ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় দুই বাংলার বাউলদের সঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ জুলাই ২০১৮

 শিল্পকলায় দুই বাংলার বাউলদের সঙ্গীত উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাউলের গানের সুরে শুরু হলো উৎসব। গানে গানে বৃষ্টিঝরা বিকেলে উচ্চারিত হলো মানবতার মর্মবাণী। হাজার সম্প্রীতির বন্ধনকে আশ্রয়ে এক আঙ্গিনায় জড়ো হলেন দুই বাংলার বাউলসমাজ। সীমানা পেরুনো সেই ভালবাসার বারতায় তিন দিনব্যাপী বাউলসঙ্গীত উৎসবের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার। শিলকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ও ভারতের বাউলদের নিয়ে অনুষ্ঠিত উৎসবটির প্রতিপাদ্য ‘মনুষ্যত্ব যার সত্য হয় মনে, সে কি অন্য তত্ত্ব মানে’। যৌথভাবে উৎসবটির আয়োজন করেছে লালন বিশ্বসঙ্ঘ ও শিল্পকলা একাডেমি। সহযোগিতায় রয়েছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। গানের সুরের উৎসবের সূচনা হয়। একতারা হাতে চারটি ধাপে ভাগ হয়ে বসেন একাডেমির শতাধিক বাউলশিল্পী। সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘কোথায় হে দয়াল কান্ডারি, এসো হে ওপারের কান্ডারি’ ও ‘জমি করব আবাদ’। এরপর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাউল গবেষক আবদেল মান্নান। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাউলের যে হাজার বছরের সংস্কৃতির যে ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসের মূল উপাদান হচ্ছে বাউলধারার গান। বাউলের দর্শন মানবতাবাদ। বাউলদের গানে গানে মানবতাবাদের এই চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটেছে। যা আমাদের সংস্কৃতিরও মূল সুর। তিনদিনের এ বাউল উৎসব এ সময়ের জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বাউল গানের বাণী উপভোগ করার পাশাপাশি, যারা গান শুনবেন তারা উপলব্ধিও করবেন। তাহলে সমাজ ও দর্শনের ভেতরে মানবতাবাদ প্রবেশ করবে। আবদেল মান্নান বলেন, বাউল সাধনা হচ্ছে একটি আধ্যাত্মিক সাধনার চরম পর্যায়। বাউল দর্শনের প্রকাশ ঘটে মূলত সঙ্গীতের মাধ্যমে। এই বাউল দর্শন আমাদের সমাজে বেশি প্রভাব ঘটত, তাহলে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠত না। শিল্পের শহর ঢাকা কর্মসূচীর সূচনা ॥ বহুমাত্রিক পারফরমেন্স আর্টের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ‘শিল্পের শহর ঢাকা’ শীর্ষক বছরব্যাপী কর্মসূচী। ‘ঢাকা হবে শিল্পের শহর/ ঢাকা হবে বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক নগরী’ প্রতিপাদ্যে এ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। বৃহস্পতিবার সকালে একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের সামনে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও কিউরেটর মাহবুবুর রহমান। কর্মসূচীর আওতায় ১৫ জন আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্থানে নিজেদের পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতদব্য এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। বিয়েনালের মূল আসরে বাংলাদেশী ১৫ শিল্পীর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাচিত ১৪ শিল্পী তাদের পারফরমেন্স প্রদর্শন করবেন। শিল্পী তার শারীরিক উপস্থাপনার ভিত্তিতে যে শিল্প নৈপুণ্য প্রদর্শন করে সেটিই পারফরমেন্স আর্ট। পাশ্চাত্যে এর আবির্ভাব ৬০’এর দশকে। বাংলাদেশে এই শিল্পচর্চা শুরু ৮০’র দশকে। সাংগঠনিকভাবে পরবর্তীতে পারফরমেন্স আর্টের চর্চা থাকলেও দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক আসর হিসেবে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে এর অন্তর্ভুক্তকরণ বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় এক নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে। ‘কালি ও কলম’ নিয়ে প্রদর্শনী ॥ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৫ বছরে পা রেখেছে বাংলা ভাষার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’। দীর্ঘ এ পথচলায় এ পত্রিকায় প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিকদের লেখার পাশাপাশি পত্রস্থ হয়েছে নবীন ও উদীয়মান লেখকদের লেখা। সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের বিভিন্ন শাখার লেখাও ধারণ করে চলেছে ‘কালি ও কলম’। বিভিন্ন উপলক্ষে ‘কালি ও কলম’ প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা, যা এ পত্রিকার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে। ১৫ বছরের এ পথচলা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বেঙ্গল বই প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ‘কালি ও কলম’র পুরনো সংখ্যা নিয়ে প্রদর্শন ও বিক্রয়ের বিশেষ আয়োজন। চারদিনের এ প্রদর্শনীতে ছোটগল্প, কবিতা, চিত্রকলা, রবীন্দ্র-সার্ধশতজন্মবার্ষিকী, জয়নুল আবেদিন সংখ্যাসহ সকল বিশেষ সংখ্যার ওপর থাকছে ২০ শতাংশ ছাড়। এছাড়া ১০০ টাকায় পাওয়া যাবে ৩টি নিয়মিত সংখ্যা। আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য যা উন্মুক্ত থাকবে। স্মরণে লোকসঙ্গীত শিল্পী আব্বাস উদ্দীন ॥ লোকসঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদ। ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্মরণ করা এই শিল্পীকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শেখ শহীদ শিল্পীগোষ্ঠী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক অডিট এ্যান্ড কম্পোট্রোলার জেনারেল মাসুদ আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সভাপতি বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের সভাপতি হাসানুর রহমান বাচ্চ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক নূরুর রহমান পলাশ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক পর্বে আব্বাস উদ্দীনের পরিবেশিত কিছু কালজয়ী গান গেয়ে শোনান মোঃ শহীদুল্লাহ, পলাশ মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, মল্লিকা, শিল্পী ইসলাম প্রমুখ।
×