ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফারাজ আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল শুরু

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৫ জুলাই ২০১৮

ফারাজ আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট খুব জমজমাট হতো। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। এখন বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টগুলোয় জৌলুস নেই। আসলে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প-বিস্তর খেলাধুলা হলেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে বলতে গেলে পিছিয়ে। মাঠের অভাবে ইচ্ছা থাকলেও তারা খেলতে পারে না। নিজের স্পোর্টিং ট্যালেন্ট দেখাতে পারে না। তাদের বিষয়টি মাথায় রেখেই গত বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করেছে শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করা সাবেক কৃতী ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাব। টুর্নামেন্টের নাম ফারাজ গোল্ডকাপ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। পৃষ্ঠপোষকতায় শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। এবারের টুর্নামেন্টে ৮টি গ্রুপে মোট ২০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় দল অংশ নিচ্ছে (প্রতিটি ম্যাচ হবে ৭০ মিনিটের)। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে চারটায় উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউ ল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান অতিথি হিসেবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। আরও উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও ক্রীড়া সচিব আসাদুল ইসলাম, ফারাজের বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আক্কাস উদ্দিন মোল্লা। উল্লেখ্য, বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পূর্বে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে সকাল আটটায় প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৯টায় দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় ও অতীশ দ্বীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল প্রাইজমানি হিসেবে পাবে দুই লাখ টাকা ও ট্রফি। রানার্সআপ দল পাবে এক লাখ টাকা ও ট্রফি। এছাড়া সেরা খেলোয়াড়, সেরা গোলরক্ষক ও সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। টুর্নামেন্টের বাইলজ মোতাবেক মূল গোল্ডকাপটি চ্যাম্পিয়ন দলকে দেয়া হবে না। দেয়া হবে এর রেপ্লিকা ট্রফি। কোন দল যদি তিনবার এই ট্রফি জেতে তাহলে তারা চিরতরে এই রেপ্লিকা ট্রফির মালিক হতে পারবে। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ২০টি দল হলো : স্টেট, প্রেসিডেন্সি, আইইউবি, ড্যাফোডিল, বিইউবিটি বাংলাদেশ, শান্তা মারিয়াম, অতীশ দ্বীপঙ্কর, উত্তরা, সাউদার্ন, ইস্ট ওয়েস্ট, সিটি, নর্দান, গণ, প্রাইম, ব্র্যাক, আইইউবিএটি, ফারইস্ট, ইউল্যাব ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে নৃশংস জঙ্গী হামলায় নিহত হন তরুণ মেধাবী ছাত্র ফারাজ আইয়াজ হোসেন। হামলাকারীরা তাকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফারাজ বিপদের মুখে বন্ধুদের ছেড়ে একা চলে আসতে রাজি হননি। তাই আর ফেরা হয়নি তার। বন্ধুদের সঙ্গে তরুণ ফারাজ নিজের জীবন বিসর্জন দেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ফারাজ সাহসিকতার এক বিরাট উদাহরণ। ফারাজের এই আত্মত্যাগকে তরুণ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সুস্থ মানসিক বিকাশ ও বিনোদনের লক্ষ্যে দ্বিতীয়বারের মতো মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ফারাজ গোল্ডকাপ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। আগেরবার অবশ্য টুর্নামেন্টের নাম ছিল আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট (ফারাজ চ্যালেঞ্জ কাপ)। সেবারও ২০টি ইউনিভার্সিটি নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল টুর্নামেন্টটি। প্রথম আসরের শিরোপা জিতেছিল গ্রীন ইউনিভার্সিটি। কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা ফারইস্ট ইউনিভার্সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। গ্রীন ইউনিভার্সিটি। টুর্নামেন্ট উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টাওয়ারের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ ও ক্রেস্ট প্রদানের পাশাপাশি টুর্নামেন্টের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন, অফিসিয়াল লোগো উন্মোচন, প্রথম টুর্নামেন্টের উল্লেখযোগ্য মুহূর্তের ওপর প্রেজেন্টেশন ও আয়োজিত টুর্নামেন্ট সম্পর্কে ভিডিও বার্তায় ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক তারকা ফুটবলারদের শুভেচ্ছাবার্তা প্রচার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ। আরও উপস্থিত ছিলেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. শহিদুল ইসলাম এবং উপ-সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ জুম্মা, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফুটবলার গোলাম সরোয়ার টিপু, বাফুফের সহসভাপতি ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত খেলোয়াড় বাদল রায়, প্রয়াত ফারাজের বড় ভাই যারেফ আয়াত হোসেন, টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু, টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ক্রীড়া সংগঠক ফজলুর রহমান বাবুল, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও সংগঠক কামরুন নাহার ডানা, তারকা ফুটবলার মোহাম্মদ সুলতান, খন্দকার রকিবুল ইসলাম, শামসুজ্জামান ইউসুফ, পল্লব কারদার ও নাসিম আহসান হিরু প্রমুখ। বাদল রায় বলেন, ‘এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য সোনালী অতীত ক্লাবকে সাধুবাদ জানাই। বাফুফে এই টুর্নামেন্টের দিকে নজর রাখবে। কোচরা ভাল ফুটবলার পেলে তাদের জাতীয় দলে নেয়ার চেষ্টা করবেন। যদি এমন পাঁচজন ফুটবলারও এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে তাহলে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন সার্থক হবে।’ আসলাম বলেন, ‘এই আসর আয়োজনের মাধ্যমে যদি অন্তত একজন ফুটবলারও জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পায় তাহলে মনে করব আমরা সফল হয়েছি।’
×