ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্র সম্পদ আহরণে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ জুলাই ২০১৮

সমুদ্র সম্পদ আহরণে

সমুদ্র সম্পদ আহরণে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। সমুদ্র জয়ের ছয়টি বছর পেরিয়ে গেছে। বিশাল সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে বাংলাদেশের সামনে জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বন্দর সুবিধা বৃদ্ধি, মৎস্য ও জলজ সম্পদসহ সমুদ্র তলদেশে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং পর্যটন ব্যবসা সম্প্রসারণ প্রভৃতি সম্ভাবনা অনেক দিন ধরেই তৈরি হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর সমুদ্র বিষয়ে মহাপরিকল্পনা, জাতীয় নিরাপত্তা ও সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের কাজটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যতটা জানা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি অজানা বিশাল সম্পদের আধার এই সমুদ্র। যদিও সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ অনুসন্ধান ও তা উত্তোলন আমাদের দেশের জন্য নতুন বিষয়। সমুদ্রের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানবসম্পদ উন্নয়ন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে সমুদ্র মৎস্য সম্পদের আধার। পাশাপাশি সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে খনিজ সম্পদের পাহাড়। বাংলাদেশের দুই দফায় মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিজয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ আহরণের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এগারো শতাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সমুদ্রসীমা বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদ আহরণের বিপুল সম্ভাবনা প্রশস্ত হয়েছে। এটি দেশের জনগোষ্ঠীকে বেকারত্বের হাত থেকেও রক্ষা করবে। বঙ্গোপসাগর নিয়ে সরকার মাছ ধরার যে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে, তাতে সাধারণ মৎস্যজীবীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশীয় পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করার পাশাপাশি বিদেশীদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ গ্রহণ করা সঙ্গত। নীতিমালা তৈরির সময় অবশ্যই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। সাগর এবং উপকূলে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে বিদেশী ট্রলার নয় বরং দেশীয় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে তাতে অনুমান এবং প্রকৃত তথ্যের মধ্যে অনেক দূরত্ব রয়েছে। এ দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা জরুরী এবং নীতিমালাকে হতে হবে প্রকৃত তথ্যনির্ভর। ‘ব্লু ইকোনমি’ সংক্রান্ত কার্যক্রমের স্বার্থে দরিদ্রবান্ধব অবকাঠামো এবং দক্ষতা উন্নয়ন জরুরী। ‘ব্লু ইকোনমিতে’ অনেক অংশীজন সম্পর্কিত আছে, এতে সম্ভাবনা এবং উদ্বেগ দুটোই রয়েছে। বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় সামদ্রিক জীববৈচিত্র্য, মাছ ও জলজপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্ববহ। উপকূল অঞ্চল থেকে বঙ্গোপসাগরের ৬৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিস্তৃত হলেও এর মধ্যে ৬০০ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা থেকে বিগত বছরগুলোতে বিশেষ কিছু আহরণ করা সম্ভব হয়নি। সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ অনুসন্ধান এবং তা উত্তোলন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন বিষয়। এ থেকে অঢেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাই বিচক্ষণতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে মিত্র দেশগুলোর সহযোগিতা গ্রহণের ক্ষেত্রেও দূরদর্শিতার পরিচয় রাখাও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। বিশেষজ্ঞ ও জনবল তৈরি, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আহরণ, সম্পদ সংরক্ষণ ইত্যাদিতে যে দুর্বলতা রয়েছে। তা কাটাতে হবে। প্রয়োজনে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি, সম্পদ আহরণে দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, মৎস্য শিকার জটিলতা নিরসন, জরুরী পরিচালনা ইত্যাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক।
×