ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিলছে বিলুপ্তপ্রায় ১৮ প্রজাতির দেশী মাছ ॥ সুদিন ফিরছে মাছে-ভাতে বাঙালীর

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ জুলাই ২০১৮

মিলছে বিলুপ্তপ্রায় ১৮ প্রজাতির দেশী মাছ ॥ সুদিন ফিরছে মাছে-ভাতে বাঙালীর

ওয়াজেদ হীরা ॥ দিন দিন বাড়ছে মাছের উৎপাদন। উন্মুক্ত কিংবা বদ্ধ জলাশয় উভয় স্থানেই বাড়ছে মাছের উৎপাদন। উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের চাহিদাও। এছাড়া মাছ চাষে কেউ কেউ বুনেছেন নতুন স্বপ্নও। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ চাষে ভাগ্য ফিরেছে দেশের বহু মানুষের। উৎপাদন এবং মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়লেও কিছুটা কমেছে মাছ রফতানি। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, রফতানি কমলেও মৎস্য খাতে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে চায় সরকার। গত ৯ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। সংশ্লিষ্টরা এটিকে বিরাট সাফল্য হিসেবেই দেখছেন। আর ভবিষ্যতে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। মৎস্য উন্নয়নে জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ মাছে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। গত ২২ জুলাই শুরু হওয়া এই মৎস্য সপ্তাহ শেষ হবে আগামী ২৮ জুলাই। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। চীন ও ভারতের পরেই এখন বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই অবস্থান ছিল পঞ্চম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান বলছে, দেশে চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন বেশি। সংস্থাটির মতে দেশে মাথাপিছু মাছ গ্রহণের চাহিদা ৬০ গ্রাম। বেশি উৎপাদন হওয়ায় সেখানে সহজলভ্য আছে ৬২. ৫৮ গ্রাম, যা চাহিদার তুলনায় ২.৫৮ গ্রাম বেশি। মাছ উৎপাদনের এ সাফল্যকে সামনে রেখেই পালিত হচ্ছে মৎস্য সপ্তাহ। এদিকে বছর বছর বেড়েছে মাছের উৎপাদন। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন ছিল ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৪ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৪ মেট্রিক টন। সে হিসেবে গত এক অর্থবছরে উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ১১০ মেট্রিক টন। অথচ ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ১ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন। গত নয় বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউয়ের তথ্য দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান এখন ৩.৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৫.৩০ শতাংশ। আর দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক লোক মৎস্য আহরণে জড়িত। মৎস্য উৎপাদন নিয়ে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মন্ত্রী বলেছেন, মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশ মাছে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছে, যা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এদিকে মৎস্য রফতানিতে সুখবর নেই। মাছের উৎপাদন দিন দিন বাড়লেও রফতানি কমতে শুরু করেছে। মৎস্য অধিদফতরের বার্ষিক তথ্য অনুসারে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাছের রফতানির পরিমাণ মোট ৬৮ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন। যা গত অর্থবছরে ছিল ৭৫ হাজার ৩৩৮ মে.টন। রফতানি বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক গোলজার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এটা ঠিক আমাদের রফতানি কিছুটা কমেছে। তবে রফতানি কমলেও দেশের বাজারে চাহিদা বাড়ছে। চিংড়ির উৎপাদন যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। একই সঙ্গে রফতানি কমে যাওয়ার পর হ্যাচারির অনুমোদন দেয়া হয়। আগামীতেও স্পেসিফিক পেথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) আরও বৃদ্ধি করা হবে। এটি করলে আট/দশ রোগমুক্তভাবে পোনা পাওয়া যায় বলেও জানান এই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ মৎস্য ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক ৬০ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ১৮ মাছের পোনা উৎপাদন করেছে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া তারা কৈ মাছের রোগ প্রতিরোধে টিকা উদ্ভাবন করেছেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪৭৫ সামুদ্রিক প্রজাতি, ৩৬০ স্বাদু পানির প্রজাতি, ৩৬ চিংড়ি প্রজাতি, ১৬ ক্র্যাব (কাঁকড়া) প্রজাতি এবং ১২টি সেকলুপোড (শামুক, ঝিনুক, স্টার ফিশ ইত্যাদি) প্রজাতির মাছ রয়েছে। দেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গবেষণা নিয়ে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের সময়ে গবেষণা ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যেই মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৬০ লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে পাবদা, গুলশা, মহাশোল, চিতল, ফলি, গুতুম, খলিশা ইত্যাদি ১৮ বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষ হচ্ছে। এছাড়াও দেশের অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি নিয়েও বিএফআরআই কাজ করছে বলেও জানান।
×