ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল সিরাজগঞ্জ

আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলেও নেই বিএনপি জামায়াত

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ জুলাই ২০১৮

আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলেও নেই বিএনপি জামায়াত

সাজেদ রহমান/ আবুল হোসেন/ কবির হোসেন, যশোর থেকে ॥ আগামী নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলেও নেই বিএনপি জামায়াত জোট। মামলার ভয়ে বহু নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। কোন কোন সময় শহরের অলিতে-গলিতে মিছিল করলেও পুলিশের অনুমতির অভাবে তারা প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে পারে না। যশোর বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। যশোরের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথা, দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা সবাই তাকে ভোট দেব। তারপরও কথা থাকে। মনোনয়নের ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের আসন পাওয়া না পাওয়া। তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে জেলার নির্বাচনী রাজনীতি। মুখে বললেও জেলার ছয়টি আসনে বড় দুই দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব রয়েছে। তৃণমূলের মতামত নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হোক এমনই প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে যশোরে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়। গ্রামগঞ্জে তাদের সমর্থক ও ভোটার থাকলেও সেই ভোট এক জায়গায় করার মতো নেতা বর্তমানে বিএনপিতে কম রয়েছে। নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত, কিন্তু তাদের খোঁজ রাখেন না, উপজেলা কিংবা জেলা পর্যায়ের নেতারা। এতে কর্মীদের মনে অনেক কষ্ট ও দুঃখ রয়েছে। আবার অনেক আসনে বিএনপি চিন্তায় রয়েছে জামায়াতকে নিয়ে। কয়েকটি আসনে জামায়াত বিএনপিকে ছাড় দিতে নারাজ। যশোর-১ (শার্শা) ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যশোর-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই বাড়ছে অস্থিরতা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন নেতার মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন আছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তবে তার ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের মধ্যে আত্মকলহের সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হয়েছেন পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুল মাবুদ। অন্যদিকে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ হলেও সকলের নজর দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তির দিকে। সঙ্গে জামায়াত ভীতিও প্রকট। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন নেতা দলীয় ও সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে মাঠে সরব রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বৈরী আচরণের’ মাঝেও থেমে নেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। আর নীরবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। সীমান্ত উপজেলা শার্শার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত যশোর-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮১ জন। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের অবস্থান এই সংসদীয় আসনে। সরকার এই বন্দর থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। এসব কারণে সরকার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে নির্বাচনী আসনটির গুরুত্ব অনেক বেশি। একই কারণে সব দলের জন্য আসনটি দখলে রাখা মর্যাদার। স্বাধীনতা পরবর্তী ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাঁচবার, বিএনপি তিনবার এবং জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একবার করে বিজয়ী হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আফিল উদ্দিন। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটপ্রার্থী জামায়াত নেতা মওলানা আজিজুর রহমানকে ৫ হাজার ৮৫৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে পুরোপুরি আশাবাদী আফিলের অনুসারীরা বেড়াচ্ছেন ফুরফুরে মেজাজে। তার অনুসারীদের দাবি, দু মেয়াদে সাংসদ থাকাকালে আফিল উদ্দিন এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন বিগত কোন সময়ে তার সিকিভাগও হয়নি। তিনি সব নির্বাচনী অঙ্গীকারই বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষ করে তার অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা ছিল এলাকার মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার। দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদেও তিনি পাশে থাকেন সব সময়। ফলে এ আসনে তার বিকল্প নেতা নেই। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ এখন দ্বিধা-বিভক্ত। শেখ আফিল উদ্দিনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার আশীর্বাদে যুবলীগ নেতা আশরাফুল আলম লিটন বেনাপোল পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর এমপি এবং মেয়রের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরে। মেয়র লিটন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিকে পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করতে ইতোমধ্যে লবিং শুরু করেছেন। মাঠ পর্যায়ে তার সাংগঠনিক কর্মকা- এখনও দৃশ্যমান নয়। মূলত আফিল-লিটন দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে সামনে এগোনোর চিন্তা করছেন। নির্বাচনী এলাকায় তোরণ, ফেস্টুন লাগিয়ে মানুষের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য হাফ ডজন নেতা তৎপর হলেও সবার নজর দলের সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে ঘিরে। ওয়ান-ইলেভেনের পর বহিষ্কৃত এই নেতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও দলে ফেরানোর কোন ঘোষণা না এলেও দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব কর্মকা-েই তার সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ছে। