ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফ্যাশন ডিজাইন উন্নয়ন ও চামড়া শিল্পে কারিগরি সহায়তা চাই

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ জুলাই ২০১৮

ফ্যাশন ডিজাইন উন্নয়ন ও চামড়া শিল্পে কারিগরি সহায়তা চাই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফ্যাশন ডিজাইন উন্নয়ন ও চামড়া শিল্পে কারিগরি সহায়তা দিতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, জাপানের ৩১২টি কোম্পানি বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এসব কোম্পানিতে প্রায় ৪২ হাজার জনবল কাজ করছে। শুধু তাই নয়, দেশে জাপানের বিনিয়োগ প্রায় ১ হাজার ৪৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২০১৭ সালে সরাসরি (এফডিআই) ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। গত সোমবার থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী জাপান সফরে রয়েছেন। এই সময়ে তিনি জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্সিয়াল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের উদ্যোগে বিজনেসম্যান টু বিজনেসম্যান বৈঠকে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো)-এর প্রেসিডেন্ট ইয়াশুশি আকাহোশির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। টোকিওতে জাপানের ইকোনমি, ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রী হিরোশিগে সেকোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সরকারী- বেসরকারীখাতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন তোফায়েল আহমেদ। ওই সময় তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, তৈরি পোশাক শিল্পমালিক সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। গত ২০১৬ সালে ঢাকায় হোটেল হলি আর্টিজানে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ৭ জাপানী নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেকোন সন্ত্রাসী ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি পালন করে চলছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত করে বিচারিক আদালতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে। ওই ঘটনার পর সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে এ জাতীয় আর কোন সন্ত্রাসী ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভাল। তাই এখন জাপানী নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর থেকে বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশ খুশি হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ আশা করছে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার পরও জাপান বাংলাদেশকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। জাপানের ইকোনমি, ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়নে জাপান খুশি। জাপান সরকার এবং জাপানের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার পরও জাপান বাংলাদেশকে দেয়া বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে এখন কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। জাপানী নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর থেকে বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। তিনি বলেন, জাপানের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে স্মার্ট টেকনোলজি, ব্লু-ইকোনমি, হাই-টেক প্রডাক্ট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রডাক্ট, টেক্সটাইল, এগ্রোপ্রসেসিং প্রডাক্ট, অটো মোবাইল, আইসটি এবং জুট প্রডাক্ট খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের ৪০টি প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান। জাপান বাংলাদেশকে অনেক পণ্য রফতানিতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করছে। ফলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি বাড়ছে। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ জাপানে রফতানি করেছে ১ হাজার ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে আমদনি করেছে ১ হাজার ৮৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। জাপান বাংলাদেশকে চামড়ার হ্যান্ড গ্লোবসসহ আরও কিছু পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করলে জাপানে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
×