ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষণের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ জুলাই ২০১৮

বর্ষণের দুর্ভোগ

মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভরা বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টির ধারা যেমন শান্ত-স্নিগ্ধ প্রলেপ বুলিয়ে দেয় পাশাপাশি জনজীবনে দুর্ভোগেরও শেষ থাকে না। আষাঢ় মাস গেল প্রায়ই অনাবৃষ্টিতে। তার আগে জ্যৈষ্ঠ মাসের বৃষ্টিতে প্রকৃতি ঠিক তার নিয়মে চলেনি। আর শ্রাবণ মাসের শুরুটা তো ছিল প্রচন্ড রোদের খরতাপে জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবন কাহিল হওয়ার অবস্থায়। ফলে প্রকৃতি যথা নিয়মে যা করার তাই করল। অর্থাৎ অত্যধিক জলীয় বাষ্পের পরিণতিতে সারাদেশে নিম্নচাপের মতো প্রাকৃতিক সমন তৈরি হলো। আশঙ্কা করা হচ্ছিল ঝড় এবং অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস। মঙ্গলবার থেকে সেটাই প্রবল বেগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় বৃষ্টির ধারায় বর্ষিত হলো। সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে বৃষ্টির পানি মানেই জলাবদ্ধতা, মাত্রাতিরিক্ত যানজট সঙ্গে আরও তীব্রভাবে সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। মাত্র এক দিনের অবিশ্রান্ত শ্রাবণের ধারা যেভাবে পানির প্লাবন বইয়ে দিল সেখানে ধানম-ি, মিরপুর, হাতিরঝিল, মতিঝিলসহ ঢাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। সড়কগুলোতে জমে থাকা পানিকে মনে হচ্ছে জলস্রোত। যেখানে নৌকার সাহায্যে যাত্রীদের পার হতে হচ্ছে। এ তো গেল অথৈ পানিতে নৌকা দিয়ে পাড়ি দেয়ার অবর্ণনীয় অবস্থা। যেখানে সামান্য পানিতে যানবাহন কোনমতে চলতে পারছে যদিও অত্যন্ত ধীরগতিতে সে অবস্থা যেমন শোচনীয় একইভাবে দীর্ঘমেয়াদীও। কারণ কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয় যানবাহনের যাত্রীদের। বৃষ্টির কারণে এমনিতেই যানজট অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে, সঙ্গে যদি জলাবদ্ধতার মতো অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাহলে সেই দুরবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকে সে কথা বলারও অপেক্ষা থাকে না। বর্ষণস্নাত বাংলার নিরন্তর বৃষ্টির ধারা জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিলেও নাজেহাল করতেও এর জুড়ি নেই। তবে এখানে শুধু প্রকৃতির ওপর দায় চাপালে চলবে না, মানুষের সৃষ্ট কোন সমস্যা কতখানি প্রভাব ফেলছে জনজীবনে সেটাকেও বিবেচনায় আনা অত্যন্ত জরুরী। সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা। তার ওপর রাস্তার চারপাশে খানাখন্দ খোঁড়াও এক ধরনের সঙ্কটাপন্ন অবস্থা তৈরি করে। প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে যেভাবে রাস্তা কাটা হয়ে থাকে তাকে ঠিকঠাক সংস্কার না করাও এক ধরনের অপরাধ। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা-ই হয়ে থাকে। এ ছাড়াও নর্দমা এবং নালার পানি নিষ্কাশনেও থাকে হরেক রকম বাধাবিপত্তি। বিভিন্ন অপরিশোধ্য বর্জ্য যেখানে সেখানে জমা করে রাখাও সড়ক ব্যবস্থাকে দুর্দশার শেষ পর্যায়ে নিয়ে যায়। বিশেষ করে পলিথিনের মতো বর্জ্য নালা-নর্দমাকে যে পরিমাণ সঙ্কটে আবর্তিত করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে জলাবদ্ধতাকে কোনভাবেই আটকানো যাবে না। ফলে পথচারী এবং যাত্রী দুর্ভোগও কমানো একেবারে অসম্ভব। বর্ষাকাল বাংলার সমৃদ্ধ প্রকৃতির অবারিত দান। এই বর্ষণ যাতে গণমানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কোন ধরনের হুমকি তৈরি করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত, আধুনিক এবং জনবান্ধব করা এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। প্রত্যাশিত বর্ষা তার প্রকৃতিগত আবেদন নিয়ে বার বার ফিরে আসবে কিন্তু তাই বলে জনদুর্ভোগের মতো পরিস্থিতি বেসামাল অবস্থায় নিয়ে যাওয়াও সঙ্গত নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহৃদয় বিবেচনায় এসব সমস্যা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। সবশেষে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনলে সমস্যা অনেকটা লাঘব হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
×