ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই চার্জশীট

কল্যাণপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের দু’বছর পূর্তি আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ জুলাই ২০১৮

 কল্যাণপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের দু’বছর  পূর্তি আজ

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের দুই বছর আজ। শীঘ্রই তদন্ত শেষে চার্জশীট দিতে পারবে বলে দাবি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি)। হলি আর্টিজানে দেশ কাঁপানো জঙ্গী হামলার পর কল্যাণপুরের এই আস্তানাটি আবিষ্কারের পর প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আস্তানায় অবস্থানকারী ১১ জঙ্গীর মধ্যে ৯ জঙ্গী নিহত হয়, নিহত জঙ্গীদের মধ্যে একজনের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি, এক জঙ্গী পালানোর সময়ে ধরা পড়ে, অপর একজন এখনও পলাতক। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানার আবিষ্কার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালিত না হলে হলি আর্টিজানের চেয়েও ভয়াবহ জঙ্গী হামলা হতে পারত। কল্যাণপুরের আস্তানাটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যাবহার করছিল নব্য জেএমবি। আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও গ্রেফতারকৃত অপর ৪ জঙ্গীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি। অভিযান শেষে আস্তানা থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের পতাকা সংবলিত জঙ্গীদের ছবিও উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যা হলি আর্টিজান হামলার দিন মধ্য রাতে আইএসের প্রোপাগান্ডা চ্যানেল আমাক এজেন্সি থেকে প্রকাশিত ছবির সঙ্গে হুবুহু সাদৃশ্য রয়েছে। কল্যাণপুরের আস্তানায় অভিযান শেষে মিরপুর থানায় দায়ের মামলায় ১১ জনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। যারা অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিত, যারা প্রশিক্ষণ দিত, যাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল, তাদের এই মামলায় অভিযুক্ত করে চার্জশীট দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে দাবি সিটিটিসির। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার পর অনেকটা দুশ্চিন্তায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের নীতি নির্ধারক মহল। এরপর থেকে সমন্বিত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক জঙ্গীবিরোধী অভিযান শুরু করার ধারাবাহিকতায় গুলশান হামলার ২৫ দিন পর ২৬ জুলাই, ’১৬ সন্ধ্যায় কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের জাহাজবাড়িতে অভিযান পরিচালনা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৯ জঙ্গী মারা যায়। এ সময় পালিয়ে যাওয়ার সময় রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামে একজনকে আটক করা হলেও ইকবাল নামে আরেক জঙ্গী পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশের দায়ের হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত ৭ আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি তদন্তকারীরা। মিরপুর থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত বাকি আসামিদের মধ্যে ইকবাল, শরীফুল ইসলাম খালিদ, মামুনুর রশীদ রিপন, মামুন, জুনায়েদ খান, বাদল ও আসাদুল কবিরাজ এখনও পলাতক। এর মধ্যে খালিদ ও রিপন বর্তমানে ভারতে পালিয়ে গেছে। আসামির তালিকায় নাম থাকা তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে ও সরোয়ার জাহান মানিক আশুলিয়ায় পৃথক দুই অভিযানে নিহত হয়েছে। জুনায়েদ খান সিরিয়ায় আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে আর ফেরেনি। বাদল, আসাদুল কবিরাজ, মামুন ও ইকবালকে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারীরা। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় গ্রেফতার হওয়া রাজীব গান্ধীসহ আরও কয়েকজনের জবানবন্দীতে আসাদুল কবিরাজ ও বাদলের নাম এসেছে। কিন্তু তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া ইকবাল ও মামুনের পরিচয় একেবারেই শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশের টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনাকালে ঘটনার সময় রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদেরও এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতারকৃত অপর জঙ্গী সদস্যরা হলো সালাউদ্দিন কামরান, আব্দুর রউফ প্রধান, মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, আহমেদ ইমতিয়াজ অমি, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, হাদীসুর রহমান সাগর, আকাশ, হাবিবুল্লাহ, কবিরুল ও মিজানুর। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রিগ্যান, সালাউদ্দিন কামরান, রউফ প্রধান ও রাশেদ ওরফে র‌্যাশ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। হাদীসুর রহমান সাগরকে গ্রেফতার দেখানোর পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর হলেও অসুস্থ থাকায় সাগরকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি।
×