ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হুমকির মুখে গ্রামবাসী

টাঙ্গাইলে অবাধে বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৫ জুলাই ২০১৮

টাঙ্গাইলে অবাধে বালু উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৪ জুলাই ॥ প্রশাসন থেকে বারবার ড্রেজার ধ্বংস, শাস্তি ও জরিমানা করা সত্ত্বেও থেমে নেই বালু খেকোরা। সদর ও দেলদুয়ার উপজেলায় চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। দীর্ঘদিন ধরে এই বালু উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে নদীর পাড় ভাঙ্গন। একদিকে ড্রেজার অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিলীন হতে চলেছে আশপাশের এলাকার বাড়ি-ঘর ও আবাদি জমি। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষেরা। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী একটি মহল স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধভাবে ধলেশ্বরী ও এলেংজানী নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে এলাকাবাসী বারবার বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলেও এখনও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। এলাকার কেউ এ বিষয়ে কথা বললে তাকেও বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়। ফলে এলাকাবাসী কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতি বছর বন্যায় প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ছে। এছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে প্রশাসন বারবার অবৈধভাবে নদী থেকে ড্রেজার ধ্বংস করলেও পুনরায় চালু হচ্ছে ওইসব বালুর ঘাট। সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীতে এখনও চলছে বালু উত্তোলন। কিছু দিন আগেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ৭টি ড্রেজার ধ্বংস করলেও আবারো চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। অপরদিকে সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের এলেংজানি নদীর ওপর চলছে প্রভাবশালী মহলের একটি ড্রেজার। এলাকাবাসী জানায়, নুরু মিয়া ও উজ্জল মিয়া এ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তার পাশেই দেলদুয়ার উপজেলার দেউলি ইউনিয়নের মাইঠান এলাকার জাহাঙ্গীর মাতব্বরের আরেকটি ড্রেজার। অপরদিকে দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের শাহধারীপাড়ার এলেংজানি নদীতে চলছে দুটি ড্রেজার। আর এসব জায়গা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছে বালু খেকোরা। অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। তার ওপর ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। যে কোন সময় দেখা দিতে পারে ব্যাপক ভাঙ্গন। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। এলাকাবাসীরা বলেন আমরা প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি। আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারি না। যেভাবে ড্রেজার চালানো হচ্ছে তাতে মনে হয় এ বছর আর বাড়ি-ঘর থাকব না। প্রশাসনের কাছে বার বার বলার পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। পুলিশ আসে একদিন বন্ধ থাকে, তারপর আবার চালু হয়। ড্রেজার শ্রমিকরা বলেন, ড্রেজার কয়েকদিন বন্ধ ছিল। পরে ড্রেজার মালিকের নির্দেশে গত এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর নদীর পানি বাড়ছে, কিছুদিন পর তো আর বালু তোলা যাবে না। স্থানীয় আসু মিয়া, ফজর মোল্লা, সিদ্দিক ও আমিনুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ নদীতে বালু উত্তোলন করছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন। আর আমরা গরিব মানুষ কিছু বলতে পারি না। এলাকার মানুষ তাদের দেখে ভয় পায়। আর এ ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে আমাদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। গত বছর বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এ বছরও আবার নদীতে পানি এসেছে। এখনও যদি ড্রেজার বন্ধ না করা যায় তাহলে আমাদের রাস্তায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে। আমরা চাই সরকার এই ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। ড্রেজার মালিক নুরু মিয়া বলেন, আমি সরকারী কাজে বালু উত্তোলন করছি। তবে আমার কাছে কোন লিখিত কাগজ নেই। এ বিষয়ে কিছু করার দরকার নেই। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান বলেন, যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×