ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গায়ানায় তামিমের সেঞ্চুরির ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৮ রানে হারিয়েছে টাইগাররা, একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ওয়ানডে বুধবার

স্বস্তির জয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৪ জুলাই ২০১৮

স্বস্তির জয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বাংলাদেশ শিবিরে যেন এক পশলা স্বস্তির সুবাতাস। দুর্বল আফগানিস্তানের কাছে টি২০ সিরিজ হারের পর উইন্ডিজে টেস্ট ভরাডুবি। তলানিতে চলে যাওয়া আত্মবিশ্বাসে জ্বালানি এনে দিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা এ্যান্ড কোং। গায়নায় প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানের জয় পেয়েছে টাইগাররা। নিজের ক্যারিয়ারের তো বটেই, বাংলাদেশ ইতিহাসেরই মন্থরতম সেঞ্চুরি (১৬০ বলে অপরাজিত ১৩০) হাঁকিয়েও ‘নায়ক’ তামিম ইকবাল। মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত শাকিব (১২১ বলে ৯৭)। সঙ্গে শেষ মুহূর্তে মুশফিকুর রহীমের ১১ বলে ৩০ ক্যামিওর সৌজন্যে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। এরপর মাশরাফি-মুস্তাফিজের দুরন্ত বোলিংয়ে ক্যারিবীয়দের ২৩১/৯-এ থামিয়ে দিয়ে আসে বহুকাক্সিক্ষত জয়। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গা এক জয়। অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলকে পথ দেখিয়েছেন অভিজ্ঞ তামিম। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বন্ধু সাকিব। উইকেটের সামনে-পেছনে মনে রাখার মতো একটা দিন গেছে মুশফিকেরও। বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটে অনুপ্রেরণার আরেক নাম মাশরাফি। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমানও জ্বলে উঠেছেন সময় মতো। সবমিলিয়ে টেস্টের দুঃস্বপ্ন ভুলে দারুণ এক জয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে টাইগাররা। ২০১৪ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সব ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। এবারও দুই টেস্টে হার বড় ব্যবধানে। সেই ব্যর্থতা পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াল দল। সবমিলিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে উদযাপনের উপলক্ষ পেল টিম-টাইগার্স। অথচ টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারীদের শুরুটা কিন্তু ভয় জাগিয়েছিল। দ্বিতীয় ওভারেই শূন্য হাতে বিদায় এনামুল হক বিজয় (০)! এরপরই তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। আর এ দুইজন মিলে বাংলাদেশকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেন। ২৫৮ বলে গড়েন ২০৭ রানের জুটি। মাত্র ৩ রানের জন্য সাকিব সেঞ্চুরি মিস করলেও তামিম নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিটি তুলে নেন। ১৬০ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ১৩০ রানে অপরাজিত থাকেন এই ন্যাটা ওপেনার। যদিও এটি তার ও বাংলাদেশের মন্থরতম সেঞ্চুরি। তবু পরিস্থিতির বিচারে দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর মুশফিকুর রহীম এসে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১১ বলে খেলেন ৩০ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস। ৬ চারে ১২১ বলে ৯৭ রান করে আউট হন সাকিব। তাতেই স্কোর বোর্ডে ২৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এরপর বাকি কাজটা সারেন অধিনায়ক মাশরাফি নিজে। ৩৭ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফেরাতে নেতৃত্ব দেন তিনি। এছাড়া কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ নেন ২ উইকেট। একটি করে শিকার স্পিনার মিরাজ ও পেসার রুবেলের। এ জয়ে গায়ানার মাঠে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ধরে রাখল টাইগাররা। এর আগে ২০০৭ সালে প্রথমবার এই মাঠে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের সুপার এইটের খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারিয়েছিল হাবিবুল বাশার সুমনের দল। সেই দলেও ছিলেন সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাশরাফী। ওই ম্যাচেও ৫৯ বলে ৩৮ রানের একটি মন্থর ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। সাকিব খুব একটা রান (৯) করতে না পারলেও বল হাতে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। মাশরাফী খেলেছিলেন ১৬ বলে ২৫ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস। সেই ম্যাচে মুশফিক ব্যর্থ হলেও এদিন ঠিকই জ্বলে ওঠেন তিনি। টেস্টে ব্যর্থতার পর ঘরে-বাইরে ভীষণ রকমের চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটাররা। জবাব দিতে নিজেদের পয়মন্ত মাঠ গায়ানাকেই বেছে নিলেন তারা। অনেক স্বস্তির জয়ে মূল ভূমিকা রেখেছেন দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রাই। এর আগেও একবার এই মাঠে খেলেছিল টাইগাররা। সেই ম্যাচেও জয় পেয়েছিল তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছিল। বিশেষ করে টেস্টে হোয়াইটওয়াশের পর। কিন্তু মাশরাফী বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ওয়ানডেতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। এ্যান্টিগায় যে ব্যর্থতার শুরু, গায়ানায় এসে তা গেল বদলে। এদিন দায়িত্ব নিয়েই খেলেছেন সিনিয়ররা। মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত বন্ধু সাকিবকে সহানুভূতি জানিয়েছেন ম্যাচের নায়ক তামিম। আর মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত তামিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। জানিয়েছেন, দেশের হয়ে নিজেদের উজাড় করে দেয়ার মন্ত্রটাতেই এই জয়। বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে সতীর্থদের আরও ভাল খেলার আহ্বান জানিয়েছেন এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করতে ক্যাপ্টেন ম্যাশ। স্কোর কার্ড বাংলাদেশ ॥ ২৭৯/৪ (৫০ ওভার; তামিম ১৩০*, এনামুল ০, সাকিব ৯৭, সাব্বির ৩, মুশফিক ৩০, মাহমুদুল্লাহ ৪*; রাসেল ১/৬২, হোল্ডার ১/৪৭, জোসেফ ০/৫৭, নার্স ০/৩৯, বিশু ২/৫২, মোহাম্মেদ ০/১৫)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ॥ ২৩১/৯ (৫০ ওভার; গেইল ৪০, লুইস ১৭, হোপ ৬, হেটমায়ার ৫২, মোহাম্মেদ ১০, হোল্ডার ১৭, পাওয়েল ০, রাসেল ১৩, নার্স ৭, বিশু ২৯*, জোসেফ ২৯*; মাশরাফি ৪/৩৭, মিরাজ ১/৩৭, রুবেল ১/৫২, মোসাদ্দেক ০/২২, মুস্তাফিজ ২/৩৫, সাকিব ০/৪৩)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)। সিরিজ ॥ তিন ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
×