ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুহানিকে কঠোর হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ জুলাই ২০১৮

পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার রাতে টুইটারে ইরানের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর পরিণামের হুমকি দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। দুদেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে হুমকি পাল্টা হুমকি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইরানী নেতাদের মাফিয়ার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ ইরানীদের আমরা সমর্থন দিয়ে যাব। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও ইয়াহু নিউজের। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানিকে উদ্দেশ্য করে বড় হাতের অক্ষরে টুইটারে লেখা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, আর কখনও যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেবেন না। যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকেন অতীতে যেসব দেশ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের পরিণতি যা হয়েছে তার মুখোমুখি হবে ইরান। পরিণামদর্শী হোন। দীর্ঘদিন ধরে আপনারা জনগণের মতামতকে অবজ্ঞা করে আসছেন। রবিবার ইরানী প্রেসিডেন্ট রুহানির বক্তব্যের স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া ছিল ট্রাম্পের বার্তাটি। প্রেসিডেন্ট রুহানি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে, ইরান হবে সব যুদ্ধের জননী। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক তেল রফতানিতে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা বিপদ ডেকে আনবে বলে হুমকি দেন রুহানি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইরানী নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করার কয়েক ঘণ্টা পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে হুমকি দেয়া হলো। পম্পেও অভিযোগ করেন, ইরানী নেতৃত্ব নাগরিকদের কল্যাণ বয়ে আনার চেয়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সিমি ভ্যালিতে অবস্থিত রোনাল্ড রিগ্যান প্রেসিডেন্টশিয়াল লাইব্রেরিতে ইরানী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে দেয়া এক বক্তব্যে পম্পেও বলেন, বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো উদ্বিগ্ন যে মধ্যপন্থী সরকারগুলোর অনিষ্ট করছে ইসলামিক রিপাবলিক সরকার। তবে এই তথাকথিত মধ্যপন্থী শাসন ব্যবস্থায় এখনও ইসলামিক বিপ্লবীরা সহিংস। যারা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ও পশ্চিমা এজেন্ডাবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। ইরানী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ চুক্তির বরখেলাপ করেছেন। পরমাণু চুক্তি নিয়ে তারা এখন পশ্চিমাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছেন। ইরান এখন সরকারের চেয়েও মাফিয়াদের মতো চক্র দ্বারা চালিত হচ্ছে। ইরানী নেতাদের বিশাল সম্পদ রয়েছে। তা তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। ইরানের সিনিয়র নেতারা অর্থ আত্মসাত, চমকপ্রদ চুক্তি ও অন্যান্য অসম্পূর্ণ লাভ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। আয়াতুল্লাহ ধর্মের চেয়ে ধন-সম্পদ লাভের দিকে বেশি মগ্ন রয়েছেন। মার্কিন সরকার ২৪/৭ ফার্সি ভাষার টিভি, রেডিও, ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার শুরু করেছে। ইরানী নাগরিকদের ওপর ইন্টারনেট সেন্সরশিপ আরোপের ব্যাপারে মার্কিন সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। জনসম্মুখে ট্রাম্প প্রশাসন বলে আসছে যে, তাদের নীতি ইরানের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন নয় বরং তেহরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করে আচরণ পরিবর্তন করাই তাদের লক্ষ্য। যাতে মধ্যপ্রাচ্যে ছায়াযুদ্ধ ও জঙ্গী গোষ্ঠীর সমর্থন করা থেকে সরে যায় দেশটি। শনিবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, তিনি রুহানির পরামর্শকে সমর্থন করেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইরানের নেতৃত্বকে আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র হুমকির মুখে রেখেছে। রুহানি একজন কর্মতৎপর নেতা হিসেবে বিবেচিত। যিনি মধ্যপন্থীদের সহনীয় বলে মনে করেন। ট্রাম্প মে মাসে ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে নিজ দেশের নাম প্রত্যাহার করল। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেলের ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে জানায়। ইরানের বিরুদ্ধে উত্তেজনামূলক বার্তায় ট্রাম্প মনে করিয়ে দেন যে, পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সেনা মোতায়েনের একটি সুপারিশ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গত গ্রীষ্মে যা হয়েছে তার কথাও বলেন তিনি। ট্রাম্প প্রায়ই উত্তর কোরীয় শাসনব্যবস্থাকে দুর্নীতিবাজ বলে অভিহিত করতেন। প্রেসিডেন্টের এই হুমকিগুলো উত্তরের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলে। এতে পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী অন্তর্ভুক্ত ছিল। যাতে বাধ্য করা হয় দেশটিকে আলোচনার টেবিলে বসতে। উত্তর কোরিয়ার শাসন ব্যবস্থার চেয়ে ইরান খুবই সহজ বিষয়। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন বা ভবিষ্যতে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর প্রক্রিয়া শুরু করার কোন লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি। ২০১৫ সালের পর দেশটি কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার পরও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। ইরানী নেতার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, ট্রাম্প চেষ্টা করছেন তাদেরকে উত্তেজিত করে ভুল পথে চালিত করার।
×