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করার আশায় শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহসিন কবির, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কাজ করছেন। বিএনপির হাফ ডজন নেতা দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে মাঠে থাকলেও সবার চিন্তা প্রধান শরিক জামায়াতকে নিয়ে। কারণ ২০০৮ সালে জোটগত নির্বাচনে বিএনপি এ আসনটি ছেড়ে দেয় জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মওলানা আজিজুর রহমানকে। এবারও সেটা হলে ২০ জোটের প্রার্থী হবেন তিনি। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) ॥ এ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এ আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৪৩ জন। ২০০১ সালের নির্বাচন বাদে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত সবকটি জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেন। ২০০১ এ বিজয়ী হয়েছিলেন চার দলীয় জোটের মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন। ভোটারের আধিক্যের কারণে এবারও ‘নৌকা’ প্রতীকের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। মহাজোটের শরিক দলের নেতারা এ আসনে প্রার্থিতার আশায় মাঠে নামলেও তা নিয়ে চিন্তিত নয় তারা। তবে দলের অন্তর্কলহ ও প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে ‘চরম খেসারত’ দিতে হতে পারে। অপরদিকে বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ দুইটি। এর মধ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জ আসনটি পুনরুদ্ধার করা। অন্যদিকে ২০০১ সালে এখানে জামায়াতপ্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এবারও আসনটি দাবি করবে জামায়াত। যশোর-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় রয়েছেন। এলাকায় পোস্টারিং, মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছা মেসেজ ও তৃণমূল গণসংযোগ চালিয়ে বেশ পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তরুণ এই নেতা। মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশাবাদী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী আসনের দুটি উপজেলাতেই দলের একাধিক গ্রুপ মুখোমুখি। একপক্ষের নেতাকে মনোনয়ন দিলে অন্যপক্ষ বিরোধিতা করবে। কিন্তু আমার সঙ্গে কোন গ্রুপেরই বৈরী সম্পর্ক নেই। কারণ আমি গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করিনি। এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন দাবিদার সাবেক বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) ডাঃ নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দু মেয়াদের উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিব, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। এসব নেতাদের প্রত্যেকেই এলাকায় ব্যাপক পোস্টারিং করছেন ও সুধীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। এ দিকে বসে নেই বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীরাও। এ আসনে বিএনপির মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্তজা এলাহী টিপু ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নি। আসনটি থেকে মনোনয়নের চাইবেন বিএনপির আরও দুই প্রবীণ নেতা। এরা হলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাজী মুনিরুল হুদা ও জেলা কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মুহম্মদ ইসহক। দু জনই এ আসনে এর আগে দলীয় প্রতীকে ভোট করেছেন। এ দিকে, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীও এ আসনে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয়ভাবে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী হলেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় আছেন মুফতি ফিরোজ ও নুরুল কদর। এই দু নেতাই চৌগাছা উপজেলার বাসিন্দা। একই উপজেলার বাসিন্দা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-মোজাফ্ফর) কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাডভোকেট এনামুল হকও মহাজোটের মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। যশোর-৩ (সদর) ॥ যশোরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন যশোর-৩ (সদর)। এটিও আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে প্রমাণিত। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। সে কারণে আসনটি দখলে রাখা প্রধান দু দলের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত পাঁচ মেয়াদের চার বারই এ আসন থেকেছে আওয়ামী লীগের কাছে। ফলে আগামী নির্বাচনে ‘নৌকা’র বিজয়ের এই ধারা অক্ষুণœœ রাখাটা তাদের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু। তবে দলের অন্তর্কলহ ও প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে ‘চরম খেসারত’ দিতে হতে পারে। অন্যদিকে বিএনপিতে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি একপ্রকার চূড়ান্ত। বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। শরীর অসুস্থ থাকলেও তার পরিবার থেকে কেউ মনোনয়ন পাবেন এটা বিএনপির অনেকে মনে করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যশোর-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাজী নাবিল আহমেদ। কিন্তু এবার দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন চাকলাদার দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির লড়াইয়ে এবার তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূলের সঙ্গে তার যোগযোগ খুব ভাল। এ ছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে এসে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হওয়া সাবেক সাংসদ খালেদুর রহমান টিটোও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। তবে ২০১৪ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হবার পর থেকে তিনি দলীয় ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে রয়েছেন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। একপ্রকার নিভৃত জীবনযাপন করছেন তিনি। