ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক খাতের ছোট কারখানা বাঁচাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ জুলাই ২০১৮

পোশাক খাতের ছোট কারখানা বাঁচাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন

এম শাহজাহান ॥ আগামী ডিসেম্বর মাসের পর পোশাক খাত সংস্কারে নিয়োজিত দুই ক্রেতা জোট এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স বাংলাদেশে আর থাকছে না। তবে সংস্কার কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কারখানার সুষ্ঠু তদারকিতে একটি সেফটি মনিটরিং অর্গানাইজেশন (এসএমও) দরকার বলে মনে করছে এই দুই জোট। উদ্যোক্তারা বলছেন, পোশাক খাতের সংস্কার কাজ অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন (আরসিসি) সেল গঠন করেছে। কারখানার ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি নিরাপদ কর্মস্থল তৈরিতে আরসিসিই যথেষ্ট। তাই এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের আর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে এই দুই জোটের সহযোগিতা নিতে পারবে আরসিসি। এ কারণে আরসিসিয়ের কার্যক্রম বেগবান ও শক্তিশালী করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পোশাক শিল্পের নতুন বাজার সম্প্রসারণ, রফতানি আয় দ্বিগুণ করা, শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন ও বাস্তবায়ন, এ খাতের ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও একটি পরিপূর্ণ গার্মেন্টস পল্লী প্রতিষ্ঠা এবং গ্রীন ফ্যাক্টরির উন্নয়ন নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিজিএমইএয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (উত্তর) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। তার মতে, স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক এই অর্জনে পোশাক খাতের বড় অবদান রয়েছে। শুধু তাই নয়, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে এ শিল্পের রফতানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। একই সঙ্গে পোশাক খাতের আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তারা। পোশাক খাত সংস্কারে আরসিসিয়ের কার্যক্রম বেগবান করা হলেও দেশীয় এ সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রাখতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স গঠন করা হয়। গত পাঁচ বছর ধরে এই দুই ক্রেতাজোট বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাও কাজ করেছেন। কারখানা সংস্কারের জন্য নিয়মিত ভবন পরিদর্শন এবং যেসব দক্ষজনবল প্রয়োজন তা আমাদের রয়েছে। তাই এখন আর বিদেশী জোটের প্রয়োজন নেই। বিদেশী জোট বেশি দিন থাকাও দেশের জন্য সম্মানের নয়। সরকার এ বিষয়টি বুঝতে পেরে আরসিসি গঠন করেছে। ইতোমধ্যে আরসিসি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তবে সংস্থাটির কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে তাদের লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি জানান, শুনেছি দক্ষ জনবল বাড়ানোর কাজটিও বহুদূর এগিয়ে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরসিসিতে ৬০ দক্ষ প্রকৌশলী কাজ করছেন। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) দেবে ৪৭ প্রকৌশলী এবং এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সে কাজ করছে এ রকম ২৬ প্রকৌশলী নেয়া হয়েছে। আশা করছি, আরসিসি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তবে এটাও শেষ নয়, আরসিসি কাজ করতে গিয়ে যদি দেখে কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। এটা সমন্বয়ের বিষয়, সমস্যা হওয়ার কোন কারণ নেই। এ্যালায়েন্স গত পাঁচ বছরের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একটি সেফটি মনিটরিং অর্গানাইজেশন (এসএমও) গঠনের কথা বলছেন। এ প্রসঙ্গে এসএম মান্নান কচি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাজোট এ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি (এ্যালায়েন্স) চলতি বছরের ডিসেম্বরের পর আর বাংলাদেশে থাকছে না। এরই মধ্যে তারা তাদের কাজ গুটিয়ে ফেলতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন, সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। তিনি বলেন, মরিয়ার্টির পক্ষ থেকে সংস্কার কাজগুলো সুষ্ঠু তদারকির জন্য একটি স্বতন্ত্র, বিশ্বাসযোগ্য একটি সেফটি মনিটরিং অর্গানাইজেশনের গঠন করার কথা বলা হয়েছে। তবে আমরা সরাসরি তার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি না। আবার এসএমও এখনই গঠন করা হোক সেটাও আমরা চাই না। যেহেতু সরকারের তত্ত্বাবধানে আরসিসি গঠন করা হয়েছে। তাই আরসিসিয়ের বিকল্প কিছু হতে পারে না। এসএম মান্নান কচি জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসের পর এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স বাংলাদেশে কাজ করতে পারবে না বলে ইতোমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বরের পর আর এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্সের মেয়াদ বাড়ানো হবে না। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের ট্রেড কমিটির পক্ষ থেকে এ্যাকর্ড ও এ্যালয়েন্সের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে, এ্যাকর্ড এ্যালায়েন্সের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে এর বেশি নয়। আগামী দিনগুলোতে আরসিসির নেতৃত্বে পোশাক কারখানা তদারকি করা হবে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের রফতানি আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এসএম মান্নান কচি বলেন, এ খাত উন্নয়নে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। রূপকল্প-২১ মাথায় রেখে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তারা। এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। দেশে গ্রীন ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা হচ্ছে। শতভাগ কমপ্লায়েন্স না হলে বিজিএমইএ থেকে সদস্য পদ দেয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ৭১টি কারখানা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রীন ফ্যাক্টরির মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও ৩৫০টি কারখানা গ্রীন ফ্যাক্টরির মর্যাদা লাভের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বড় বড় কারখানাগুলোর পাশাপাশি ছোট ও এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে গার্মেন্টস পল্লী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য প্লট দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটাও ব্যয়বহুল। এই বাস্তবতায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। তিনি বলেন, ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গার্মেন্টস পল্লী আলোর মুখ দেখেনি। ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এস এম মান্নান কচি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের আস্থার জায়গাটা এখন বেশ মজবুত। এ কারণে প্রতিবেশী এ রাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ভারতে ১২৯ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ পোশাক রফতানি হয়েছে। এছাড়া নতুন বাজার অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া এবং চীনে রফতানি গ্রোথ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে দেশটির সঙ্গে এলসি কার্যক্রম আরও তরিৎ ও যুগোপযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিজিএমইএয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, শ্রমিকরাই এ শিল্পের প্রাণ। এ কারণে শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মজুরি বোর্ড যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করবে তা বাস্তবায়ন করবে বিজিএমইএ।
×