ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাদেরের সৌজন্য সাক্ষাত কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহা ঐক্যের ইঙ্গিত?

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ জুলাই ২০১৮

কাদেরের সৌজন্য সাক্ষাত কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহা ঐক্যের ইঙ্গিত?

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই দৃশ্যপটের মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন আসবে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হয়ে গেলে এ বিষয়ে পোলারাইজেশনটা (মেরুকরণ) স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের এখানে পোলারাইজেশনটা কিভাবে হবে? সেটা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িকতা একটা বিষয় আছে, এখানে ডিভাইসিক পলিটিক্স আছে, সেখানে পোলারাইজেশনটা কার সঙ্গে কার হবে? কিভাবে ঘটবে? এইসব বিষয়গুলোর সমীকরণটা একটা পর্যায়ে কোথায় দাঁড়াবে, সেটা এখানে বলা যাবে না। এরশাদের ভারত সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা এরশাদ সাহেবকেই জিজ্ঞেস করেন। ভারতপ্রীতি নিয়ে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ভারত ভীতিটা যাদের এত প্রবল, ইলেকশন আসলে ভারতপ্রীতি কেন বেড়ে যায়? যারা সারাবছরই ভারত ভীতিতে ভোগে, ইলেকশন আসলেই তাদের ভারত প্রীতি কেন? এত ঘন ঘন যাচ্ছেন কেন? তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত কাউকে ক্ষমতায় বসাবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। এজন্য আমরা তোষামোদিও করি না। বিএনপির রাজনীতি ‘ছদ্মবেশী বিদ্বেষপ্রসূত’ দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই ছদ্মবেশী বিদ্বেষপ্রসূত নেতিবাচক রাজনীতির কারণে আগামী নির্বাচনে বিএনপির পরাজয় হবে এবং আগামী নির্বাচনেও তাদের মাশুল দিতে হবে। সিপিবির মোজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করাকে ‘অফিসিয়াল আলাপ নয়’ দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা সৌজন্য সাক্ষাত। আমি বাসদের খালেকুজ্জামানের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছি। আমি ফোনে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গেও কথা বলেছি। ওনি সোমবার আমাকে কল করেছিলেন কিন্তু খেয়াল করতে পারিনি। আজকে তাঁকে কল করেছি, কথা বলেছি। এটা একটা সৌজন্যবোধের বিষয়। একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ রাজনীতিতে থাকা উচিত। এ সময় এর আগে বিএনপির মির্জা ফখরুল সাহেবের মায়ের মৃত্যুতে বিবৃতি ও ফোন করে কথা বলার বিষয়টি তুলে কাদের বলেন, রাজনীতিতে সৌজন্যবোধটা দরকার আছে। কর্নেল অলিও আমাকে ফোন করেছেন। আ স ম আব্দুর রবও আমাকে ফোন করেছেন। মেজর মান্নানও করেছেন। এভাবে ফোনালাপটা থাকলে অনেক কিছুই সমাধান হয়ে যায়। আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতির অঙ্ক নিয়ে আলাপ করতে যাইনি। যদি কোন আলাপ করতে যাই তাহলে আমার পার্টির সভাপতির (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে যাব এবং ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে যাব। রাজনীতির কোন বিষয়ে আলোচনা করলে, কোন ইকুয়েশন বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং’র বিষয়, এ্যালায়েন্সের বিষয়ে আলাপ হলে, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া আমি আলাপ করতে পারি না। তবে সিপিবির নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর আলোচনা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় শোকাবহ আগস্টের পুরো মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন নিয়ে আলোচনা হয় এবং সহযোগী-ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের বিভিন্ন কর্মসূচীর সময়সূচী নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কার্যনিবাহী সদস্য এ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সিপিবি নেতাদের সঙ্গে কাদেরের বৈঠক ॥ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির মহা ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী জোটের বাইরে থাকা বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নেতাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন ওবায়দুল কাদের। জানা গেছে, অনেকটাই আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তোপখানা রোডের সিপিবি কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। তবে বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনপক্ষই মুখ খুলতে রাজি হয়নি। ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাত। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিপিবির নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয়ে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেরিম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ করার শর্তে সিপিবির এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনেকটা আকস্মিকভাবে আমাদের কার্যালয়ে এসেছিলেন। এই সাক্ষাত সৌজন্যমূলক। তবে সাক্ষাতের সময় আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বাম রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও কিছু বাম দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। সম্প্রতি সিপিবি ও বাসদ (খালেকুজ্জামান)সহ ৮টি বামপন্থী রাজনৈতিক দল মিলে বাম গণতান্ত্রিক জোট নামে নতুন জোট গঠন করেছে। জোট গঠনের পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই সাক্ষাত কর্মসূচীকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এই সাক্ষাতকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ কেউ ক্ষমতাসীন আদর্শিক ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বৃদ্ধির অংশও মনে করছেন। বাম জোটভুক্ত অন্য দলগুলো হলো- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদ (মার্কসবাদী)। সূত্র জানায়, এই প্রত্যেকটি দলের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসতে পারেন ওবায়দুল কাদের।
×