ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান হামলায় চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৬ জুলাই ২০১৮

গুলশান হামলায় চার্জশীট

দুই বছর ২২ দিন তদন্ত শেষে গুলশানের হলি আর্টজানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চার্জশীট আদালতে জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। হামলার ঘটনায় যাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদেরই এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার মতে, হলি আর্টিজানে হামলাটি ছিল পুরোপুরিভাবেই ‘নব্য জেএমবি’র কাজ। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে অতর্কিত হামলা চালায় পাঁচ জঙ্গী। তারা ভেতরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী সবাইকে জিম্মি করে এবং গুলি, ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ১৭ বিদেশী ও ৩ বাংলাদেশীকে। সেখানে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন প্রত্যুষে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গীকে হত্যা করে উদ্ধার করা হয় ৩২ নারী, পুরুষ ও শিশুকে। এই জঙ্গী হামলার ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংস্থা আইএস এই ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিলেও পুলিশী তদন্তে সেটা শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। হলি আর্টিজানে হামলার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করাসহ বিশ্বের বুকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা। জঙ্গীগোষ্ঠীর সেই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। সঙ্গত কারণেই আমরা আশা করতে পারি যে, আদালতে চার্জশীট দাখিলের পর যথাসম্ভব এর বিচারকাজ সম্পন্ন হবে এবং জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। এই হত্যাকা-ের আগে-পরে দেশে আরও হত্যাকা- ও হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর সঙ্গে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গীরা অসংগঠিত ও দুর্বল হয়ে এলেও নব্য জেএমবি নামে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলা ও নাশকতার পাঁয়তারা করছে। দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি এবং জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির যোগাযোগ এবং মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সে সব কখনই প্রমাণ হয়নি। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎস এবং উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী এবং সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সেক্ষেত্রে তাদের মোকাবেলা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী, কুমিল্লা ও শাহজালাল ক্যাম্পাসে জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়।
×