ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণ নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তা অনর্থক ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ জুলাই ২০১৮

স্বর্ণ নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তা অনর্থক ॥ মুহিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জনগণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, এখন অর্থ ছাড়ে কোন বিলম্ব হয় না। বছরের শুরুতইে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তয়ন শুরু করুন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে তিনি একথা বলেন। সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ব্যাংকে স্বর্ণ রয়েছে ৯৬৩ কেজি, এর মধ্যে মাত্র ৩ কেজি দূষিত। এটা কোন সমস্যা নয়। এ বিষয়ে কোন কমিটি করা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ নিয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছে সেগুলো অনর্থক (ইউজলেস)। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে এর আগে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ নিয়ে অনিয়মের যেভাবে দুনিয়া কাঁপানোভাবে প্রকাশিত হয়েছে এটা পুরোপুরি সত্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে যোগাযোগ ঘাটতিতেই এই সঙ্কট। তবে আমরা বিষয়টিকে ছোট করে দেখছি না। পর্যলোচনা করে কারো বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া স্বর্ণ জমা রাখার সময় স্বর্ণ ৪০ শতাংশই ছিল। কিন্তু ইংরেজি-বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ৮০ এবং ৪০-এ ক্লারিক্যাল মিসটেক হয়েছে। তিনি বলেন, ছয় স্তরের নিরাপত্তা আছে, কোন স্বর্ণ বাইরে যায় নাই। জনগণের সম্পদ রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। তাই টোটাল নিরাপত্তা সিস্টেমটা পর্যালোচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোন সংস্থা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। গত মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) একটি দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কা-’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিনভর আলোচনা চলে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও আংটির জায়গায় এখন আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। আর ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন এবং ভল্টের দায়িত্বে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণে কোন ধরনের হেরফের হয়নি; স্বর্ণকারের ভুলে ভাষার গ-গোলে ৪০ হয়ে গেছে এইটি। আওলাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি বলতে যা আছে, নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। বিদ্যুত ও জ্বালানি ॥ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় অধিবেশন শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্য অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দেশে বিদ্যুত ব্যবস্থার বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন হয়েছে। এরসঙ্গে সমস্যাও হয়। কোন কোন জায়গায় বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম হয়, বিদ্যুত হয়ত কিছু সময় ইন্ট্রাপ ছিল, এগুলো তারা তুলে ধরেছেন। যাতে আমরা ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে সম্প্রসারণ করতে পারি। গ্রামের মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাচ্ছে, সেই বিষয়ে ডিসিরা কিছু বলেছেন কিনা-জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, না বলেনি। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের ছোটখাটো অভিযোগের কথা বলেছেন (ডিসিরা)। আমাদের চেয়ারম্যান সেই বিষয়ে অভিযোগ কেন্দ্র খুলেছেন, গ্রামের সাধারণ মানুষের কষ্ট তো আমরা চাই না। সুতরাং এটা আমরা সমাধান করি। আগামী বছরের মধ্যে সারাদেশের সব জায়গায় বিদ্যুত পৌঁছে যাবে। বড়পুকুরিয়ায় কয়লা কেলেঙ্কারির জন্য রংপুরের মানুষ তো ভুগবে, এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, উনারা (ডিসিরা) যখন এসেছেন তখন তো সমস্যাটা অত প্রকট হয়নি। ওখানে সাময়িক কিছু জায়গায় লোডশেডিং হবে, কয়লা উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত। যেখানে ইন্ট্রাপশন হবে ওরা জানিয়ে দেবে। কবেনাগাদ কয়লা উৎপাদনে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ এক মাসের মধ্যে।’ বড়পুকুরিয়া খনি থেকে এতদিন ধরে প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হলো ধরা পড়ল না। এখন মানুষ বিদ্যুতের অভাবে ভুগছে- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এটাই তদন্ত হচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করব না। তদন্ত করে দেখা হবে কীভাবে জিনিসটা হলো, এর দায়-দায়িত্ব কার। তদন্ত হয়ে গেলে আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্নেহের সঙ্গে দরদের সঙ্গে দেখেন। কার্য সম্পাদনে গাফিলতি হলে তিনি কোনমতেই সহ্য করবে না। তৌফিক-ই-এলাহী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর। তিনি কোন দুর্নীতি, কোন বিশৃঙ্খলা, নিয়ম-নীতির বরখেলাপ কোনদিন সহ্য করেন না। তিনি চানও না। শ্রম ও কর্মসংস্থান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত এক লাখ শিশুকে ফিরিয়ে আনতে ২৮৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যাব। জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করেছি নিজ নিজ জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমিক কোথায় কি পরিমাণ আছে তা সার্ভে করে যদি একটি রিপোর্ট দেয় তবে শিশু শ্রম নিরসনে যে সব সহায়তা করা প্রয়োজন আমরা তা করব। দুর্যোগ ও ত্রাণ ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ শাহ কামাল বলেন, জেলা প্রশাসকরা বলেছেন, বন্যার বিষয়ে তাদের প্রস্ততি ভাল আছে। তারা যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তবে তারা বলেছেন, নৌকার কিছু ঘাটতি আছে। বিভিন্ন জেলায় যদি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থাকে তবে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা যায়। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও ভাল হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জেলায় বরাদ্দ দিয়েছি, জিআর ক্যাশ থেকে নৌকা বানানো যাবে। স্পিড বোর্ডের কথাও তারা বলেছেন। শাহ কামাল বলেন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা নিয়মিত করার জন্য বলেছি। যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলেছি। সকলে এই বিষয়টির সঙ্গে একমত হয়েছেন। এই কার্য অধিবেশনে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×