ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৬ জুলাই ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্যসেবা

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৭ বছর পার হয়ে গেল। যাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্যোদয় হলো তারা শুধু জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানই নন অহঙ্কারও বটে। মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশকে বাঁচিয়েছেন তাদের শুধুমাত্র স্মরণের আবরণে বেঁধে রাখলে হবে না, দেশের প্রতি গভীর মমতা আর আদর্শিক বোধে প্রতিনিয়তই সম্মান, মর্যাদা আর দায়বদ্ধতায় পথ নির্দেশকের ভূমিকায়ও দাঁড় করাতে হবে। সে দৃঢ়চেতনায় বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও দায়িত্ব আর কর্তব্যনিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। রক্ত প্লাবনে ভেসে যাওয়া অগ্নিঝরা দিনগুলোর স্মৃতিময় অনুভব নিয়ে যারা আজও বেঁচে আছেন তারাই দেশের সত্যিকারের অভিভাবক। ১৯৭১ সালের উদীয়মান কিশোর কিংবা পরিপূর্ণ যুবক নয়তবা মধ্যবয়স্ক বীর বাঙালী যারা সেদিন অস্ত্র হাতে, গেরিলা যুদ্ধে, প্রাণের মায়াকে তোয়াক্কা না করে দেশের জন্য অকাতরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের মধ্যে ৩০ লাখেরই তো জীবন বিপন্ন হয়েছিল। বাকিরা এখনও স্বাধীন জন্মভূমিতে কোনভাবে দিন যাপন করে যাচ্ছে। ২১ বছর তাদের কোন খোঁজ ছিল না, অসহায়, পঙ্গু, বিকলাঙ্গ মুক্তিযোদ্ধাদের কিভাবে জীবন কেটেছে তার সন্ধানও ছিল প্রায় অজানা। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পরই জাতির গৌরব মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে বিশেষ উদ্যোগ গৃহীত হতে থাকে। প্রথম পাঁচ বছরে (১৯৯৬-২০০১) সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব না হলেও ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত এই বীর সন্তানদের প্রাপ্য সম্মান এবং প্রাপ্তি দিতে সরকার বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি। সেখানে তাদের জন্য ভাতা বরাদ্দ থেকে শুরু করে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থাও অনুমোদন করা হয়। সেইভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করলেও বাজেটের স্বল্পতার কারণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই চিকিৎসাসেবাকে আরও ত্বরান্বিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে উভয় মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এই প্রকল্পের অধীনে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা থেকে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানও সম্ভব হবে। উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় ও বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতালে সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রদান প্রকল্পে অর্থেরও যোগান দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত আমলে অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সমস্ত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দুর্বিপাকে পড়া অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে অনাহারে, অর্ধাহারে এমনকি ভিক্ষাবৃত্তি করেও জীবন চালাতে হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর খবরও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। জাতির বীর সেনানীদের এমন করুণ, বেহাল দশা থেকে মুক্তির বারতা পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করে সমাজে তাদের সসম্মানে প্রতিষ্ঠা করা, মাসিক ভাতা বরাদ্দ, চিকিৎসাসেবা প্রদান থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। পূর্বের নির্ধারিত স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করে চিকিৎসাকে সময়োপযোগী এবং আরও আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে বর্তমান সরকার জাতির এসব শ্রেষ্ঠ সন্তানের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আজ বয়স এবং শারীরিক দৌর্বল্যে আক্রান্ত। তাদের যথাযথ এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাসেবা যেমন জরুরী একইভাবে অর্থ সংস্থানও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনা খরচে অথবা স্বল্পমূল্যে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পেতে এখন আর কোন অসুবিধাই থাকল না। আমাদের স্বাধীনতা এখন সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। এই মহতী পর্বের প্রাক্কালে এমন ধরনের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বীর সন্তানদের অনন্য উচ্চতায় অভিষিক্ত করল।
×