ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৫ জুলাই ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরুণ সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন সম্মেলন কক্ষে ‘মাদকাসক্তি ও তরুণ সমাজ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতর এবং মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক অধ্যাপক মেহজাবীন হক। অধ্যাপক আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মাদকাসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয় মাদকমুক্ত রাখার জন্য এর কর্মকাণ্ড যতই বিস্তৃত করা যাবে ততই আমাদের মঙ্গল। এছাড়া মাদক ও ধূমপানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু স্থান ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যেন মন্দ না হয় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তারাই বহিরাগত যারা মাদক সেবন করে, মাস্তান, জঙ্গী, চরম এবং উগ্র মতাদর্শী, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের পরিপন্থী, জাতির জনককে নিয়ে কটূক্তি করে। কোনক্রমেই এই ধরনের মানুষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাগত জানাবে না। তাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যারা মাদক ব্যবসা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ক্যাম্পাসে মাদক বহন করবে, বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদক ছড়িয়ে দেবে তাদের ক্যাম্পাসে সহ্য করা হবে না। মাদক ব্যবসায়ীদের জন্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অভয়ারণ্য’ হতে দেয়া হবে না। উপাচার্য বলেন, প্রভোস্ট কমিটি ৫ জুলাই যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সে মহৎ উদ্দেশ্যগুলোর বিপরীতে ‘কথার মারপ্যাঁচ’ দিয়ে অন্য বক্তব্যকে তুলে এনে বড় আকারের একটি বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। আসল বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে, গৌণ বিষয়কে সামনে তুলে নিয়ে এসে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রবেশ’ শব্দটি কোথাও উল্লেখ করা নেই। কিন্তু ‘প্রবেশ’ শব্দ নিয়ে আসা হলো যা একেবারে মনগড়া কথা। আমাদের সিদ্ধান্তের কোথাও ‘প্রবেশ নিষেধ’ বলা নেই। যেটা বলা হয়েছে সেটি হলো ‘বহিরাগত’। কেউ কথার ছলচাতুরী করে আসল বিষয়কে পাশ কাটাবেন না যা বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করে শিক্ষার্থীদের সাধারণ জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। যারা এ ধরনের কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মানস’র সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। তবে আরও বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশ পাচার হচ্ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ লাখ। কোন কোন সংস্থার মতে ৭০ লাখ, নব্বইয়ের দশকে যার পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ১০ লাখেরও কম এবং মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের ৪৩ শতাংশ বেকার। ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল তাদের অধিকাংশই এখন ইয়াবা আসক্ত। সম্প্রতি ইয়াবা আমাদের দেশের তরুণ যুবসমাজকে গ্রাস করেছে। প্রতিদিন যেমন ইয়াবা ধরা হচ্ছে তেমনি প্রতিদিন হাজার হাজার পিস ইয়াবা তরুণরা গ্রহণ করছে। অন্যদিকে সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। আরও একটি ভয়ঙ্কর চিত্র হচ্ছে, সারাদেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল। যার ফলে এসব ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্তরা নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বলেন, ‘মাদকাসক্তি একটি সামাজিক সমস্যা, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি, সেই সঙ্গে য্ক্তু হয়েছে জঙ্গী তৎপরতা। এসবকে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই নির্মূল করতে হবে। দিন দিন ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সর্বাপেক্ষা কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা, মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, বেকারদের কর্মসংস্থান ও স্কুল-কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
×