ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার্যনির্বাহী সংসদে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

জনগণের সাড়া না পেয়ে ‘ব্লেমগেম’ শুরু করেছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ জুলাই ২০১৮

জনগণের সাড়া না পেয়ে ‘ব্লেমগেম’ শুরু করেছে বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে তত নানা খেলা শুরু হবে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি এবং করে যাব। আমরা চাই অবশ্যই দেশের মানুষ ভাল থাকবে। আর যখনই বাঙালী জাতি মর্যাদা পায় তখনই বিএনপির মন খারাপ হয়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এতেই তাদের অন্তর্জ্বালা শুরু হয়ে গেছে। কারণ যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে তাদের ঘরসংসার। তাদের নিয়ে তাদের দল, তাদের নিয়েই ক্ষমতা। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের দেশের উন্নয়ন ভাল লাগবে না। সব কিছুতেই তারা খারাপ দেখবে। আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি। এই উন্নয়নের ছোঁয়া সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে। সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, নাটক করাই বিএনপির চরিত্র এবং নিজেরা অপরাধ করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপিয়ে নাটক করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দলটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার চলাকালে বিএনপির মিছিলে ককটেল হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটের মাঠে জনগণের কাছে সাড়া না পেয়ে ‘ব্লেম গেম’ শুরু করেছে বিএনপি। সবখানে তারা একটা নাটক করে আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। এটাই তাদের চরিত্র। মামলার তারিখ এলেই খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি তো (খালেদা জিয়া) জেলখানায় বহাল তবিয়তে আছেন। আয়েশ করে পায়েস খান। কেবল আদালতে মামলার তারিখ এলেই দেখি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি আদালতের রায়ে জেলে রয়েছেন। আমরা তো তাকে জেলে পাঠাইনি। কাজেই আমাদের কাছে মুক্তির আন্দোলন করে তো লাভ নেই। আমরা ইচ্ছা করলেও তো ছাড়তে পারব না, যতক্ষণ আদালত অর্ডার না দেবে। তার এত বাঘা বাঘা আইনজীবী, তারা তো কেউ প্রমাণ করতে পারেননি যে খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেননি। আর জেলখানায় খালেদা জিয়া এসি রুম ও মেড সার্ভেন্টসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। সেও তো জেলে রেখেছিল, আমাদের সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান জামালউদ্দীন সাহেবকে নিয়ে দুইটা কম্বল দিয়ে ফেলে রেখেছিল। রওশন এরশাদ বা অন্যদের কথা না হয় নাই বললাম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী তো (খালেদা জিয়া) আগাগোড়াই অসুস্থ। তার হাঁটু অপারেশন করানো হয়েছে। দুইবার অপারেশন করা হয়েছে, রিপ্লেস করা হয়েছে। এই সমস্যাগুলো তো তার আছেই। কিন্তু ওই অবস্থাতেও তো তিনি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন। থামেন তো নাই। পুড়িয়ে মারা, অত্যাচার করা, আমাদের ওপর অত্যাচার করা। তাদের বোমায় তো গরু-মুরগিও রেহাই পায়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী জানেন যে কোর্টে গেলেই ধরা খাবেন, এজন্য মামলার তারিখ এলেই অসুস্থ। নাইকো দুর্নীতি মামলা, এফবিআই বসে আছে স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য। কোর্টের তারিখ চলে যাওয়ার পর উনি ভাল থাকেন। খোঁজখবর তো আমরা রাখি। তাকে মেইড সার্ভেন্ট দেয়া হয়েছে। এয়ারকন্ডিশন, স্পেশাল খাট, স্পেশাল গদি কোন কিছুই তো কম দেয়া হয়নি। এ রকম আয়েশ করে আর কেউ পায়েস খেতে পারেননি, যেটা উনি খাচ্ছেন। উনি বেশ আরাম-আয়েশ করে থাকেন। সমানে লোকজন দেখা করেন। যেই কোর্টের তারিখ আসে তখনই অসুস্থ হন। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের গ্রেফতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চলছে। এর মধ্যে হঠাৎ দেখা গেল রাজশাহীতে তাদের (বিএনপি) নির্বাচনী মিছিলে বোমা হামলা। তাদের মিছিলে তিনটি ককটেল ফুটল। তারা আমাদের ওপর দোষ দিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা নির্দেশ দিলাম কারা এর সঙ্গে জড়িত খুঁজে বের করতে। বললাম এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক বা যে দলের হোক তাকে ধরতে হবে। কারণ আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সবাই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাবে। তিনি বলেন, তদন্ত করে পরে দেখা গেল তাদের (বিএনপি নেতা) নিজেদের ভাষায় বেরিয়ে এলো- তারা নিজেরা এটা করেছে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার জন্য। তারা যখন নির্বাচনে জনগণের কাছে সাড়া পাচ্ছে না তখন এই ব্লেমগেম শুরু করল এবং হাতেনাতে ধরা পড়ল। নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার এটা নাকি আওয়ামী লীগ করেছে। পরে দেখা গেল নিজেরা বোমা মেরে নিজেরাই খেলা খেলল। আসলে নাটক করে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। মিথ্যাচারে বিএনপির সঙ্গে কেউ পারবে না, এটা তাদের চরিত্র। নির্বাচনে সাড়া না পেয়ে আওয়ামী লীগের ওপর ব্লেইম গেম শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবখানে বিএনপি একটা নাটক করে আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। এটা তাদের চরিত্র। সিলেটে যে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আগুন দেয়া, বোমা মারা, গ্রেনেড হামলা করা, আমাদের বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান বেঁচে গেছে, তার নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন লাগিয়েছে। এই কামরানকে মারতে দুই দুইবার তার ওপর হামলা করেছে। সিলেটে কিবরিয়া (সাবেক অর্থমন্ত্রী) সাহেবকে হত্যা করেছে, এভাবে বাংলাদেশে তারা আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ঠা-া মাথায় মানুষ খুন করতে পারে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারতে পারে। বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখা যায় তারাই হত্যাকা- চালায়, তারাই প্রচার করে, দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। এই ধরনের নাটক করায় তারা যথেষ্ট পারদর্শী। আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শুধু নয়, এমনকি বিএনপি আমার ছেলেকে পর্যন্ত হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে সেই আমেরিকায়। চুরি করে দুর্নীতি করে এত টাকা কামিয়েছে যে সেখানে পর্যন্ত এফবিআইএর অফিসার পর্যন্ত তারা কিনে ফেলেছে। সেখান থেকে ষড়যন্ত্র করেছে জয়কে তুলে নিয়ে মেরে ফেলার। এইরকম একের পর এক ঘটনা তারা ঘটাচ্ছেই। তিনি বলেন, যত রকম অপকর্ম আছে তারা করে দেশটাকে পিছিয়ে রেখেছিল, আমরা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের ভাল লাগে না, খারাপ লাগে। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী সম্মান পাচ্ছে তখন তাদের অন্তর্জ¡ালা শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করতে হবে। এই বৈঠকে আমরা ইশতেহার প্রস্তুতের জন্য একটি কমিটি করে দিতে পারি। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে কী চিন্তা করি, ইশতেহারে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার কতটা বাস্তবায়ন করেছি তার হিসাবও নিতে হবে। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আমরা প্রতিশ্রুতির থেকে বেশি কাজ করতে পেরেছি। আর বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সে বিষয়ে কী প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে সেই আলোচনাও করব।
×