ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ চায় সব আসন জাপা ছাড়তে নারাজ, বিএনপিও আশাবাদী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৭ জুলাই ২০১৮

  আওয়ামী লীগ চায় সব আসন জাপা ছাড়তে নারাজ, বিএনপিও আশাবাদী

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। চলছে নানামুখী নির্বাচনী প্রচার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতেই নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে তুলছেন। সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলছে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ। ইতোমধ্যে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টার শোভা পাচ্ছে আনাচে-কানাচে। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান, দলীয় সভা-সমাবেশ, র‌্যালি ও ঈদের শুভেচ্ছার মাধ্যমেও মনোনয়ন প্রতাশীরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আশা ব্যক্ত করে জানানও দিচ্ছেন। তবে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই জোরেশোরেই নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দশম জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে চলছে অন্যরকম মেরুকরণ। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মহাজোটের কারণে জাতীয় পার্টিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ এই দুটি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ পাঁচটি আসনেই নিজেদের দলীয় প্রার্থী দেয়ার দাবি তুলেছে। প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্ত ভিত ও সমর্থন বৃদ্ধির কারণে তারা এবার জাতীয় পার্টিকে কোন আসন ছাড় দিতে নারাজ। যদি জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট বহাল থাকে তবে জাতীয় পার্টিও আগের মতই দুটি আসনেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকার নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যদি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া না হয় তবে পাঁচটি আসনই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবেন। অন্যদিকে বিএনপিতে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও আওয়ামী লীগ রয়েছে শক্ত অবস্থানে। আওয়াম লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় প্রার্থী হতে কেন্দ্রে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও ভোটারদের মাঝে নানানভাবে জানান দিচ্ছেন। কেউ কেউ মন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে সভা-সমাবেশ আয়োজন ছাড়াও নানা কায়দায় তৎপর রয়েছেন লবিংয়ে। সারা দেশের ৩শ’ আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসন বেশ আলোচিত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পুরাতন প্রার্থীর পাশাপাশি নতুন সম্ভাব্য প্রার্থীরাও জোরেশোরেই মাঠে নেমেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে দুটি আসন জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়েছি। আমরা আশা করি পাঁচটি আসনেই যদি যোগ্য প্রার্থী দেয়া হয় তবে পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যরা, জেলা ও উপজেলা নেতারা মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়নের আশায় কেউ যোগাযোগ করছেন লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে, আবার কেউ খালেদা জিয়ার কাছে, আবার কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। বিএনপি চাচ্ছে তাদের হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, আমাদের দলের মধ্যে কোন্দল নেই। সামনে নির্বাচন, তাই নির্বাচন আসলে মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবেই। এ প্রতিযোগিতা দলের জন্য অমঙ্গল না, কর্মী সমর্থক শক্তি বৃদ্ধি করা। সবাই তো ধানের শীষের জন্যই শক্তি বৃদ্ধি করছে। আপাত দৃষ্টিতে বাইরে থেকে কোন্দল দেখা যায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের জন্য এটা আশীর্বাদ। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি আসনই বিএনপি পেয়েছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নেয় তবে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনই বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা উপহার দিব। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) ॥ এ আসনটি রূপগঞ্জ উপজেলা এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন লাভের প্রধান দাবিদার তিনি। তবে এ আসনেও মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং রয়েছে। তাকে ঠেকাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি শক্ত গ্রুপ মাঠে নেমেছে। গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য, দেশের প্রথম সেনা প্রধান ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) কেএম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই এবং রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। বসে নেই বিএনপিও। এ দলটিতেও রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু। স্থানীয় ভোটারদের মতে, মনোনয়ন নিয়ে যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ রয়েছে তা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারলে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) ॥ এ আসনটি আড়াইহাজার উপজেলা এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। তার মেয়াদে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় এবারও নজরুল ইসলাম বাবু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন। নজরুল ইসলাম বাবু টানা দু বার এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে এ আসনেও আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে বিভেদ, দ্বন্দ্ব। আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সুবিধাভোগীরা নজরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে ও সুবিধাবঞ্চিতরা তার বিপক্ষে কাজ করছেন। এ আসনে সাবেক এমপি এমদাদুল হক ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইকবাল পারভেজ ও আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রুনাইয়ের সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেনেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন। বিএনপি থেকে দুইজনের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন- তিনবারের এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। জাতীয় পার্টি থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবসমাজের সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটনকে এক বছর আগেই জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আগেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে গেছেন। নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) ॥ এ আসনটি বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত ভিত থাকলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের কারণে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে এবার জাপাকে আসন ছেড়ে দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এলাকায় দলীয় এমপি না থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগ এখন কয়েক ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিভক্তির কারণে তৃণমূলের নেতারা এখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয়ায় জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এবারও লিয়াকত হোসেন খোকা মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন ২০০৮ সালে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল-কায়সার। তিনি ছাড়াও এই আসনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কবির ভুঁইয়া ও লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার সফিকুল ইসলামের নাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থপেডিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি দলীয় কর্মসূচী পালন করে এরই মধ্যে তিনি বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। আনোয়ারুল কবির ভুঁইয়াও ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ দিকে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রেজাউল করিম, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। এদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম রাজনীতির মাঠে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বলে খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাই বলছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সোনারগাঁও এনে সভা-সমাবেশ করে আজহারুল ইসলাম মান্নান সকলের মন আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ॥ এ আসনটি ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অংশ বিশেষ এলাকা পড়েছে। এ আসনটি ভাগ্যবান আসন হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করেন। কারণ ১৯৯১ সাল থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে দলই এ আসনটিতে বিজয়ী হয়েছেন সে দলই সরকার গঠন করেছে। ১৯৯১ সালে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করেন। ২০০১ সালে বিএনপির টিকেটে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন বিএনপিই সরকার গঠন করেন। ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদরের একাংশ ও ফতুল্লা) আসনে চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করেন। বিভিন্ন কারণে এ আসনটি দেশব্যাপী বেশ আলোচিত। নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সদস্য একেএম শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শামীম ওসমান সভা-সমাবেশ, র‌্যালিসহ নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে রেখেছেন। নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। শামীম ওসমানের সমর্থকদের দাবি বরাবরের মতো এবারও তিনি মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় শীর্ষ রয়েছেন। সাংগঠনিক দক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারাদেশের মানুষের কাছে শামীম ওসমানের বেশ পরিচিতি রয়েছে। এ আসনে শ্রমিকলীগ নেতা কাওসার আহমেদ পলাশও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ দিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, আরেক জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি শাহ আলম এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের। বিএনপির তিনজনই মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার এখনও তেমন একটা চোখে পড়েনি। নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) ॥ মর্যাদাপূর্ণ এ আসনটি নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত। আসনটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অংশ বিশেষ এলাকা পড়েছে। এ আসনেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের কারণে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। ফলে তখন এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কেএম নাসিম ওসমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একেএম নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই বিকেএমইএ’র সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই তিনি জাতীয় পার্টির দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে এ আসনটি ছাড় দেয়া হলেও এবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জোরেশোরেই শহর ও বন্দর এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ আসনে আওয়াম লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোঃ বাদল, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খোকন সাহা, শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরজু রহমান ভুঁইয়া। তবে সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম বর্তমানে দলের কোন পদে না থাকলেও আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। অথবা স্বতন্ত্র থেকেও প্রার্থী হতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এ্যাডভোকেট আবুল কালাম বিএনপির টিকেটে তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাখাওয়াত হোসেন খান ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর কাজে পরাজিত হন।
×