ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনসমুদ্রে জেগেছে জোয়ার

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৪ জুলাই ২০১৮

জনসমুদ্রে জেগেছে জোয়ার

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি প্রকৃতই রূপান্তরিত হয়েছিল জনসমুদ্রে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসভাটিকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মীর বর্ণিল সমাবেশ, নির্বাচনী মহড়া ও শোডাউন প্রত্যক্ষ করা গেছে। পল্টনে শুক্রবার আয়োজিত বিএনপির সমাবেশটিও ছিল নির্বাচনী আমেজে পরিপূর্ণ। এসবই আগামী রাজনীতিতে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ দ্বিদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যা হোক মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি সর্বোপরি ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট অর্জনসহ সরকারের বিভিন্ন সাফল্যকে উপলক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীকে এই গণসংবর্ধনা দেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য প্রত্যুত্তরে বিনয়ের সঙ্গে এই সংবর্ধনা উৎসর্গ করেন তার প্রিয় দেশবাসীকে, যাদের ভাগ্যোন্নয়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। সাহসী ও সুদৃঢ় কণ্ঠে গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সত্যিই দিনবদল শুরু হয়েছে। সবদিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এর জন্য তিনি আগামীতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান রোহিঙ্গা সমস্যা ও তার সমাধানে সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রধান এবং ইউএনএইচসিআরের প্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা। তারা প্রধানত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপবৃদ্ধিসহ আর্থিক সাহায্য ও অনুদান বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তা বোধকরি ছাপিয়ে গেছে সবাইকে। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য নিরসন ও সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আবির্ভূত হয়েছে ‘বিশ্ব নেতা’ হিসেবে। তিনি এও বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি অন্যান্য দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। সত্য বটে, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মডেল। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। চলতি বছর অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। পোশাক রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ প্রবাসী আয়ও বেড়েছে সন্তোষজনকহারে। ব্যাংক সুদের হার এক ডিজিটে নেমে আসায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও বাড়বে নিঃসন্দেহে। এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মিলেছে স্বীকৃতি। নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে আশাব্যঞ্জক গতিতে। জ্বালানি ও বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিভ্রমণ করছে ভূপৃষ্ঠের কক্ষপথ। দেশের মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারের সুফল ভোগ করছে অনেকাংশে। শিক্ষার হারসহ মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তবে এসবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করতে হবে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে। সর্বস্তরের মানুষের জন্য নাগরিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সর্বোপরি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রকে করেছে টেকসই এবং উন্নয়নকে করেছে নিশ্চিত। এসবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে গত দশ বছরের ঐকান্তিক ও অব্যাহত প্রচেষ্টায়। আর এখানেই নিহিত রয়েছে সরকারের সাফল্য ও সার্থকতা।
×