ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জীবনের শ্যাষ ভোটটা আমি তোমারে দিমু’

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৭ জুলাই ২০১৮

 ‘জীবনের শ্যাষ ভোটটা আমি তোমারে দিমু’

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অবিরাম টাপুর-টুপুর বৃষ্টি ঘরের চালার টিনের ওপর পরে তৈরি হয়েছে অপূর্ব বৃষ্টি সঙ্গীত! এমনই সময় ঘরের বাহিরে কারও হাঁটার শব্দ। হঠাৎ করেই ঘরের দরজায় টুক টুক শব্দ। বরিশাল নগরীর রিফিউজি কলোনির ৭০ বছরের ছালেহা বিবি দরজা খুলতেই দেখলেন বৃষ্টি ভেজা এক শ্যামলা বর্নের যুবক তার দিকে হাস্যোজ্জল দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ছালেহা বিবি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবক ‘কেমন আছেন কাকি, শরীর কেমন? জানতে চেয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন’। কিছুটা চমকে গিয়ে ছালেহা বিবি জিজ্ঞাসা করলেন, কেডা তুমি বাবা? উত্তরে ওই যুবক বললেন, আমি আপনাদের ছেলে সাদিক। শুনেই ছালেহা বিবির চোখ ভিজে গেল। আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তাকে (সাদিক) কাছে বসান। করুণাময়ী মায়ের মতো মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, তোমার কথা অনেক হুনছি বাবা। পোস্টারে তোমারে দেখেছি। আচমকাই বৃদ্ধ ছালেহা বিবি বলে উঠলেন, একি বৃষ্টিতে তোমার জামা-কাপড় ভিজে গেছে। ঠান্ডা লাগবে। উত্তরে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আপনার দোয়া থাকলে কিছুই হবে না। ‘দোয়া’ কথাটা শুনেই এবার অভিমানের সুরে ছালেহা বিবি বলেন, ‘আর দোয়া, কত জনেইতো আইছে দোয়া নিতে। পরে আর বিছড়াইয়া (খুঁজে) পাই না। মোগো দিকে কেউ ফিররাও চায় না। বয়স হইছে আগের মতো কাজও করতে পারি না। খাইয়া না খাইয়া কোন রকম দিন কাডে।’ জবাবে বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, কাকি আমি ভোট চাইতে আসিনি। এসেছি আপনারা কেমন আছেন দেখতে। ভোট দিলেও আপনাদের পাশে আছি না দিলেও আছি। কোন দরকারে প্রয়োজন হলে সংকোচ না করে আমার কাছে আসবেন। আপনাদের জন্য আমার দরজা খোলা। সব সময় আপনাদের পাশে থাকতে চাই। এবার ছালেহা বিবির বলেন, তোমার কথা হুইন্না (শুনে) শান্তি পাইলাম বাবা। তোমার মতো এমন করে কেউ কোনদিন কয় নায়। আল্লাহ তোমার মোনের আশা পূরণ করুক, বলেই আর্শীবাদের মতো করে আবারও মাথায় হাত বোলালেন। সাদিক আব্দুল্লাহর কলোনিতে আগমনের কথাশুনে মুহূর্তের মধ্যে বৃদ্ধ ছালেহার ঘরের সামনে জড়ো হয় ওই কলোনির অসংখ্য নারী-পুরুষ। ছালেহা বিবিসহ উপস্থিত সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে সাদিক আব্দুল্লাহ যখন বৃদ্ধ ছালেহার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পা বাড়ালেন তখনই ছালেহা বিবি তাকে (সাদিক) ডেকে কাছে বসিয়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে বলেন, ‘তুমি বেঁচে থাকও বাবা, হিরন মেয়রের মতো নাম করিও, হয়ত এবারই জীবনের শ্যাষ ভোটটা আমি তোমারে দিমু বাবা’।
×