ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিওতে ডিএসইর আপত্তি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৫ জুলাই ২০১৮

কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিওতে ডিএসইর আপত্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রসপেক্টাসে উত্থান দেখালেও বিক্রয় ও বিক্রয়জনিত পণ্যের ব্যয় হিসাবের প্রমাণ দেখাতে পারেনি কাট্টালি টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ। যাতে কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ আপত্তি তুলেছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করে। তবে বিএসইসি অজ্ঞাত কারণে তা পাস কাটিয়ে কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। কাট্টালি টেক্সটাইলের অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা আর্থিক হিসাবের তথ্য ডিএসইর লিস্টিং এ্যাফেয়ার্স ও কর্পোরেট গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কমপ্লায়েন্স বিভাগের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। যা পর্যবেক্ষণ শেষে কাট্টালি টেক্সটাইল আইপিও অনুমোদন পাওয়ার যোগ্য নয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছে ডিএসইর রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্স কমিটি (আরএসি)। আর আরএসির এই অভিমত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদেও অনুমোদিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে অনেক কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) এক দুই বছর আগে থেকে কৃত্রিমভাবে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়। এই ধরনের প্রবণতা বন্ধে ৫ থেকে ১০ বছরের আর্থিক হিসাব পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে ডিএসইর মতামত উপেক্ষা না করে গুরুত্ব দেয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, গত ৫-৭ বছরে কিছু নিম্নমানের কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন করা হয়েছে। এসব কোম্পানি বাজারের উন্নয়নে কোন ভূমিকা তো রাখেইনি বরং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাতে মনে হচ্ছে আইপিও অনুমোদনের আগে ভালভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, এখন কোম্পানিগুলো ইস্যু ম্যানেজারদের সহযোগিতায় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কোম্পানিতে কিছু না থাকলেও তারা সুন্দর করে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এমন কোম্পানির আইপিও অনুমোদনে বিএসইসির সতর্ক হওয়া দরকার। তবে কোম্পানিটির সচিব ফজুলল হক জানান, বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের জবাব ঠিক মতো জমা দেয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতেই আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কাট্টালি টেক্সটাইলের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিক্রয় ৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৫৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা হয়েছে বলে প্রসপেক্টাসে তথ্য প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে বিক্রয় বেড়েছে ২২.৪২ শতাংশ। এই বিক্রয়ের প্রমাণ হিসেবে ডিএসইর পক্ষ থেকে কোম্পানিটির কাছে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এলসি ডকুমেন্টস, ভ্যাট ও টেক্সের ডকুমেন্টস চাওয়া হয়। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রমাণ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে বলে ডিএসইর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে বিক্রয়জনিত পণ্যের ব্যয় আগের অর্থবছরের ৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা থেকে ২২ শতাংশ বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সপক্ষেও প্রমাণ হিসেবে যথাযথ ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এলসি ডকুমেন্টস, ভ্যাট ও টেক্সের ডকুমেন্টস প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। এ দিকে প্রসপেক্টাসে গ্রাহক ও অন্যদের কাছ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সংগ্রহ দেখানো হয়েছে। আর সাপ্লায়ার, কর্মী ও অন্যান্য দেনা বাবদ ৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রদান দেখানো হয়েছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিল ভাউচার এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রমাণাদি চাইলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
×