ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে

পাটের আবাদ ও চাহিদা বেড়েছে, গড়ে উঠছে মিনি পাটকল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ জুলাই ২০১৮

পাটের আবাদ ও চাহিদা বেড়েছে, গড়ে উঠছে মিনি পাটকল

সমুদ্র হক ॥ বৃষ্টিতে পাট চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়াতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। জলের আধার কাছেই পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ছোট নদীগুলোও ভরে উঠেছে। শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট চাষীদের মাথায় হাত উঠেছিল। কিছুটা হলেও সেই ভাবনা এখন দূর হয়েছে। দেশে পাটের আবাদ কমেই গিয়েছিল। বছর তিনেক আগে (২০১৫) থেকে পাট চাষ বাড়তে থাকে। এর কারণ হলো : আগে পাটের দাম ছিল কম। তা বেড়ে যায়। বিদেশে বাংলাদেশের পাটের গুণগত মান ভাল দেখে বিদেশীরা আকৃষ্ট হয়। রফতানি বাড়ে। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক স্থানে মিনি পাটকল চালু হওয়ায় পাট পণ্য বিশেষ করে পাটের বস্তা, চট, চটের ব্যাগ, সুতলি ইত্যাদি বিক্রি বেড়ে যায়। বগুড়ায় ১৭টি মিনি পাটকল চালু হয়েছে। এ ছাড়াও নাটোর, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ে মিনি পাটকল গড়ে উঠেছে। ২০০২ সালে দেশের সবচেয়ে বড় আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর এই মিলের পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে বেশ কয়েকটি মিনি পাটকল চালু হয়। পরে ভারত ও চীন থেকে পাটকলের তাঁত আমদানি করে আনা হয়। পাটকলে বস্তা চট সুতলি তৈরি ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ, পাটের তৈরি নানা ধরনের কারুপণ্য বানিয়ে দেশের বাজার ধরে এবং বিদেশেও রফতানি করে। পাট দিয়ে ছাপার কাগজ, কয়েক ধরনের টিস্যু তৈরি হচ্ছে। পাটের বাই প্রোডাক্ট পাটখড়ির (বগুড়া অঞ্চলের ভাষায় সিন্টে) চাহিদা গ্রামে এখনও বেশি। এক ধরনের মণ্ড তৈরিতে ব্যবহার হয়। পানের বরজে পাটখড়ির প্রয়োজন হয় বেশি। এভাবে দিনে দিনে পাটের চাহিদা বেড়েই গিয়েছে। গত শতকের ষাটের দশকে বগুড়ার সোনাতলা, সুখানপুকুর, গাবতলী উপজেলায় ছিল পাটের গাইট বাঁধার হাইড্রলিক যন্ত্র। বগুড়ায় পাটের আবাদ হতো বেশি। উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ছিল পাট চাষের উর্বর ভূমি। সরকারের কয়েকজন জুট ইন্সপেক্টর এবং পাট ক্রয়ের কয়েকটি বড় কেন্দ্র ছিল বগুড়ায়। সোনালি আঁশ পাটের চাষ ৮০’র দশকের পর থেকে কমতে থাকে। পাটের দাম কম পাওয়ায় কৃষকও পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। বহু বছর পর সোনালি আঁশ পাটের দিন ফিরে এসেছে। এখন কৃষক পাট বিক্রি করে লাভ করতে পারছেন। বর্তমানে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ১ হাজার ৩শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা দরে। কৃষকরা বলছেন এই দাম আরও বাড়তে পারে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব ॥ চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ১৫ হাজার ৫শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আশা করা হয়েছে এ থেকে উৎপাদিত হবে প্রায় পৌনে দুই লাখ মে.টন পাট। আরেক সূত্রের খবর চলতি বছর দেশে সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। বলা হয়েছে প্রতি বছর দেশে পাট চাষ বাড়ছে। এ বছর গত বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি পাট চাষের আশা করা হয়েছে। বগুড়ার পাট চাষের অন্যতম এলাকা সোনাতলায় দেখা যায়,পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে ছোট জলাশয়গুলো ভরে যাওয়ায় কৃষক পাট জাগ দিতে শুরু করেছে। এই পানিতেই পাটের আঁশ ছাড়িয়ে নিচ্ছে। বাঙালি তীরের গ্রাম রানীরপাড়ার কৃষক বাসেত আলী বললেন, পাটের আবাদটি এমন বেশি বন্যা হলেও বিপদ আবার বৃষ্টি না হলেও জাগ দেয়ার অসুবিধা। তবে এই সময়টায় টানা বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আঁশ ছাড়াবার জন্য ভাল হয়েছে। প্রতি একর জমিতে পাট মিলছে ১৮ থেকে ২১ মণ করে।
×