ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ জুলাই ২০১৮

ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ও নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া ॥ ভারি বর্ষণে আবারও তলিয়েছে চট্টগ্রাম নগরী ও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। স্কুল শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, খেটে খাওয়াসহ সবস্তরের মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শ্রাবণে এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক আচরণ। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এটা ভারি বর্ষণ। সাগরে নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপ না থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য সতর্ক সঙ্কেত নেই। তবে সাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালা রয়েছে। মৌসুমী বায়ুও বেশ সক্রিয়। এতে করে আরও ৩ থেকে ৪ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি এবং কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আগের দিন সোমবার রাতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা অব্যাহত থাকে মঙ্গলবার দিনব্যাপী। দুপুরের পর কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। বিকেল থেকে আকাশে ফের সাজ সাজ অবস্থা। চলতে থাকে কখনও বা গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনও বা মুষলধারে বর্ষণ। টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলো। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল, হালিশহর, মুরাদপুর, চকবাজার, কাপাসগোলা, শুলকবহর, চাক্তাইসহ নগরীর অনেক এলাকার সড়ক পানির নিচে চলে যায়। সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয় হাঁটু থেকে বুক পানি ডিঙ্গিয়ে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক সিএনজি-অটোরিক্সা এবং প্রাইভেটকার বিকল অবস্থায় রাস্তায় আটকে থাকে। নিচু সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহনের চাপ পড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু সড়কগুলোতে। এতে করে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। বৃষ্টিপাত অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় কর্মজীবী এবং শিক্ষার্থীদের বেশ কষ্টভোগ করতে হয়। বাধ্য হয়ে ক্লাস সাসপেন্ড করেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যে স্কুলগুলো খোলা ছিল সেখানেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ছিল প্রবল। দিনে দু’বার জোয়ার থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয়। বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগের মাত্রা হয়েছে বেশি। অনেক দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে যায়। চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। মীরসরাই, সীতাকু-, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়াসহ প্রায় সব উপজেলায় ডুবেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ফসলের মাঠ, আমন বীজতলা প্লাবিত হয়ে ক্ষতিসাধন করেছে কৃষকদের। পুকুরের পাড় ডুবে ভেসে গেছে মাছ। এতে করে চাষী ও খামারিদের মাথায় হাত পড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ী ঢল যুক্ত হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে অনেকের বাড়িতে পানি উঠে যায়। ডুবে গেছে গ্রামের সড়কগুলোও। পটিয়ায় বসত ঘরের ক্ষতি ॥ টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুনরায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার শ্রীমাই খালের ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢলের পানি ঢুকে ছনহরা ইউনিয়নের উত্তর ছনহরা গ্রামে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষতি হয়েছে। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দিনে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর আগেও বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উত্তর ছনহরা গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সিএনজিচালক জসিম উদ্দিনের ঘরসহ ৭ বসতঘর তলিয়ে যায়। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় পাহাড়ী ঢলের পানির ¯্রােতে উপজেলার উত্তর ছনহরা গ্রামে ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে বেইলি সেতু, হুমকির মুখে জনবসতি ॥ সংবাদদাতা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরায় টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ভান্ডালজুড়ি খাল। পাহাড়ী ঢলের কারণে ভান্ডালজুড়ি খালের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে শতাধিক বসতবাড়ি।
×