ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবেন রায়

বিএনপি নিজেরাই কী নিজেদের ধ্বংস করতে চাচ্ছে?

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৫ জুলাই ২০১৮

বিএনপি নিজেরাই কী নিজেদের ধ্বংস করতে চাচ্ছে?

বিচারিক রায়ে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তেমনি বিভিন্ন দেশে অনেক রাষ্ট্রপ্রধানদের, বিশেষত এশিয়ার দেশগুলোতে কারাদণ্ড হয়েছে বা হচ্ছে। এমনকি যে দেশটি সন্ত্রাসের জন্মভূমি, যে দেশটি কোনভাবেই সভ্য-ভব্য নয়, সেখানেও একজন রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালে টাকা পয়সা লুটপাটের জন্য পদচ্যুত হন এবং বিচারিক রায়ে প্রায় এক দশক কারাদণ্ডিত হয়েছে। কারাদ-িত হয়েছে থাইল্যান্ডের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান। ইতোমধ্যে জেলে ঢুকেছেন মালয়েশিয়ার সদ্য হেরে যাওয়া রাষ্ট্রপ্রধান। এখন বিচারের অপেক্ষায়। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বিচার ব্যবস্থাই হলো সত্য প্রতিষ্ঠার শেষ চাবিকাঠি। তবে বিচার ব্যবস্থাও শক্তির কাছে নতি স্বীকার করে রায় দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জনগণ গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশে ভোট বিপ্লব করতে পারে। বিএনপি প্রধানের টাকার প্রয়োজনে টাকা আত্মসাত করেছে সে কথা কেউ বলছে না। হাওয়া ভবন থাকতে অরফানেজের টাকা আত্মসাত করেছে- এটা হয়নি অবশ্যই। তবে আইনী মারপ্যাঁচে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই রায় হয়েছে। ৫ বছরের কারাদ- হয়েছে। জনগণও বুঝতে পেরেছে। তাই তেমন কিছুই হয়নি। তেমন কোন প্রটেস্টও হয়নি। কেননা এই রায় তো একদিনে দেয়া হয়নি। সাত সাতটি বছর চলতে চলতে তবেই হয়েছে। বিএনপিও অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল- এবার শক্ত জালেই ধরা পড়েছে রুই, কাতলা। তাছাড়া একটা বিষয় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে দল হিসেবে সন্ত্রাসী কারা? সেটাও বিচারেই প্রমাণিত হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা নেত্রীদের বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন এটা তো রাজনীতির খেলা হতে পারে না। অবাক হলেও সত্যি, বিএনপির বর্তমান নীতি-নির্ধারকরা এবং বুদ্ধিজীবীরা এখনও বলে যাচ্ছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে তারা আগামী নির্বাচন করবেন না। অনেক সময় একটা স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বিরোধীদল নির্বাচনে আসে। অনেক ক্ষেত্রে জয়লাভও করে। বিএনপি যদি বলত, ‘আপনারা আমাদের ভোট দিয়ে জয়ী হতে সাহায্য করুন, আমরা খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে আবার প্রধানমন্ত্রী বানাব।’ তা না করে উনারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। টাকা আত্মসাতের জন্য আরও হাজারো লোকজন কারাগারে, তাহলে তারা দোষ করল কী? আর কেনই বা সরকার ক্ষমা করে মুক্তি দেবে? এখানটায় হলো পার্থক্য, একদল বোমা মেরে সুরাহা চায়, আরেক দল আইনের মারপ্যাঁচে বেঁধে রাখতে চায়। একটা বিচার হয়েছে। বিচারের রায় সঠিক কিংবা বেঠিক- এটা তো আর ঊনসত্তরের বাংলাদেশ নয় জেলের তালা ভাঙ্গব, শেখ মুজিবকে বের করে আনব। আবার অবাক হলেও সত্যি, আওয়ামী লীগ সময়ে যে দুর্নীতি ও অপকর্ম হয়েছে তা সাম্প্রতিক নয়। তার চেয়েও বড় কথা কিছু না কিছু দুর্নীতির বিচারিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং একেবারে হাওয়া ভবন পর্যন্ত পৌঁছেনি। কেমন টাকা পাচার হলে একটি পরিবার প্রায় এক দশক ধরে চাকরি-বাকরি ছাড়া লন্ডন শহরে বসবাস করছে? একেই হয়ত বলা হয় আখের গুছানো। আর যাই হোক, রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি হিসাবে গত এক দশক বিএনপি তেমন কোন ফলপ্রসূ রূপরেখা দিতে পারেনি। সবই কেমন যেন হঠকারিতামূলক। অন্যদিকে, বিজ্ঞ এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। এ যেন একটা বিশাল বিপ্লব। উন্নয়নের বিপ্লব। সুনামের বিপ্লব। ইতিহাস গড়ার বিপ্লব। দেশে-বিদেশে সমানভাবে খ্যাত একজন সুনিপুণ দেশ গড়ার কারিগর শেখ হাসিনা। বিএনপি তাই হতবিহ্বল। পেট্টোলবোমার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত আর কাজে আসবে না। বিচারিক রায়কে অগ্রাহ্য করেও কোন ফল হবে না। আর বিএনপি নির্বাচনে এলো কি এলো না কিছুই যায় আসে না এই সরকারের। গত পাঁচ বছরই তার প্রমাণ। নির্বাচনে না এলে আরও পাঁচ বছরে বিএনপির অস্তিত্বই থাকবে না। তাছাড়া দুনিয়া পাল্টে যাচ্ছে। এখন আর কোন বড় ভাই নাই যিনি ইন্ধন যোগাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য। কোন্ দেশ এখন বিএনপিকে মদদ দেবে? সবই এখন শুধু স্টেটমেন্টের উপর। আর বিরূপ স্টেটমেন্ট, টুইট এখন নিত্যকার ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোন স্টেটমেন্ট এখন ধর্তব্যেই আসে না বিশ্বব্যাপী। পাঠকবৃন্দ, আমি কোন পন্থী নই। ভাল কিছু দেখলে ভাললাগে। এই যে এতকিছু, এত হয়রানির পরও বিএনপি কোনরূপ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী দেয়নি, এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তারা নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচীই দিচ্ছে। মেয়র নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করছে। কারচুপির বিরুদ্ধেও সোচ্চার। কিন্তু বড় নির্বাচনের তেমন কোন প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না, নাকি খালেদা জিয়ার মুক্তি, সেটাই স্ট্র্যাটেজি? ২০ জুলাই ২০১৮ লেখক : আমেরিকা প্রবাসী অধ্যাপক [email protected]
×