ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মান মিডফিল্ডারের পাশে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট

ওজিলের অবসরে বিস্মিত জার্মান কোচ জোয়াকিম লো

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৬ জুলাই ২০১৮

ওজিলের অবসরে বিস্মিত জার্মান কোচ জোয়াকিম লো

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন মেসুত ওজিল। গত রবিবার জার্মান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফবি) বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও জাতিগত বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে জাতীয় দলের জার্সিতে আর প্রতিনিধিত্ব না করার ঘোষণা দেন আর্সেনালের এই তারকা ফুটবলার। তবে ২৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের অবসরের সিদ্ধান্ত রীতিমতো বিস্ময় হয়ে এসেছে জার্মানি জাতীয় দলের কোচ জোয়াকিম লোর কাছে। এমন কিছুর জন্য নাকি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। যে কারণেই ওজিলের অবসর ঘোষণা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে লো’র। এ বিষয়ে লো নিজে কোন বিবৃতি না দিলেও তার প্রতিনিধি হারুন আর্সলান জানিয়েছেন, ‘ওজিলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতাম না আমরা। লো ভীষণ বিস্মিত হয়েছেন।’ ২০১৪ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। দীর্ঘ দুইযুগ পর জার্মানিকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত রাশিয়া বিশ্বকাপে হতাশ করে জার্মানি। গ্রুপপর্বের বাধাই অতিক্রম করতে পারেনি তারা। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৮০ বছরের মধ্যে প্রথম ঘটনা। বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে জার্মানির বিদায়ের পর সমর্থকদের একটি অংশের কাছ থেকে ক্রমাগত বর্ণবাদী গালি শুনতে হচ্ছিল ওজিলকে। এ সময় দেশটির ফেডারেশন তার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং তুর্কি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডারকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়ার প্রচারণায় ইন্ধন জুগায়! আর তা সহ্য করতে না পেরেই শেষ পর্যন্ত অবসরের সিদ্ধান্ত নেন মেসুত ওজিল। তবে ওজিলের তোলা বর্ণবাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ডিএফবি। শুধু তাই নয়, তার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছে জার্মান ফুটবল সংস্থা। এক বিবৃতিতে ডিএফবি জানিয়েছে, জাতীয় দল থেকে ওজিলের অবসর নেয়াটা দুঃখজনক। তবে বর্ণবৈষম্যের যে অভিযোগ ওজিল করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ডিএফবি কখনওই বর্ণবৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। সম্প্রীতি রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বছরের পর বছর ধরে ডিএফবি সেটাই করে চলেছে। তা সত্ত্বেও ওজিলের যদি মনে হয় তাকে রক্ষা করা হয়নি বর্ণবিদ্বেষ থেকে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। মূল ঘটনার সূত্রপাত বিশ্বকাপের আগে। লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের সঙ্গে ওজিলের সাক্ষাত এবং একসঙ্গে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে। এরপর তুরস্ক ও জার্মানির কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে বিপদে পড়েন আর্সেনালের এই তারকা ফুটবলার। ওজিলের পূর্বপুরুষরা তুরস্কের। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আরও অনেকের মতো তুরস্ক থেকে ওজিলের পরিবারও চলে এসেছিল জার্মানিতে জীবিকা নির্বাহের সন্ধানে। গেলসেনকির্শেনে এসে ওঠেন তার পিতামহরা। সেখানেই জন্ম ওজিলের। তবে কখনই তুরস্কের সঙ্গে তার শেকড়কে ভোলেননি তিনি। ওজিল এক সাক্ষাতকারে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এটাও বলেন যে, তার দুটি হৃদয়, একটি জার্মানির অন্যটি তুরস্কের। এদিকে ওজিলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তিনি জানান, মেসুত ওজিলের সঙ্গে যে বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে তা মেনে নেয়া হবে না। কোন খেলোয়াড়ের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করা হলে তার জবাব দেয়া হবে। প্রত্যেক ফুটবলারেরই সবধরনের বর্ণবাদ, বৈষম্য ও ঘৃণা-দ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এরদোগান বলেন, আমি গতরাতে ওজিলের সঙ্গে কথা বলেছি। তার আচরণ, ব্যবহার ও বক্তব্য যৌক্তিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সঠিক ও গ্রহণযোগ্য। একজন তরুণ খেলোয়াড় জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের জন্য সবকিছু করেছে। অথচ সে ধর্মের কারণে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছে। তাদের এ কেমন মানসিকতা যে আমার সঙ্গে ছবি তোলার কারণে এমন বর্ণবাদী আচরণ! মেসুত ওজিল অবসরগ্রহণের পর বেশ কয়েকজন জার্মান ফুটবলার তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ আবার তার বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। জার্মানির সাবেক অধিনায়ক লোথার ম্যাথিউস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত ১৮ মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত জাতীয় দল তার কাছ থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পায়নি। যে কারণেই তার অবসরে এখন তরুণ ফুটবলারদের খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন তারচেয়ে ভাল খেলোয়াড়ও দলে আসতে পারে।’ জার্মান বুন্দেসলিগার জায়ান্ট ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হোয়েনেসও ওজিলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন অজুহাত দিচ্ছে ওজিল।’
×