্যাচটা হারার কথা না। সঙ্গে ভুল থেকে শিক্ষাও নেয়া হচ্ছে না, ‘ম্যাচটা হারার কথা নয়। গত কিছুদিনে এ ঘটনা বারবার ঘটছে। এটা অবশ্যই হতাশার। আমরা ভুল থেকে শিখছি না। সহজভাবে খেলাটা শেষ করা উচিত ছিল। যেটা আমরা পারিনি।’ মাশরাফির কাছে আসলে এত সহজ জয়ের সুযোগ পেয়েও না পারার ব্যাখ্যা অজানা। তিনি বলেছেন, ‘এটা বোঝানো কঠিন। যদি এমন হতো ১২ বলে ২০ রান দরকার, সেটিও মেনে নেয়া যেত। ১৩ বলে ১৪, কি কারণে আপনি হারলেন বলা কঠিন। সত্যি বলতে কি, একই ভুল বারবার করছি। এই পরিস্থিতিতে স্নায়ু আরও স্বাভাবিক রাখা যেত। এক এক করে নিলেই খেলাটা শেষ হয়ে যেতে পারত।’ যা হওয়ার হয়ে গেছে। তাতো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। এখন মাশরাফি শেষ ম্যাচটির দিকেই তাকিয়ে আছেন। জানিয়েছেন, ‘আমরা ভালই করছিলাম। কিন্তু শেষ দুই ওভারে আমরা তা ভালভাবে শেষ করতে পারিনি। সিনিয়ররা খুব ভাল খেলেছে। আমি ভেবেছিলাম আমরা ক্লিনিক্যাল ফিনিশ করতে পারব। কিন্তু তা হয়নি। ফিল্ডিং যেমন চেয়েছি হয়নি, বেশ কয়েকটি ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। আমরা ২৪টি ডাবল দিয়েছি। যা অপ্রত্যাশিত। আমাদের হাতে আরেকটা ম্যাচ আছে। আশাকরি সেখানে আমরা ভাল করব।’ এমন আফসোসের হার মিললেই দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা যায়। এখন সব দূর করে আফসোসের হার থেকে নিজেদের বের করে শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতে নিতে পারলেই হলো।
×