ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তোপের মুখে নেপালের আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ জুলাই ২০১৮

তোপের মুখে নেপালের আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে পড়তে আসা নেপালী নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও বিরূপ মন্তব্য করার পর তোপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন নেপালের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং। ‘মেডিক্যালের ওপর যারা বাংলাদেশে লেখাপড়া করতে যায়, সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্যে তাদের সেখানে নিজেদেরকে বিক্রি করতে হয়’ মন্ত্রীর এমন এক বক্তব্যের পর তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকা ও কাঠমান্ডুর নেপালী শিক্ষার্থীদের মাঝে। বাংলাদেশে পড়তে আসা দেশটির শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঢাকার নেপাল দূতাবাসে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে পদত্যাগ করেন ওই মন্ত্রী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে তিন শতাধিক নেপালী ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। গত ২০ জুলাই নেপালের কাঠমান্ডুতে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং নারীদের নিয়ে নেতিবাচক এ বক্তব্য দিয়েছিলেন। কাঠমান্ডুর চাবাহিলে প্রাজিক্স ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি নামক একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে সমবেত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামনে এ অভিযোগ করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান দেননি তিনি। তামাং দাবি করেন, নেপালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিক্যাল কলেজ না থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এমবিবিএস ডিগ্রী নিতে বিদেশে যায়। সেখানে কিছু বিষয়ে তারা সমঝোতা করতে বাধ্য হয়। এ রকম পরিস্থিতিতেও কিছু অভিজাত পেশাজীবী নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলার বিরোধিতা করেন। তারা চান না এ পেশায় অন্য আরও লোকজন আসুক। মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে নেপালের জাতীয় দৈনিক ‘দি হিমালয়ান’ গত ২২ জুলাই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল এক মন্ত্রীর এ ধরনের অভিযোগের নিন্দা করে অনেকেই বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালী শিক্ষার্থীদের সুনাম ব্যাহত করবে। এ অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন অনেকে। তবে গণমাধ্যমে মন্ত্রীর বক্তব্যের খবর প্রকাশের পর থেকে গত তিনদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন নেপাল ও বাংলাদেশে পড়ালেখা করা নেপালী শিক্ষার্থী বিশেষত নারীরা। বাংলাদেশে পড়তে আসা দেশটির শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ঢাকার নেপাল দূতাবাসে স্মারকলিপি দেন। নেপালিজ স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঢাকার নেপাল দূতাবাসে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সেই স্মারকলিপিতে নেপালের আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। নেপালিজ স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন্স বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট রাজু শাহ বলেন, নেপালের আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত হয়েছি। একজন মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি এমন মন্তব্য করতে পারেন না। তিনি ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে এই ক্ষমা চাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। আমরা তার পদত্যাগের দাবিতে ঢাকার নেপাল দূতাবাসে স্মারকলিপি দিয়েছি। অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও বলেন, একজন মন্ত্রী কিভাবে না জেনে তথ্য প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের কথা বলতে পারেন। আমরা মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। কেবল ক্ষমা চাইলে হবে না। মন্ত্রী নেপালের প্রতিটি নারীর মর্যাদা ক্ষুণœ করেছেন বলেও অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে প্রতিবাদ হয়েছে নেপালেও। বাংলাদেশ থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কোন ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই মন্ত্রী তাদের বিষয়ে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি কি কখনও বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের কাছে এ বিষয়ের খোঁজ নিয়েছিলেন? আমরা সেখানে কত কষ্ট করে লেখাপড়া করি তার তিনি কিছুই জানেন না। কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তিনি একথা বলেছেন। কঠোর পরিশ্রম করেই আমরা সার্টিফিকেট পেয়েছি। এমন অবস্থায় প্রথমে সোমবার মন্ত্রী কাঠমান্ডুতে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চান। বলেন, তিনি তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু তার পরও বিক্ষোভ চলতে থাকলে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং।
×