ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘স্বদেশের গলে দাও তুমি তুলে যশোমালা অক্ষয়!’

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৭ জুলাই ২০১৮

  ‘স্বদেশের গলে দাও তুমি তুলে যশোমালা অক্ষয়!’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনন্তলোকে পাড়ি জমান বাংলা ১২৬৮ সনের ২২ শ্রাবণ, ৭ আগস্ট ১৯৪১। অথচ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার সঙ্গে আজও তিনি প্রাসঙ্গিক। মানুষের ধর্ম নিবন্ধে তিনি লিখছেন, ‘মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও তার সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস। জন্তুদের বাস ভূমন্ডলে, মানুষের বাস সেখানে যাকে সে বলে তার দেশ। দেশ কেবল ভৌমিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে-জ্ঞানে, কর্মে-কর্মে। যুগ-যুগান্তরের প্রবাহিত চিন্তাধারায় প্রীতিধারায় দেশের মন ফলে শস্যে সমৃদ্ধ। বহু লোকের আত্মত্যাগে দেশের গৌরব সমুজ্জ্বল। যে-সব দেশবাসী অতীতকালের তাঁরা বস্তুত বাস করতেন ভবিষ্যতে। তাঁদের ইচ্ছার গতি কর্মের গতি ছিল আগামীকালের অভিমুখে। তাঁদের তপস্যার ভবিষ্যত আজ বর্তমান হয়েছে আমাদের মধ্যে, কিন্তু আবদ্ধ হয়নি। আবার আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করছি। সেই ভবিষ্যতকে ব্যক্তিগতরূপে আমরা ভোগ করব না।’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য রবীন্দ্রনাথকে প্রাসঙ্গিক বলা হচ্ছে এই কারণে যে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও পারিবারিক স্বার্থের চুলচেরা হিসাব-নিকাশ যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি দেখছি একটি পরিবার সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কেবল দেশের স্বার্থকেই বড় করে দেখে দেশ সেবার মহান ব্রত সাধনায় নিয়োজিত। দেশের মানুষের মুক্তির মহান ব্রত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে উন্নয়নের রোল মডেল। আর সে কারণেই এত বছর পরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক কথাই যেন আজকের বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। মানুষের ধর্ম প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও লিখেছেন, ‘ইতিহাসে দেখা যায়, মানুষের আত্মোপলব্ধি বাহির থেকে অন্তরের দিকে আপনিই গিয়েছে, যে অন্তরের দিকে তার বিশ্বজনীনতা, যেখানে বস্তুর বেড়া পেরিয়ে সে পৌঁছেছে বিশ্বমানসলোকে। যে লোকে তার বাণী, তার শ্রী, তার মুক্তি। সফলতা লাভের জন্যে সে মন্ত্রতন্ত্র ক্রিয়াকর্ম নিয়ে বাহ্য পরীক্ষায় প্রবৃত্ত হয়েছিল; অবশেষে সার্থকতা লাভের জন্য একদিন সে বললে, তপস্যা বাহ্যানুষ্ঠানে নয়, সত্যই তপস্যা;... যে মানুষ আপনার আত্মার মধ্যে অন্যের আত্মাকে ও অন্যের আত্মার মধ্যে আপনার আত্মাকে জানে সেই জানে সত্যকে।’ অর্থাৎ সত্যের কোন বিকল্প নেই। সত্যকে আশ্রয় করেই মানুষকে চলতে হয়। সত্যকে এড়িয়ে অসত্যকে আশ্রয় করে যাদের পথচলা, তাদের যাত্রাপথে একদিন বিরতি পড়বেই। কিন্তু লক্ষ্য যার স্থির, অন্তরে যার দেশমাতৃকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রত, তিনি যে কোন বাধাকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যেতে পারেন। যেমন সব বাধা তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যেমন ‘পায়ে পায়ে পাথর’ সরিয়ে, ‘সকল কাঁটা ধন্য করে’ এগিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ইসক্রা থেকে যেমন জ্বলে ওঠে মশাল, তেমনি আজকের দিনের তারুণ্যই আগামী দিনের নেতৃত্বের পথটি দেখিয়ে দিতে পারে। সজীব ওয়াজেদ জয় তো তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তো তাঁরই স্বপ্ন। ফোর জি ছাড়িয়ে দেশ যে ফাইভ জি-তে পা রাখতে যাচ্ছে, তার রূপকার তো তিনিই। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দেশকে এই খাতে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন তাঁর। দেশের বর্তমান তারুণ্যের রোল মডেল তিনি। আবার, রাজনীতির উত্তরাধিকার সূত্রেই এখন রাজনীতির মঞ্চেও তিনি। এ নিয়ে নিন্দুকদের সমালোচনারও অন্ত নেই। যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার টেনে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের রাজনীতির পারিবারিক ধারায় লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সবাই জ্ঞাত। শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ও লক্ষণীয়। ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে সুকর্নো পরিবারের অবদানও তো কম নয়। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন। তারই ধারবাহিকতায় যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অভিষেক। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার প্রাণময় উপস্থিতি যে কর্মীদের উজ্জীবিত করে, প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে তরুণদের মধ্যেÑতা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোন অনুষ্ঠানেই তিনি সপ্রতিভ, হার্দিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা শেখ হাসিনার মতো হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সহজেই। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে আসবেন- এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যোগদান এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। একটু অতীতের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কিছু কিছু প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও গ্রহণ করেন। সজীব ওয়াজেদ জয় যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিবার্য হয়ে উঠবেন, এটা যেন তাঁর বিধিলিপি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। স্বাভাবিকভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার যোগ্য উত্তরসূরি যে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সঙ্গত কারণেই তৃতীয় প্রজন্মের এই নেতৃত্বের প্রতি কেন্দ্রীভূত দেশের সিংহভাগ মানুষের দৃষ্টিও। আগ্রহ-আকর্ষণের কেন্দ্রেও তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের জš§ ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায়। উচ্চশিক্ষিত এই তরুণ যে ভবিষ্যতে যে কোন দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার পাঠ নিচ্ছেন, নেপথ্যে নিজেকে গড়ে তুলছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কৃতিও তো ঈর্ষণীয়। ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন। কাছ থেকে দেেেখ যতটুকু জানি, মাতামহ বঙ্গবন্ধু ও মা শেখ হাসিনার মতোই পরিশ্রমী তিনি। তারুণ্যের প্রাণময়তায় আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে চান নতুন দিনের একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে। যদিও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বরাবরের মতো আওয়ামী লীগ এখনও রাজনৈতিকভাবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দল। আবারও সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ফিরে আসা। কবিগুরু বলছেন, ‘মানুষও আপন অন্তরের গভীরতর চেষ্টার প্রতি লক্ষ্য করে অনুভব করেছে যে, সে শুধু ব্যক্তিগত মানুষ নয়, সে বিশ্বগত মানুষের একাত্ম।’ সজীব ওয়াজেদ জয় রবীন্দ্রনাথের সেই মানুষ, যিনি ব্যক্তিগত নন। ব্যক্তিগত সীমাকে ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের কাছে। আজ ২৭ জুলাই তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে আবারও রবীন্দ্র শরণ, আজ থেকে ১১৩ বছর আগে জগদীশচন্দ্র বসুকে যেভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেখান থেকে উদ্ধৃত করে বলি, ‘জয় হোক তব জয়!/ স্বদেশের গলে দাও তুমি তুলে/ যশোমালা তুমি অক্ষয়!/ অবারিত গতি তব জয়রথ/ ফিরে যেন আজি সকল জগৎ।/ দুঃখ দীনতা যা আছে মোদের/ তোমারে বাঁধি না রয়।’ শুভ জন্মদিন সজীব ওয়াজেদ জয়। লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকারকর্মী [email protected]
×