ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তামিম-সাকিবের প্রশংসায় অধিনায়ক মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২৪ জুলাই ২০১৮

তামিম-সাকিবের প্রশংসায় অধিনায়ক মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক স্বস্তির জয়ে ম্যাচসেরা তামিম ইকবাল খেলেছেন ১৬০ বলে অপরাজিত ১৩০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। তবু সমালোচিত তিনি! কারণ ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি ছুঁতেই যে ১৪৬টি বল খেলতে হয় অভিজ্ঞ এই ওপেনারকে। যা তামিমের তো বটেই, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ইতিহাসে মন্থরতম সেঞ্চুরি। ম্যাচ শেষে তিনি জানিয়েছেন গায়ানার পিচে ওই সময়ে ব্যাটিং করা মোটেই সহজ ছিল না। নিন্দুকেরা নিন্দা করলেও সুপার অধিনায়ক ম্যাশের প্রশংসাই পেয়েছেন আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা এ বাঁহাতি ওপেনার। পাশাপাশি মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত বন্ধু সাকিব আল হাসানের জন্য আফসোস ঝরেছে তামিমের কণ্ঠে। আর ক্যাপ্টেন ম্যাশ বলেছেন, সবাই নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে বলেই ঘুরে দাঁড়নো সম্ভব হয়েছে। ‘এই মাঠে ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এখনও মনে আছে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলছি। এখানকার উইকেট আমাদের ধরনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। ব্যাটিং শুরুতে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তামিম ও সাকিব দারুণ ব্যাট করেছে। সুরটা বেঁধে দিয়েছে। শেষে মুশির ছোট্ট ইনিংসটি ছিল অসাধারণ।’ বলেন মাশরাফি। ওয়ানডে অধিনায়ক আরও যোগ করেন, ‘আমরা জানতাম শুরুতে ভাল বোলিং করলে এখানে ২৮০ রান তাড়া করা কঠিন। আমাদের চাওয়া ছিল গেইল ও লুইসকে দ্রুত ফেরানো। সেটি হয়েছে। এরপর আমরা প্রতিপক্ষের ওপর চাপটা ধরে রাখতে পেরেছি।’ ম্যাশের নিজের বোলিংও ছিল দুর্দান্ত। স্ত্রীর অসুস্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে সেভাবে বোলিং অনুশীলনই করতে পারেননি। কিন্তু মাঠে তার বোলিংয়ে সেটির কোন ছাপ ছিল না। লাইন-লেংথ ছিল দুর্দান্ত। কাটার ও গতি বৈচিত্র্যে ক্যারিবিয়ানদের ভুগিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। অনুশীলনের ঘাটতি ছিল বলেই হয়তো পরের স্পেলে বল করেছেন শর্ট রান আপে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে শর্ট রান আপে অনেকবার বোলিং করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেননি খুব একটা। এবার সেখানেও সফল। নিজের পারফর্মেন্সও স্বস্তি দিয়েছে অধিনায়ককে, ‘গত ২-৩ মাসে সেভাবে বোলিং করতে পারিনি। লম্বা রান আপে অনুশীলনও সেভাবে করতে পারিনি। এমন সময় আসতেই পারে। ম্যাচে কাজটা এমনিতেও সবসময় কঠিন। তবে আমি মাঠে উপভোগ করেছি।’ বলেন মাশরাফি। মাত্র ১ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে তামিম ও সাকিব দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ২০৭ রানের জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। সাকিব একটু ধৈর্য হারালেন। নইলে এদিন সেঞ্চুরি পেতে পারতেন তিনিও। ১২১ বলে ৯৭ রানে বড় শট খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তবে তামিম দারুণভাবে উতরে গেছেন নার্ভাস নাইনটিজ। নিজের দশম সেঞ্চুরিটি তামিম তুলে নেন ১৪৬ বলে। তবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরি। কিন্তু এই সেঞ্চুরির কার্যকারিতা যে অনেক। অন্তত ক্যারিবিয়ান পাড়ে রুগ্ন ব্যাটিংয়ে প্রাণ তো ফিরল। তামিম সেঞ্চুরি পূরণের পর আরও ১৪ বল খেলেন। সেই ১৪ বলে করলেন আরও ৩০ রান। সবমিলে ১৬০ বলে ১৩০ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল তার ইনিংসে। ‘দলের জয়ে যে কোন ইনিংসই স্পেশাল। বিশেষ করে আজকে যখন আমরা ব্যাটিংয়ে নামি, উইকেট খুব সহজ ছিল না। শক্ত অবস্থানে যেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ২৫ ওভার পর্যন্ত উইকেট খুবই কঠিন ছিল। বল টার্ন করছিল, পেসারদের জন্যও সহায়তা ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, স্কোরবোর্ডের দিকে না তাকিয়ে যত লম্বা খেলা যায়।’ বলেন ম্যাচসেরা তামিম। তামিম আরও যোগ করেন, ‘একটা লক্ষ্য আমাদের মাথায় ছিল, সেটা আমরা অর্জন করেছি। সত্যি বলতে যে লক্ষ্য আমরা ঠিক করেছিলাম, মুশফিকের ক্যামিওটির সৌজন্যে আরও ১৫-২০ রান বেশি হয়েছে। মুশফিকের ইনিংসটি ছিল দারুণ। সাকিব অবিশ্বাস্য ভাল খেলেছে। আমি কষ্ট করে রান করেছি।’ ম্যাশের ক্যাপ্টেন্সি প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘বোলিংয়ে মাশরাফি ছিলেন দুর্দান্ত। এই উইকেটে যেটা দরকার ছিল, তার অভিজ্ঞতা দিয়ে উনি সেটিই করেছেন। অধিনায়কত্বও ছিল নিখুঁত। বোলিং পরিবর্তন যখন যেটা দরকার ছিল, সেটিই করতে পেরেছেন।’ ওয়ানডেতে তামিমের প্রথম সেঞ্চুরি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৮ সালে। সেই সেঞ্চুরির ইনিংসটি ছিল ১২৯ রানের। পরের সেঞ্চুরিটি তামিমের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস হয়ে আছে। ২০০৯ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে ১৫৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। এরপর ২০১০ সালে ইংল্যান্ড, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা এবং ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরি করেন তামিম। ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৭ সালে করেছেন শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
×