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলাম। এবারও তিনি নির্বাচন করবেন এমন বিশ্বাস স্থানীয় নেতাকর্মীদের। তবে অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে তিনি প্রার্থী হতে না চাইলে পরিবর্তে তাঁর পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করবেন। সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ আসনে ভোটারদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের। ভোটারের এই আধিক্য ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আগামী নির্বাচনে ‘নৌকা’র বিজয় নিয়ে আসবে বলে দাবি করছেন স্থানীয় নেতারা। তবে যশোর আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট। নেতাকর্মীরা ‘এমপি গ্রুপ’ ও ‘চাকলাদার গ্রুপ’ নামে দুটি ধারায় বিভক্ত। দলীয় সব কর্মসূচীও পালিত হয় পৃথকভাবে। দু গ্রুপের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও রয়েছে একাধিক। সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ এই কোন্দল মেটানো না গেলে এবং প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিফলন না ঘটলে ভোটের ফলাফলে ‘উল্টো কিছু’ ঘটে যেতে পারে। যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) ॥ বর্তমানে এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের রণজিৎ কুমার রায়। গত মেয়াদেও এমপি ছিলেন তিনি। আগামীতেও মনোনয়নের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী এই নেতা। তবে রণজিৎ রায় যতই আত্মবিশ্বাসী হন না কেন; এবার তার মনোনয়নপ্রাপ্তির লড়াইটা খুব সহজ হবে না বলে মনে করেন এখানকার রাজনীতি সচেতনরা। সাবেক সাংসদসহ দলের বেশ কয়েকজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তো আছেই, এবার মাহাজোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়েও এ আসনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবের দলীয় প্রার্থী হওয়াটা মোটামুটি চূড়ান্ত ধরে নেয়া গেলেও জয়ের পথটা ততটা মসৃণ হবে না। কারণ ‘পথের কাঁটা’ তরিকুলপন্থী হিসেবে পরিচিত বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করে টিএস আইয়ুব ফ্যাসাদে আছেন। যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত যশোর-৪ আসন। ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩০১ জন ভোটার অধ্যুষিত এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গত ১০ বারের সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৭ বার বিজয়ী হয়েছেন। আর জোটের শরিকরা বিজয়ী হয়েছেন মাত্র ৩ বার। আগে থেকেই এ আসনের দু উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দল চরমে। প্রতিটি উপজেলায় উভয় দলের বিবদমান গ্রুপগুলো সাংগঠনিক কর্মসূচী পালন করে আলাদাভাবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ দ্বন্দ্ব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তবে সব কোন্দল ছাপিয়ে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সব দলের সম্ভব্য প্রার্থীরাই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলার অন্য কয়েকটি আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান এমপিদের মতো রণজিৎ কুমার রায়ও বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই আসনে। ইমেজ সঙ্কট কাটেনি সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাবেরও। এ আসনে ‘নৌকা’র বড় দাবিদার এই দু জনই। পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের কারণে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র এনামুল হক বাবুলের বিষয়ে ভোটারদের আগ্রহ বেশ। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাঘারপাড়ার নাজমুল ইসলাম কাজলও নিজ এলাকায় বিশেষ প্রভাব তৈরি করেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এসএম আলমগীর হাসান রাজিব, বাঘারপাড়ার রায়পুর ইউনিয়নের তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমজাদ হোসেনও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বিএনপির অভয়নগর উপজেলা সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকী এবং বাঘারপাড়ার বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। তবে এই চারজনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। সর্বশেষ যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল সেটাতেও দলীয় প্রার্থী ছিলেন আইয়ুব। ওই নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাতে পারছেন না মামলার কারনে। অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা ঝুলছে। পাশাপাশি অন্তর্দ্বন্দ্ব আর সাংগঠনিক দুর্বলতাও রয়েছে দলটিতে। ২০০৯ সালের পর এখন সন্মেলন করতে পারেনি দলটি। অভয়নগরে সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজীর একটি গ্রুপ ও সাবেক উপজেলা সভাপতি নূরল হক মোল্যার একটি গ্রুপ রয়েছে। দলীয় কোন কর্মসূচী তারা পৃথক পৃথকভাবে পালন করে থাকে। একই অবস্থা বাঘারপাড়াতেও। সেখানে দলীয় কার্যালয় দখল নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে একাধিকবার। এ দিকে এবার আওয়ামী লীগের কাছে এ আসনটি চাইবে মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। গত নির্বাচনে খুলনা বিভাগের মধ্যে নড়াইল ও সাতক্ষীরার দুটি আসনে ‘নৌকা’ নিয়ে বিজয়ী হন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা। এবার দলটি যশোর-৪ আসনকে টার্গেট করেও তৎপরতা চালাচ্ছেন। যদি আওয়ামী লীগ তাদেরকে ছাড় দেয় সে ক্ষেত্রে এ আসনে প্রার্থী হবেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ। যশোর-৫ (মনিরামপুর) ॥ আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হওয়া মনিরামপুরে এবার নিজ দলেই অভ্যন্তরীণ দলাদলি চরমে। এ উপজেলায় দলীয় কর্মসূচীও চার গ্রুপ পালন করে পৃথক পৃথকভাবে। সম্প্রতি কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবার পর কোন্দল কিছুটা প্রশমিত হলেও নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি এখনও দৃশ্যমান। এ অবস্থায় যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী এক ডজন নেতার সামনে কোন্দল মোকাবেলা করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ না হলেও তাদের কাছে মাথাব্যথার বড় কারণ জোট শরিক জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম। জোটগত নির্বাচনে যশোর-১ ও যশোর-২ এর মতো যশোর-৫ আসনটিও বিএনপি বরাবর শরিকদের জন্য ছেড়ে দেয়। এবার শরিকদের জন্য ছাড় দিলে এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মওলানা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। এর আগে তিনি এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য হন। এ ছাড়া জামায়াতও আসনটির জোরাল দাবিদার। ইতোমধ্যে জামায়াতের শুরা সদস্য এ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির দু জন নেতাও নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে রয়েছেন প্রচারে। অবশ্য তাদের নিয়ে ভীতি নেই মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের। বরং এ দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা ‘ভাগ্যের ছিঁকা’ নিজের অনুকূলে টানতে জোরেসোরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠপর্যায়ে। যোগাযোগ করছেন দলের হাইকমান্ডের সঙ্গেও। মামলা মাথায় নিয়েও বসে নেই বিএনপিসহ তাদের জোটশরিকরা। সমানতালে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারাও। তবে ভীতসন্ত্রস্ত বিএনপি-জামায়াত নেতারা তৎপরতা চালাচ্ছেন গোপনে। মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত যশোর-৫ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ জন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এ আসনটিকে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বলে ধরে নেয়া হলেও ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০১ এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হন। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে থাকায় এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজয়ের মূল কারণ বলে মনে করেন সবাই। একই কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতানকে হারিয়ে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিদ্রোহী প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হন বর্তমান এমপি। কিন্তু সম্প্রতি তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন এ আসনে টানা পাঁচবার দলীয় টিকেটে প্রার্থী হয়ে তিনবার নির্বাচিত এমপি খান টিপু সুলতান। ফলে এবার নিজেকেই ‘নৌকার’ প্রধান দাবিদার বলে মনে করছেন বর্তমান সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য। নির্বাচন সামনে রেখে তিনি এলাকায় গণসংযোগও করছেন। তবে বর্তমান সাংসদ স্বপনের মনোনয়ন প্রাপ্তির লড়াইয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন তার সহোদর এ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য গত দুইবার দলের মনোনয়ন না চাইলেও আগামী নির্বাচনের শক্ত দাবিদার হবেন। আওয়ামী লীগের শেষ কাউন্সিলে তিনি কেন্দ্রীয় সভাপতি ম-লীর সদস্য মনোনীত হওয়ায় তাকে ঘিরে এই নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আব্দুল মজিদ এবং কামরুল হাসান বারী সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে পোস্টার, ফেস্টুন বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। যাচ্ছেন নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে। মনোনয়নের বিষয়ে তারাও আশাবাদী। এ দিকে তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা তাঁর স্ত্রী প্রফেসর ডাঃ জেসমিন আরা বেগমকে প্রার্থী করতে ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে সভা সমাবেশসহ গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। টিপু ভক্তদের ধারণা টিপু সুলতানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তাঁর স্ত্রীর পক্ষেই দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান, মনিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলু, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব) মোস্তফা বনি, মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ আকবর এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক। তারা এ লক্ষ্যে তৎপরতাও চালাচ্ছেন। অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন ৩৮টি মামলার আসামি হবার পরও দলের মধ্যে প্রায় একক নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। শহীদ ইকবাল এবার নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশা করছেন। এ ছাড়াও থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা ইতোপূর্বে বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দেন। কিন্তু ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনের সময় তিনি পুনরায় বিএনপিতে ফিরে এসে দলীয় সমর্থনে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে পরাজিত হন। তিনিও এবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জোট থেকে প্রার্থী হতে। এ দল থেকে মনোনয়ন পাবার আশায় সাবেক ছাত্রদল নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি, যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুও এলাকায় গণসংযোগ করছেন। আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দাবিদার দু জন। এরা হলেন পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী ও উপজেলা সভাপতি এম এ হালিম। যশোর-৬ (কেশবপুর) ॥ এ আসনে তৎপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীও। ভোটারদের মাঝে জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান না থাকায় তাদের নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কিন্তু আসন ভাগাভাগি ইস্যুতে জামায়াতকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীরা। তবে আসন ভাগাভাগির হিসেব-নিকেশের চেয়ে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় শিবিরেই সবচেয়ে বড় বাধা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। দিন যত গড়াচ্ছে দুই দলের সম্ভব্য প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ততই বাড়ছে। কেশবপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনের ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৬৩ জন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন জামায়াতের প্রার্থী মওলানা সাখাওয়াত হোসেন। এরপর বাকি চারবারই আসনটি থেকেছে আওয়ামী লীগের কাছে। সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ আসনে ভোটারদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের হলেও ভোটের ব্যবধান খুব বেশি নয়। ৯১ এ জামায়াত থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়া মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন প্রথমে বিএনপি ও পরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে দলটির প্রেসিডিয়াম মেম্বারের পদ পেলে এ আসনে জাপায় সাংগঠনিকভাবে নতুন করে শক্তি সঞ্চার হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধ মামলায় তিনি আটক হলে ফের দুর্বল হয়ে যায় তাদের কার্যক্রম। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক এবারও ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে চান। এরই মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্বাচন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তবে তাঁর এ প্রত্যাশা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এএইচএম আমির হোসেন। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যেমন লবিং করছেন তেমনি নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। অবশ্য সভা-সমাবেশে ঘোষণা বা প্রার্থী হবার ইচ্ছা ব্যক্ত না করলেও মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দোয়া চাচ্ছেন । উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক সাংসদ নির্বাচিত হবার পর থেকে কেশবপুর আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ বিরোধ নতুন মাত্রা পায়। সেখানে দলের নেতাকর্মীরা মন্ত্রী ও মন্ত্রীবিরোধী শিবিরে বিভক্ত। মন্ত্রীবিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি এস এম রুহুল আমিনও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। দলীয় মনোয়ন নিয়ে প্রার্থী হবার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় সামাজিক নানা আয়োজনে। মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য লবিং চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জীবন বীমার শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ রফিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ এবাদত সিদ্দিকী বিপুলসহ আরও কয়েকজন আগামী নির্বাচনে ‘নৌকার মাঝি’ হওয়ার দৌড়ে আছেন। শুভেচ্ছা পোস্টার ও ডিজিটাল ব্যানার টাঙ্গিয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন তারা। তবে ভোটারদের মাঝে সাড়া না ফেললেও প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় ঝড় তুলেছেন বেশিরভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করা সাবেক চিত্রনায়িকা শাবানার স্বামী চ্চলচিত্র প্রযোজক এস এম ওয়াহিদ সাদিক। অবশ্য নায়িকা শাবানা নিজেও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জনও রয়েছে। এ দিকে স্থানীয় রাজনীতিতে সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে থাকা বিএনপিও নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে। ‘ধানের শীষে’র মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ প্রচারে বেশ সরব। ঢাকায় বসবাস করলেও নির্বাচনী এলাকায় আসেন প্রায়শ। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও মজিদপুর ইউপির কয়েক মেয়াদের চেয়ারম্যান আবু বকর। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে বাহ্যিক জোয়ার ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিরোধও বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ উপজেলায় বিএনপির রাজনীতি প্রকাশ্যে দু ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে ‘আবু-সামাদ গ্রুপ’ হিসেবে পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক থানা সভাপতি আবু বকর আবু ও পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস। ‘আজাদ গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ। দু পক্ষ বসেন পৃথক দুটি দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় সব কর্মসূচীও পালিত হয় আলাদাভাবে। বড় দুই দলে কোন্দলের সুযোগকে ব্যবহার করে এ আসনে জোটগত মনোনয়ন লাভের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলা জাপার সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ রানা ও জামায়াত নেতা অধ্যাপক মোক্তার আলী। তবে ভোটারদের মধ্যে শক্ত ভিত না থাকায় জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ভাবছেন না আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বরং নিজেদের দ্বন্দ্ব নিয়েই ভীত তারা। অন্যদিকে দলের ভেতরকার দ্বন্দ্বের পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গে আসনের ভাগবাটোয়াটারা বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীরা। কারণ ভোটের হিসেবে এ আসনে জামায়াতের অবস্থান একেবারে নড়বড়ে নয়। এ আসনে ৯১ সালে জামায়াতের এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক অধ্যাপক মোক্তার আলী। সব মিলিয়ে বড় দুই দলের মনোনয়ন ঘিরে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের সমর্থকদের বিরোধের কারণে দিন দিন স্থানীয় রাজনীতেও বিভক্তি বাড়ছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
×